সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দেশ; শ্রীলঙ্কা
প্রকাশের সময় : 2022-10-26 15:58:00 | প্রকাশক : Administration
জেসিউর রহমান শামীম: ভারত মহাসাগরের উষ্ণ জলে, ভারতের উপক‚লে, ফোঁটার মতো আকৃতির ছোট একটি দ্বীপ রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকেই তার সম্পর্কে অন্তত একবার শুনেছে, এবং প্রতিদিন এই দ্বীপ দেশের কোনো না কোনো উপহার উপভোগ করে সুস্বাদু কালো বা সবুজ চা। এইটা শ্রীলঙ্কা! শ্রীলঙ্কা একটি বৃহৎ দ্বীপ রাষ্ট্র। ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপক‚ল হতে ৩১ কিলোমিটার দূরের এ দেশটি সরু পোল্ক প্রণালী দ্বারা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত সমুদ্রসৈকত, ভ‚দৃশ্য তদুপরী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। শ্রীলঙ্কার অধিবাসীদের শ্রীলঙ্কান বলা হয়। প্রাচীন গ্রিক ভ‚গোলবিদরা শ্রীলঙ্কাকে ‘তপোবন’ ও আরবরা ‘সেরেনদ্বীপ’ নামে ডাকত। শ্রীলঙ্কায় মানুষদের বসবাসের সূচনা হয়েছিলো, খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে। এ সময় বর্তমান শ্রীলংকানদের পূর্ব-পুরুষগণ (সিংহলিরা) ভারত থেকে এ দ্বীপে চলে এসেছিল এবং বসবাস শুরু করেছিলো। এর প্রায় ৩০০ বছর পরে, বৌদ্ধধর্ম শ্রীলঙ্কায় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে দ্বীপের উত্তর অংশে সিংহলী জনবসতিগুলি খুব বেশি সংগঠিত হয়েছিল। ১৫০৫ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা এই দ্বীপে পৌঁছে এর নাম দেয় ‘শেইলাও’। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে সিলন নামে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে এটি সরকারিভাবে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রি শ্রীলঙ্কা নামে পরিচিত।
শ্রীলঙ্কা এমন একটি দেশ যেখানে রাজা ছিল না, রানী দেশ চালাতো। ১৬০০ শতাব্দীতে পর্তুগাল থেকে কলম্বাস এসেছিল। তখন শ্রীলঙ্কার রাজধানী ক্যান্ডি কে কলম্বোতে পরিবর্তীত করা হয়। কিন্তু ১৬৫৬ সালে হল্যান্ড এবং রাজ রাজারা এই দেশটিকে দখল করে নেয়। এরপর ১৪০ বছর পরে ব্রিটিশরা শ্রীলঙ্কায় এসে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। ভারত যখন স্বাধীনতা পায় শ্রীলঙ্কাও তখন মুক্তি পেয়ে যায় ইংরেজদের কাছ থেকে। আর এটা ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার ১ বছর পরে হয়। ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা নিজেদের স্বাধীনতা পাওয়ার চেষ্টা করে। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত শ্রীলংকার নাম সিলং নামেই পরিচিত ছিল। কিন্তু এরপর এর নাম শ্রীলংকা রাখা হয়। শ্রীলঙ্কা নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "শ্রী" ও "লংকা" থেকে। শ্রী শব্দের অর্থ পবিত্র এবং লংকা অর্থ দ্বীপ।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী হলো কলম্বো। এর প্রশাসনিক রাজধানীর নাম শ্রী জয়াবর্ধেনেপুরা কোট্টে। প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। সিংহলি স¤প্রদায় এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ। শ্রীলঙ্কায় বহু সংস্কৃতি, ভাষা এবং জাতিগোষ্ঠীর বাসস্থান। দেশটিতে মুরস, বার্গার্স, মালয়েশিয়ান, চীনা এবং আদিবাসীদেরও দেখা যায়।
পৃথিবীতে শ্রীলঙ্কা একমাত্র অমুসলিম দেশ যেখানে রেডিও এবং টেলিভিশনে পাঁচ ওয়াক্ত আযান দেয়া হয়। শ্রীলঙ্কার রেডিও স্টেশন পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো রেডিও স্টেশন। ১৯২৩ সালে ইউরোপের রেডিও স্টেশন শুরু হওয়ার ৩ বছর আগে শ্রীলঙ্কাতে শুরু হয়েছিল। শ্রীলঙ্কাতে ৪এ প্রথম চালু হয়।
শ্রীলংকার আয়তন প্রায় ৬৫ হাজার ৬১০ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এর অবস্থান ১২০ তম স্থানে। আর জনসংখ্যার দিক থেকে এর অবস্থান ৬৫ তম স্থানে। এর জনসংখ্যা ২ কোটি ৭০ লক্ষ ১৬ হাজার। এই দেশের মানুষের গায়ের রং শ্যামলা। এবং কন্ঠ অনেক মিষ্টি। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান এর কারণে আবহাওয়া বেশ চমৎকার। চারদিকে সমুদ্র থাকার কারণে এর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এখানে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। শ্রীলঙ্কাতে রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা। এখানে অনেক সুন্দর সমুদ্র সৈকত রয়েছে। এ দেশটিতে প্রচুর প্রাকৃতিক ঝরণা দেখতে পাওয়া যায়। শ্রীলঙ্কার সবথেকে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। কিন্তু শ্রীলঙ্কার জাতীয় খেলা ভলিবল।
শ্রীলঙ্কার কারেন্সির নাম রুপায়া। এই দেশের বেশিরভাগ মানুষি অটো করে যাতায়াত করে। শ্রীলঙ্কাতে এই অটোগুলিকে টিম টিম বলে। শ্রীলঙ্কার পতাকায় সোনালী রঙ রয়েছে যা এই দেশের ইতিহাসের প্রতীক। সিংহ শ্রীলঙ্কার জাতীয় পশু। তাই শ্রীলঙ্কার পতাকায় সিংহের ছবি থাকে।
শ্রীলঙ্কার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে সরকার যা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হলে শ্রীলঙ্কা এশিয়ার এমন একটি দেশ যে দেশে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মানুষ রয়েছে। এখানে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। শ্রীলঙ্কাতে ৯৯ শতাংশ মহিলারাই সাধারণত শিক্ষিত। এখানে মহিলাদের কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সে জন্য দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি উন্নত। মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশেরও বেশি সাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন। শ্রীলঙ্কায়, সরকারীভাবে স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। যা শ্রীলঙ্কায় স্বাস্থ্যের অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি মূলত পর্যটন খাত এবং শিল্প খাতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তবে কৃষি খাতও দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। শ্রীলঙ্কার প্রধান শিল্পগুলির মধ্যে রয়েছে রাবার প্রসেসিং, টেলিযোগাযোগ, টেক্সটাইল, সিমেন্ট, পেট্রোলিয়াম পরিশোধন এবং কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ। শ্রীলঙ্কার প্রধান কৃষি রফতানির মধ্যে রয়েছে চাল, আখ, চা, মশলা, শস্য, নারকেল, গরুর মাংস এবং মাছ। দারুচিনি উৎপাদনে শ্রীলঙ্কার অবস্থান তৃতীয়। ইন্দোনেশিয়া এবং চায়নার পরেই সবচেয়ে বেশি দারুচিনি উৎপাদন হয় এই শ্রীলঙ্কাতেই। আর এগুলি পুরো পৃথিবীতে রপ্তানি করা হয়। শ্রীলঙ্কাকে চায়ের রাজধানী বলা হয়। কারণ ইন্ডিয়া, চায়না এবং কেনিয়ার পরে শ্রীলঙ্কা সারা বিশ্বের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ চা রপ্তানি করে। ইংরেজ শাসনের সময় স্থাপিত আধুনিক সমুদ্রবন্দর এই দ্বীপ-দেশটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে।