বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হলেন শান্তা
প্রকাশের সময় : 2022-10-13 16:11:50 | প্রকাশক : Administration
প্রিয়া দাশ শান্তার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায়। সুন্দর ও বর্ণিল ছিল সেসব দিন তার। দিন শুরু হতো ভোরবেলায় স্যারের কাছে পড়তে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর সারাদিন স্কুল, বিকেলে খেলতে যাওয়া, সন্ধ্যায় মায়ের কাছে পড়তে বসা এভাবেই কেটেছে সেসব দিন। তার বাবা-মা পড়াশোনা নিয়ে ভয় বা চাপ অনুভব করতে দিতেন না।
আনন্দ নিয়ে যেন পড়াশোনা করেন; সেটি সব সময় নিশ্চিত করেছেন তারা। ছোটবেলা থেকেই গান ও নৃত্য শিখতেন। তবে গানের চেয়েও নৃত্যকলায় তার ঝোঁক বেশি ছিল। তাই ছোটবেলার দিনগুলোয় নাচের ক্লাস, নাচের অনুশীলন বিশেষ স্থান দখল করে আছে। পাশাপাশি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন উৎসবে পারফর্ম করতেন তিনি। এ ছাড়া বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে প্রচুর বই পড়েছেন তিনি, যা তার শৈশবের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি।
শান্তার বাবা অরুণ কান্তি দাশ এবং মা সুপ্তা দাশ আন্না। শান্তা ২০০৭ সালে দোহাজারী জামিরজুরী আহমদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৯ সালে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ পদে কর্মরত। দেশের অর্থনীতির নীতি নির্ধারণীতে ভূমিকা রাখার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের অসংখ্য চাকরিপ্রত্যাশীর জন্য অবশ্যই স্বপ্নের ব্যাপার। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় ভীষণ আনন্দিত সে। ১৮৮ জনের মধ্যে একজন হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেন তিনি।
পরিবার সব সময় তিন ভাই-বোনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। তাই সেই অর্থে কখনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি। মাস্টার্স করার পর তার বিয়ে হয়; তখন পড়াশোনার গতি কিছুটা কমে আসে। তবে সেটি কাটিয়ে উঠেন স্বামীর সহযোগিতায়। পরিবারের পাশাপাশি স্বামীর সহযোগিতা ও উৎসাহে পরে পড়াশোনা চালিয়ে যান।
আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি নেন। চাকরির পড়াশোনা চালু রাখেন। যেহেতু সে ন্যাশনাল থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন, তাই অনেকেই তাকে আইবিএ এবং চাকরির প্রস্তুতি নিতে নিরুৎসাহিত করেছেন। অনেকে বলেছেন, ন্যাশনাল থেকে এসব জায়গায় সফল হওয়া সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে সেসব মন্তব্য তার কিছুটা মন খারাপ করে দিয়েছে সত্যি।
তবে শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতা, শুভকামনা ও উৎসাহ তাকে প্রেরণা দিয়েছে। অনার্স পড়ার সময় থেকেই আগ্রহের সূচনা ঘটে তার। খোঁজ-খবর নিতে থাকেন নিয়মিত। পরে এ আগ্রহ ও স্বপ্ন এতই প্রবল হয়েছিল যে, বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চাকরির সুযোগ এলেও তিনি তা গ্রহণ না করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন।
এ ক্ষেত্রে একটি ব্যাপার তিনি বলেন, চাকরির পরীক্ষায় কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। এখানে যে কোনো ছাত্রছাত্রী গোছানো প্রস্তুতি গ্রহণ করে ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়ে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অংশ হতে পেরে সে নিজেকে ধন্য মনে করছেন।
পাশাপাশি দায়িত্ববোধের একটি জায়গা তৈরি হয়েছে তার। নিষ্ঠার সাথে যেন অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেটাই তার এখনকার চাওয়া। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির নীতি-নির্ধারণীতে সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করাই ভবিষ্যতের লক্ষ্য তার। - সূত্র: অনলাইন