সুন্দরী শ্রীভূমি: সিলেট

প্রকাশের সময় : 2022-11-23 14:57:09 | প্রকাশক : Administration
সুন্দরী শ্রীভূমি: সিলেট

জেসিউর রহমান শামীম: দুইটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ হিসেবে পরিচিত সিলেট জেলা। সবুজ পাহাড় আর টিলায় ঘেরা এ জেলা প্রকৃতির রূপে অনন্য। সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটকে সুন্দরী শ্রীভূমি আখ্যা দিয়েছিলেন। এই প্রাচীন জনপদ বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত। চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল জলাবন, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, তামাবিল, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই জনপদ।

সিলেট নামের উৎপত্তি নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। সবচেয়ে প্রচলিত ধারণাটি হলো, শিলা মানে পাথর। আর পাথরের প্রাচুর্যের কারণেই এ এলাকার নাম সিলেট। আবার কথিত আছে প্রাচীন গৌড়ের রাজা ‘গুহক’ তার কন্যা শীলাদেবীর নামে একটি হাট স্থাপন করেন। এ কারণে ‘শীলাহাট’ থেকে সিলট বা সিলেট নামের পরিচিতি।

সিলেট বিভাগের উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, পূর্বে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা।

পর্যটন কেন্দ্রে ভরপুর সিলেটের রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট । হিজল গাছের সারি ডুবে আছে পানিতে। ইঞ্জিন ছাড়া বৈঠা বাওয়া নৌকা দিয়ে এ বনে প্রবেশ করতে হয়। রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’নামে খ্যাত। রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। অনেকে রাতারগুলকে ‘বাংলাদেশের আমাজন’হিসাবে অভিহিত করেন।

বিছানাকান্দি মেঘালয়ের কোল ঘেঁষা সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি মূলত একটি পাথরের কোয়ারী। খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এসে বিছনাকান্দিতে মিলিত হয়েছে। সেই সাথে মেঘালয় পাহাড়ের খাঁজে থাকা সুউচ্চ ঝর্ণা বিছনাকান্দির প্রকৃতিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। বিছানাকান্দির মূল আকর্ষন হচ্ছে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি।

সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতি মায়ায় মোড়ানো ভোলাগঞ্জ দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারির অঞ্চল। মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা একদিকে ধলাই নদের পানির যোগানদাতা অন্যদিকে এই পানি প্রবাহই ভোলাগঞ্জের রূপের উৎস। ধলাই নদীর পানির সাথে ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পাথর নেমে আসে। পাথর উত্তোলনকে সহজ করতে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মাণ করা হয় ছাতক পর্যন্ত । 

৩৬০ আউলিয়ার সিলেট নগরী ‘পূণ্যভূমি’হিসাবে খ্যাত। সিলেটের মাটিতে যেসব পীর, দরবেশ শায়িত আছেন এদের মধ্যে হযরত শাহজালাল (রঃ) অন্যতম। হযরত শাহ জালাল (রঃ) সকল ধর্মের মানুষের কাছে সমাদৃত ছিলেন। প্রতি বছর তাঁর মাজার জিয়ারতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ঢল দেখা করা যায়।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার স্থানীয় নাম মায়াবী ঝর্ণা। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের সীমান্তে অবস্থিত মায়াবী ঝর্ণাতে যেতে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। বিএসএফের প্রহরায় বাংলাদেশীরা সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে যেতে পারে। এই ঝর্ণার রয়েছে মোট তিনটি ধাপ। ঝর্ণার তৃতীয় ধাপে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ, আর সুড়ঙ্গ পথের শেষ এখন পর্যন্ত অজানা।

সিলেট জেলার চৌকিদেখি উপজেলার ওসমানী বিমান বন্দরের উত্তর প্রান্তে টিলার উপর লাক্কাতুরা চা বাগান অবস্থিত। অসংখ্য চা গাছ ও উঁচু নিচু পাহাড়ে ঘেরা লাক্কাতুরা চা বাগান দেশের বৃহত্তম চা বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম। লাক্কাতুরা চা বাগানের কাছে আছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত মালনীছড়া চা বাগান ও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এক স্থানের নাম তামাবিল। বাংলাদেশের সিলেট এবং ভারতের শিলং মধ্যকার সীমান্ত সড়কের একটি চৌকি হল তামাবিল। তামাবিল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়, ঝর্ণা সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখা যায়।

সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত আলী আমজদের ঘড়ি ঊনবিংশ শতকের নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সিলেটের কুলাউড়ার জমিদার আলী আহমদ খান ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ক্বীন ব্রীজের পাশে এই ঐতিহাসিক ঘড়িঘর নির্মাণ করেন। আলী আহমদ খানের ছেলের নামানুসারে ঘড়িঘরটি আলী আমজদের ঘড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে। লোহার খুঁটির উপর ঢেউটিন দিয়ে তৈরী বিশালাকার গম্বুজাকৃতির আলী আমজদের ঘড়ি ঘরের উচ্চতা ২৬ ফুট।

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর। হাকালুকি হাওর প্রায় ২৩৮ টি বিল ও ১০ টি নদীর সমন্বয়ে গঠিত । এর আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। ভূ-তাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে। মাছের জন্য প্রসিদ্ধ হাকালুকি হাওরে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে।

ডিবির হাওর সিলেটের জৈন্তাপুরে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ইয়াম, ডিবি, হরফকাটা, কেন্দ্রী বিল নামে এখানে মোট চারটি বিল রয়েছে। বর্ষাকালের পর বিলগুলো শাপলার রাজ্যে পরিণত হয়। ডিবির হাওর তাই শাপলা বিল নামেও সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। শীতকালে এই হাওর জুড়ে অথিতি পাখিদের রাজত্ব শুরু হয়।

লালাখাল নদী ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে। অপরুপ সোন্দর্যময় এক স্থান হলো এই লালাখাল। লালাখালের বিভিন্ন অংশে নীল, সবুজ এবং স্বচ্ছ পানির দেখা মিলে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান এটি। সেইসঙ্গে রাতে সেখানকার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

মনিপুরী সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মনিপুরী রাজবাড়ি প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণ শৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টিসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাড়ির সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ির স্মৃতি সম্বল।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com