রাজনীতিতে উত্তাপ!

প্রকাশের সময় : 2022-11-09 11:50:51 | প্রকাশক : Administration
রাজনীতিতে উত্তাপ!

দীপক চৌধুরী: বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছুটা উত্তাপ দেখা যাচ্ছে কিছুদিন ধরে। কেউ বলেন, সমাবেশে বহু লোক হয়েছে। লাখ লাখ লোক হয়েছে বলেন এক পক্ষ। আরেক পক্ষ বলেন, লাখের কাছাকাছি লোক হয়েছে। সত্যকে আড়াল করে তো লাভ নেই। অথচ সাধারণ মানুষ কিন্তু এদিকে মোটেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে চিন্তিত।

জনগণ ভালো করেই বুঝতে পারে রাতারাতি কিছুই ঠিক হবে না। পরিবর্তনও খুব কঠিন। আর  সরকার পরিবর্তন করা হলেই দেশ ‘সোনায় সোহাগা’ হবে এমনটাও  অসম্ভব। কারণ, সারা দুনিয়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। লিজ ট্রাস পদত্যাগ করেছেন। ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে দায়িত্ব পালনরত প্রধানমন্ত্রী। গত কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক বিতর্কে বিপর্যস্ত লিজ ট্রাস কদিন আগে ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে এক গভীর ও অর্থবহ ভাষণ দিয়ে পদত্যাগ নিশ্চিত করেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না পাওয়া পর্যন্ত অবশ্য লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। পদত্যাগের আগে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে দাঁড়িয়ে লিজ ট্রাস বলেন, আমি একটি বড় অর্থনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতার সময়ে দায়িত্বে এসেছিলাম। ব্রিটিশ পরিবার এবং  দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাত সংকটে পড়েছে। ইউক্রেনে- রুশ যুদ্ধ আমাদের পুরো মহাদেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে  ফেলেছে। লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর  ঘোষণা দিয়ে মাত্র ৪৫ দিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়লেন। অর্থনৈতিক নীতিতে তাড়াহুড়ো ও ভুল করার জন্য ক্ষমা চাওয়ার এক দিন পরই তাকে সরে যেতে হলো। আর্থিক বাজারই কার্যত প্রধানমন্ত্রী ট্রাসের পদত্যাগ অলঙ্ঘনীয় করে তুলেছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, তবে তাঁর দুর্বল  নেতৃত্ব ও অদূরদর্শিতার জন্য ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও যুক্তরাজ্যকে কড়া অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হচ্ছে।

এদেশের কিছু মানুষ দলবেঁধে শ্রীলঙ্কার কথা বলতেন। আমাদের দেশের পরবর্তী পরিণতি নাকি শ্রীলঙ্কার মতো হবে। শুধু বিএনপি-জামায়াতের নেতা নয়, অন্য কিছু ইসলামী ও সুবিধাবাদী দলের মুখে কয়েকদিন খৈ ফুটেছে। এটা তাদের মনের কথাও ছিল। সেই শ্রীলঙ্কার কথা এখন হারিয়েই গেছে। মাছ ও তরি-তরকারি বাজার করে ফিরছিলাম। পথিমধ্যে আমার মতোই বাজার করে ফেরা বয়স্ক একটি লোক আমাকেই লক্ষ্য করে বললেন, ‘শ্রীলঙ্কার পরিণতি, ব্যর্থ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী  লিজ ট্রাসের পদত্যাগ দেখে যারা লাফাচ্ছেন তারা খুশি হইয়েন না। বয়স তো কম হইল না। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বিপদে ফেলার খায়েশ পূরণ হবে না।’

সুতরাং একটি বিষয় পরিষ্কার যে, সকল ক্ষেত্রেই বুদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। দূরদর্শীতা দরকার। আর রাজনীতিতে তো বটেই। দেশ চালানোর জন্য যে দূরদর্শীতার প্রয়োজন তা আমরা প্রতিদিনই দেখছি। প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ দিন থেকেই দেশবাসীকে সতর্ক করে চলছেন। কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থাসহ নানারকম অস্থিরতা বাড়িয়েছে। আমরা বুঝি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার থেকে সরানোর যে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত তা আমাদের কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে।

কারণ, দেশের জনগণকে অনিশ্চিয়তার মুখে ফেলে দিতেই অশুভগোষ্ঠীর চক্রান্ত। তাদের কাছে জনগণ বড় নয়, দেশ বড় নয়, ক্ষমতা বড়। বাংলাদেশের পাঁচ দশকের রাজনীতির ইতিহাস ঘেঁটে মানুষ খুঁজে পেয়েছে গণতন্ত্রের সুবাতাস। নারীর ক্ষমতায়ন। ভরসার জায়গা। মানুষ দেখতে পায় শেখ হাসিনার জীবনযাত্রায় কোথাও বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার ছাপ নেই। সেই মমতাময়ী জননেত্রী থেকে আজ অন্যতম বিশ্বনেত্রী।

অসংখ্য গুণে গুণান্বিত বিশ্বমানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা। কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব। সারল্যে ভরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক উদার, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এখন শেখ হাসিনা। আমাদের বড়বড় সাফল্য আছে। চোখের সামনে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ। করোনার টিকাদানে দেশের অগ্রগতি অবিশ্বাস্য।

জঙ্গি উত্থান হচ্ছে বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু আমরা স্বাভাবিক করতে পেরেছি। আমাদের র‌্যাব- পুলিশ-সোয়াত-গোয়েন্দারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। কেউ বা দেশের কোনো মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয় এজন্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ব্যাখ্যা তুলে ধরছে সরকার। দেশের সরকার প্রধান হয়েও নাগরিক ইস্যুর বিষয়ে সজাগ তিনি। আমরা জানি, শুধু যুক্তরাজ্যে নয়, ইউরোপের বিভিন্ন উন্নত দেশেও জ্বালানি নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হচ্ছে।

রাজনীতির নামে নিষ্ঠুর খেলা শুরু করেছিল বিএনপি। বঙ্গবন্ধুর দেশে এ নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে তাঁর পরিবার। আর এদেশের মানুষ। ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট মানবতার ঘৃণ্য শত্রুখুনি-ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। 

রাজনীতি মানুষের জন্য, ক্ষমতার জন্য নয়। কিন্তু এদেশের মানুষ দীর্ঘদিন দেখে এসেছে যে, ক্ষমতার যাওয়ার জন্য কি রকম মিথ্যাচার, গুজব ছড়ানো আর অসত্য তথ্য প্রচার করা হয়েছে ও হচ্ছে। এখন যারা সুশাসন, গণতন্ত্র, সুবিচার নিয়ে হাহাকার করছেন, পত্রিকায় কলাম লিখছেন, টেলিভিশনের আলোচনা বা টকশোতে ঝড় তুলছেন তারা বাংলাদেশের অতীত সম্পর্কে একটি কথাও স্মরণ করতে চান না।

এদেশের রাজনীতির ঘৃণ্য ইতিহাস একবারও উল্লেখ করতে চান না। ১৫ অগাস্ট, ২১ অগাস্ট ও ৩ নভেম্বর ভুলেও উচ্চারিত হয় না তাদের মুখে। আমরা টকশো, পত্রিকায় মানবাধিকারের ফেরিওয়ালাদের মুখ থেকে ১৫ অগাস্ট, ২১ অগাস্ট, তিন নভেম্বরের কথা শুনি না। সেসব ভয়াবহতা শুনি না। ফ্রিডম পার্টি বানালেন স্বৈরাচারী এরশাদ। আর ষোলকলা পূর্ণ করলেন খালেদা জিয়া। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে খালেদা জিয়া সংসদে ঢুকিয়ে ছাড়লেন।

আরো কথা হচ্ছে ক্ষমতায় আসার আগে-পড়ে ১৯৭১-এর ঘাতকদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছিলেন খালেদা জিয়া। এটি এখনো বহাল রয়েছে। কারণ জামায়াত একটি সুসংগঠিত দল। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দল। ওই দলটি ছাড়া বিএনপি চলতে পারবে না। দেখা গেছে আসলেই পারেননি তিনি এবং তার দলও পারেনি। এদেশের মানুষ অর্থাৎ আমরা আম-জনতা মানবহৃদয়ের বহুবিধ সুঅনুভূতির কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দেখতে পাই।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com