ব্যাংকে চাকরি করার জন্য চারটা ফার্স্ট ক্লাস কেন লাগবে!

প্রকাশের সময় : 2022-10-13 15:54:38 | প্রকাশক : Administration
ব্যাংকে চাকরি করার জন্য চারটা ফার্স্ট ক্লাস কেন লাগবে!

আমিনুল ইসলাম: আত্মহত্যা নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে এখন। সেদিন পত্রিকায় পড়লাম এক গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। এর নানা কারণ আছে। এর মাঝে পড়াশোনার চাপ, রেজাল্ট খারাপ হওয়া ইত্যাদিও রয়েছে। এই তো দিন কয়েক আগে হলিক্রস কলেজের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে অংকে রেজাল্ট খারাপ হবার কারণে। এরপর দেখলাম দেশের নানা বুদ্ধিজীবীরা এই নিয়ে কলামও লিখেছেন। কিন্তু একটা বিষয় বোধকরি আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি। দেশে আমরা সব কিছু কেমন যেন ক্লোজ করে রেখেছি। আপনি এসএসসিতে খারাপ রেজাল্ট করেছেন। এর মানে বলে দেওয়া হচ্ছে- তোমার জীবনটাই শেষ। একই ব্যাপার এইচএসসির বেলায়ও প্রযোজ্য। আমি বরং একটা উদাহরণ দিই।

দিন চারেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আমাকে লিখেছে, ‘স্যার, অনার্সে ফার্স্ট হয়েও এমফিলে ভর্তি হতে পারছি না শুধু এসএসসির রেজাল্ট ভালো না হওয়ার কারণে’। আমার সত্যিই জানা নেই- এটা কেমন নিয়ম। কেউ এসএসসির রেজাল্ট খারাপ করেছে (মানুষ তো অসুস্থতা কিংবা অন্য আরও অনেক কারণেও খারাপ রেজাল্ট করতে পারে। আমি তো এমন একজনকে চিনি, যে কিনা তার বাবা যেদিন মারা গিয়েছে, সেদিন পরীক্ষা দিয়েছে) তার মানে তো এই না- সে ভবিষ্যতের পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে না। ভবিষ্যতের পরীক্ষায় যদি ভালো করে, তাহলে কেন সে গুলো বিবেচনা না করে এসএসসির রেজাল্টই বিবেচনায় আনতে হবে। এর মানে কি দাঁড়ায় জানেন? এর মানে প্রতিষ্ঠান গুলো আমাদের বলে দিচ্ছে- তোমার এসএসসি কিংবা এইচএসসির রেজাল্ট খারাপ মানে তোমার জীবন শেষ।

গত ডিসেম্বরে দেশে গিয়েছিলাম। পত্রিকা খুলে দেখি এক ব্যাংকে সার্কুলার দিয়েছে চাকরির। একদম ছোট লেভেলের চাকরি। সেখানেও দেখি লেখা- চারটা ফার্স্ট ক্লাস থাকতে হবে। অর্থাৎ এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস থাকতে হবে। তাহলে যেই ছেলেটা কিংবা যেই মেয়েটা কোনো কারণে এই পরীক্ষাগুলোর একটাতে খারাপ করে ফেলেছে, কিন্তু পরের লেভেলে চেষ্টা করে ভালো রেজাল্ট করেছে তারা কই যাবে? কিংবা তারা পড়াশোনা করার উৎসাহইবা কেন পাবে? তাছাড়া ব্যাংকে চাকরি করার জন্য চারটা ফার্স্ট ক্লাস কেন লাগবে? আজব কাণ্ড। যে দেশে ইতিহাস, ভূগোল কিংবা সমাজ বিজ্ঞান পড়েও ব্যাংকে চাকরি করা যায়। যে দেশে মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বিসিএস আনসার কিংবা ফরেন ক্যাডার হওয়া যায়। সে দেশেই আবার চারটা ফার্স্ট ক্লাস না হলে নানা জায়গায় আবেদন করা যায় না। এই যে ছেলে-মেয়ে গুলো পড়াশুনার চাপে কিংবা রেজাল্ট খারাপ হবার কারণে আত্মহত্যা করেছে। এর দায় তো এই ছেলে-মেয়েগুলোর নয়। এর দায় এই সমাজের। কারণ সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বলে দিচ্ছে, তোমার রেজাল্ট একবার খারাপ হওয়া মানে তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অথচ বিদেশে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের শেখাই- জীবনের যেকোনো পর্যায়ে তুমি নিজেকে উন্নত করতে পারো।

শিখতে পারো। জানতে পারবে। তুমি শেষ পর্যায়ে এসে যে উন্নতি করেছ সেটাই তুমি। তোমাকে সেভাবেই যাচাই করা হবে। এই জন্য আমাদের এখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোন বয়সও দেখা হয় না। যেকোনো বয়সের ছাত্র-ছাত্রী পড়তে পারে। ব্যাচেলর, মাস্টার্স লেভেলে আমার এমন অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে, যাদের বয়স আমার চাইতেও বেশি। তো তারা কেন এসেছে এই বয়সে? কারণ তাদের মনে হয়েছে তারা শিখতে চায় এবং এই শিক্ষাটা তারা কাজেও লাগাতে পারবে। কেউ তাদের বলে দেয়নি, অতীতে তোমার রেজাল্ট খারাপ ছিল। তাই তোমাকে আর সুযোগ দেওয়া হবে না। আর আমরা একটা এসএসসি লেভেলের ছাত্র-ছাত্রীদের বলে দিচ্ছে- তোমার রেজাল্ট খারাপ। তোমাকে দিয়ে হবে না। তো, সমাজই তো বলছে, তোমার আর বেঁচে থেকে কাজ নেই। তুমি বরং গিয়ে আত্মহত্যা করো! আমি তো শুধু পড়াশোনার কথা লিখলাম। আমি হলফ করে বলতে পারি, অন্যান্য প্রায় সকল ক্ষেত্রেই অবস্থা ঠিক এমনই। এই যেমন চাকরি করতে গেলে আপনি পাবলিক থেকে পড়ে আসলে একরকমভাবে বিচার করা হবে। প্রাইভেট থেকে পড়লে আরেক রকম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়লে অন্য রকম। - ফেসবুক থেকে

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com