লক্ষণ ভাল নয়! অতএব ...

প্রকাশের সময় : 2022-10-26 15:46:53 | প্রকাশক : Administration
লক্ষণ ভাল নয়! অতএব ...

সরদার মোঃ শাহীন

 

সংবাদমাধ্যম জগতে বাংলাদেশে শুধুমাত্র গুড নিউজের সংবাদপত্র বলতে সাপ্তাহিক সিমেক ছাড়া আর কোন পত্রিকা আছে কি না আমার জানা নেই। প্রকাশনার চৌদ্দ বছর পরে এসেও আজ পর্যন্ত একই ধরণের দ্বিতীয় পত্রিকার খোঁজ পাইনি। চিরুনী অভিযান চালিয়ে খুঁজেছি বলবো না, তবে চোখ মেলে এদিক ওদিকের খবর কম নেইনি। কোথায়ও পাইনি। পেয়েছি কেবলই নেতিবাচক সংবাদের ছড়াছড়ি। অথচ আমাদের পুরো পত্রিকা জুড়ে কেবলই ইতিবাচক সংবাদ। ভাল সংবাদ। পত্রিকার ৩২টি নিউজ কন্টেন্টের মাঝে দু’একটি ছাড়া সবই ভাল সংবাদ, জীবন ঘনিষ্ট প্রয়োজনীয় সংবাদ।

তবে এসব কন্টেন্ট নিয়ে পত্রিকা চালানো চাট্টিখানি কথা নয়। বেজায় কঠিন কথা। শুধুমাত্র গুড নিউজের খবর ছাপিয়ে পত্রিকা চালানো বাংলাদেশে সত্যি কঠিন এক ব্যাপার। কঠিন পত্রিকার পাঠক ধরে রাখাও। পাঠক আসলে কী চায়, বোঝা মুশকিল। তবে চৌদ্দ বছরের অভিজ্ঞতায় এটা মনে হয়, পাঠক যত না ভাল সংবাদ শুনতে চায়, তার চেয়ে ঢের বেশি চায় খারাপ সংবাদ। কেমন করে যেন এদেশে খারাপ সংবাদই “সংবাদ” হয়ে গেছে। ব্যাপারটা এমন যে, যে সংবাদে খারাপ কিছু নেই, সন্দেহ নেই, অভিযোগ নেই, কলহ মারামারি নেই, ব্যর্থতা নেই; সেটা সংবাদই নয়।

অথচ এসবের ভীড়ে আমরা পাঠকের কাছে এসেছি মূলত ভাল সংবাদের ডালি নিয়ে। নেতিবাচক বা হতাশার নয়; ইতিবাচক সংবাদ, সুসংবাদ, সাফল্য এবং উন্নয়নের সংবাদ নিয়েই আমাদের প্রকাশনা “সাপ্তাহিক সিমেক” নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে গেল ১৪টি বছর ধরে। পত্রিকার প্রায় অধিকাংশ জায়গা জুড়েই থাকছে ভাল সব খবর। সাফল্য আর উন্নয়নের খবর। শতশত খারাপ খবরের ভীড়ে কেবল ভাল খবরে ভরে থাকে আমাদের সব পাতা। আমাদের পত্রিকার ধরণটাই যে এমন।

ধরণটা এমন বলেই সম্পাদকীয়তেও ভাল কাজের গুণগান করা হয়। কিংবা দেশের জন্যে যা কিছু ভাল তা নিয়ে যখন উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সমালোচনা হয় বা দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়, তার প্রতিবাদ করা হয়। পাশাপাশি দেশটি নিরাপদ অবস্থায় থাকার পরেও যখন জনমনে সুড়সুড়ি দিয়ে অনিরাপদের ভয় ধরানো হয় কিংবা ভালকেও উল্টো অসত্য কৌশলী যুক্তি দিয়ে খারাপ বানানোর চেষ্টা হয়, তখনও এর প্রতিবাদ করা হয়। বলা যায় হতাশা থেকে দূরে রাখতে জনগণকে সত্যি তথ্যটা ধরিয়ে দেয়া হয়। মুখোশ খোলার চেষ্টা করা হয় তথাকথিত আতেলদের। বুদ্ধিজীবী নামধারী একপেশে  আতেল।

আতেলগণ একাজে মোটেই সন্তুষ্ট নয় আমাদের উপর। তাদের প্রত্যাশা ভিন্ন। তারা চান, শুধু খারাপ আর খারাপ সংবাদে পাতা ভরে ফেলি। যেন তাদের মত করে লিখি। তাদের মত করে লিখতে পারিনা বলে সরকারের দালাল বলে প্রায়শই তকমা লেপে দেন আমাদের গায়ে। টিপ্পনী কাটেন। শুধু তারাই নন। সরকারের চেনাজানা লোকজনও টিপ্পনী কাটেন তাদের রাজনীতির খবরাখবর নিয়ে নিউজ করিনা বলে। আমাদের পত্রিকা খুবই অপরিচিত এবং অজনপ্রিয় হওয়া সত্যেও তাদের মুখে শুনতে হয়, কি মিয়া! ব্যালান্স করে চলেন নাকি!

বলতে পারেন, সবই খোঁচা; সবই টিপ্পনী। এবং টিপ্পনির মূল কথা হলো তাদের খবরাখবরও লিখতে হবে। তবে খারাপটা নয়, শুধু ভালটা। আসলে আমাদের উপর চলছে শাখের করাত। এদিকে গেলে সমস্যা আবার ওদিকে গেলেও সমস্যা। তাই শুরু থেকেই চলছিলাম নিরপেক্ষ দিকে। অথচ এতেও সমস্যা। কারো দিকে না গেলেও সমস্যা। কিন্তু আজ যা লিখবো বলে এতক্ষণ গাইগুই করলাম, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যা কিছুই বললাম, তা পুরোটা পড়ে সরকারের লোকজন কিভাবে নেবে কে জানে।

কিভাবে কমেন্ট দেবে তাও জানি না। তবে ভাল কিছু দেবে না সেটা নিশ্চিত। শুধু নিশ্চিত নয়, বরং পানির মত পরিষ্কারও। নিউজে দেখলাম ছাত্রীর গায়ে গরম চা ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ- সভাপতি আয়শা ইসলাম মীমের বিরুদ্ধে। তিনি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভার অনুসারী। নিজ হাতে তিনি গরম চা ঢেলে দিয়েছেন। ঢেলেছেন তারই হলের সহপাঠীর গায়ে। ভাবা যায়? ভাবা কি আসলেই যায় যে একজন ছাত্রনেত্রী কতবড় অমানুষিক, অসভ্য এবং বেপরোয়া হলে এমনটা করতে পারে!

বেপরোয়া কেবল সে একা নয়। আজকাল তারা মোটামুটি অনেকেই বেপরোয়া। প্রতিটি দিন পত্রিকার পাতায় আসে সারাবাংলার ছাত্রলীগারদের বেপরোয়া কুকীর্তির খবর। হেন গর্হিত কাজ নেই যা তারা করে না। ধর্ষণ, চাঁদাবাজী এখন পুরোনো। খুবই মামূলী। এলাকায় সারাদিন ওঁত পেতে থাকে ক্যাচালের খবরের আশায়। কোনমতে ক্লু একটা পেলেই পক্ষ নেয়। নিরপেক্ষ নয়, কোন এক বিশেষ পক্ষ। তারপর অপর পক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দলবেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর লেগে থাকে আঠার মত। কাঁঠালের আঠা। পকেট ভারী না করা পর্যন্ত সেই আঠা ছোটে না।

আর আওয়ামীলীগ! বিশেষ করে মফস্বলের আওয়ামীলীগের এখন লেজে গোবরে অবস্থা। যার মুখে যা আসছে অবলীলায় মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে তাই বলে দিচ্ছেন। বলা কথাগুলো তার নিজের কিংবা নিজদলের পক্ষে গেল কি না সেটা ভাবারও সময় নেই তাদের। সবচেয়ে জঘন্য কথা বলছেন ভোট নিয়ে। ক’দিন আগে বরগুনার মেয়রপ্রার্থী তার ভাইবউকে ভোট না দিলে ঠ্যাং ভাঙার হুমকি দিয়েছেন। দলের লোককেই হুমকি দিয়েছেন। সরাসরি হুমকি। দুঃখজনক হলো এসবে ওদের ভয়ও নেই, সংকোচও নেই।

নেই লজ্জাশরমও। ইদানীং দেখা যাচ্ছে গত নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন এমপিরাও কথা বলছেন। বেফাঁস কথা। চিচিং ফাঁক করার মত কথা। এতদিন যা বলতো বিরোধী দল এখন তা বলছে ওনারা নিজেরাই। বিরোধীদের আর কিছু বলতে হচ্ছে না। এরপরও মানুষজন চুপ করে থাকবে? আমজনতা বলেই তাদের সবকিছু মেনে নিতে হবে? হতে পারে তারা আমজনতা। কিন্তু ইভিএম নিয়ে এই আমজনতার বিশ্বাসের জায়গায় প্রচন্ড চির ধরিয়ে দিয়েছে এইসব আওয়ামী নেতাকর্মীরাই।

সিস্টেমটা ভাল হলেও এখন আমজনতার মনে সন্দেহ ঢুকেছে। সরকারী দলের লোকজনেরাই তো সন্দেহটা ঢুকালো। প্রচন্ড বেপরোয়া না হলে এমন কাজ ঘরের লোকেরা করতে পারে! কেবল বেপরোয়া নয়। বেয়াদবও। ধরণে পাতি নেতা। অথচ হাঁটাচলায় জাতীয় নেতার ভাব। ভাবসাবই আলাদা। ভাবখানা এমন যে, যা মনে চায় বলবো, যা মনে চায় করবো। এতে কার বাপের কি? তাই তো ক’দিন আগে উপরের নির্দেশনা ছাড়াই লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিএনপির উপর। দুর্বল বিএনপি; অথচ মাইর খুবই সবল। মাইর কাকে বলে? ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ডজনখানেক নেতাকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

অবশেষে অবস্থা বেগতিক দেখে এবং উপায়ন্তর না পেয়ে সরকারদলীয় দায়িত্বশীলগণ এসব কর্মকান্ড এবং বেফাঁস কথার প্রটেকশন দেবার চেষ্টা করেছেন বটে, তবে জনগণ সেটা মোটেই আমলে নেয়নি। বরং জনগণ যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। এবং জনমনে প্রশ্ন কেবল জোরালোই হয়েছে। ফলত শংকিত হয়েছে জনগণ। শংকিত হাটে মাঠে ঘাটের ফিসফিসানি শুনে। থামছে না ফিসফিসানি। মাঠেঘাঠের ফিসফিসানি তো থামছেই না, বরং বেড়েই চলেছে।

এমনি করে আওয়ামীলীগাররা কর্মে এবং কথাবার্তায় এলোপাথারী চলতে থাকলে মনে হয় না এই ফিসফিসানী আর থামবে। অন্তত লক্ষণ তা বলে না। বলে না, পত্রিকায় ছাপাবার মত ভাল সংবাদ সামনের দিনগুলোতে আর তেমন একটা পাবো। মনও আজকাল আর তেমন আশাবাদী হয়ে উঠতে পারছে না। উঠবে কিভাবে? পজেটিভ সংবাদের জন্যে পরিবেশ পরিস্থিতি পজেটিভ হতে হয়। আশপাশ দেখে তো মনে হয় না পরিস্থিতি পজেটিভ হবে। কিংবা লক্ষণ হবে ভাল। লক্ষণ ভাল হবার কোন লক্ষণই আর বিদ্যমান নেই। অতএব, সাধু সাবধান!! 

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com