ভারত থেকে পাইপলাইনে আসবে ডিজেল

প্রকাশের সময় : 2022-12-07 17:30:19 | প্রকাশক : Administration
ভারত থেকে পাইপলাইনে আসবে ডিজেল

স্বপ্না চক্রবর্তী ও শ আ ম হায়দার: বিশ্ব বাজারে তেলের জন্য হাহাকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে চড়া দামে জ্বালানি তেল কিনতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। এমন অবস্থায় দেশের তেলের বাজারে কিছুটা হলেও সুসময় আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এর কারণ ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন।

এই পাইপ লাইন দিয়ে ভারত থেকে সরাসরি পরিশোধিত তেল (ডিজেল) আসবে দিনাজপুরের পাবর্তীপুর ডিপোতে। এতে পূরণ হবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষের তেলের চাহিদা। বিশেষ করে অন্যান্য আমদানিজাত তেল পাবর্তীপুর ডিপোতে পৌঁছাতে যেখানে প্রায় ১ মাস সময় লাগে, সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে ভারত থেকে এই ডিপোতে তেল আসতে।

সেখান থেকে উত্তরের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হবে এ তেল। এতে কমে যাবে পরিবহন ব্যয়। মোট ১৩১.৫ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে গেছে ১৩০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের। এখন চলছে নদীর ওপরের কাজ। যা এ মাসেই শেষ হয়ে যাবে। সব ঠিক থাকলে নতুন বছরের শুরুর দিকেই পাবর্তীপুর ডিপোতে এসে পৌঁছবে ভারতের তেল।

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই পাইপলাইনটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। পরে ২০২০ সালের মার্চে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ভারতের লুমানীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তবে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে।

পরের বছরগুলোতে তা ৪ থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বাড়বে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছরের জন্য ভারত থেকে ডিজেল কিনবে বাংলাদেশ। বর্তমানে লুমানীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় দুই হাজার ২০০ টন ডিজেল আমদানি করে বিপিসি। ২০১৭ সাল থেকে ট্রেনে করে আসছে এ তেল।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে, বর্তমানে জ্বালানি তেল আনার ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলে (১৫৯ লিটার) গড়ে ১০ ডলার প্রিমিয়াম (জাহাজভাড়াসহ অন্য খরচ) দিতে হয় বিপিসিকে। তবে ভারত থেকে আনার ক্ষেত্রে এটি আট ডলার হতে পারে। প্রতি ব্যারেলে দুই ডলার কমলে প্রতি এক লাখ টনে প্রায় ১৫ লাখ ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব। তাই ভারত থেকে আমদানি হলে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

এই পাইপলাইনের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১২৬ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার। এর জন্য পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ১৩৪ দশমিক ১২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ অংশে মোট ১৩০ কিলোমিটারের বেশি পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। পাঁচটি এসভি (সেকশনলাইজিং ভালভ স্টেশন) কাজও শেষ হয়েছে। প্রতিটি এসভি স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

এছাড়া প্রকল্প এলাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের পথে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছরগুলোতে এটি চার থেকে পাঁচ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছর বাংলাদেশ ডিজেল নিতে পারবে।

পার্বতীপুর রেলহেড ডিপোর বর্তমান ধারণ ক্ষমতা ১৫ হাজার টন থেকে ৪৩ হাজার ৮০০ টনে উন্নীত করা হচ্ছে। পূর্ব ভারতের লুমানীগড় থেকে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলিামিটার পাইপ লাইন রয়েছে। শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা।

এরমধ্যে ভারত সরকার দিচ্ছে ৩০৩ কোটি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন দিচ্ছে ২১৭ কোটি টাকা। করোনাসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ১৩১.৫ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৩০ কিলোমিটারের কাজ শেষ।

এখন নদী এলাকায় কাজ চলছে। তাও চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাবে। জানুয়ারিতে মেকানিক্যাল কমিশন এবং অপারেশনাল কমিশনিং শেষ হলে তা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। নতুন বছরের শুরুতেই এই পাইপলাইন দিয়ে তেল আসা শুরু হবে। তবে এত অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনো অনেক কাজই বাকি। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কাজ আটটি অয়েল ট্যাংক (তেল মজুতের আধার) স্থাপন।

অয়েল ট্যাংকের আরসিসি ভিত্তির কাজ শেষ হলেও এর প্রধান উপকরণ ১ হাজার ৩শ’ টন স্টিলের পাত এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করা সম্ভব হয়নি। ফলে, ট্যাংগুলোর নির্মাণের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া এখনও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি অনেক অবকাঠামোর। যার মধ্যে রয়েছে পাম্প হাউস, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও ২৪ টি ট্রান্সফরমার, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউস, সিকিউরিটি পোস্ট, সিকিউরিটি গেট, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম, ওয়াচ টাওয়ার, ৫ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ৬ টি ফুয়েল ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার দুটি ওয়াটার ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপণ ফোম রাখার জন্য ২ হাজার ৫শ’ লিটার ধারণ ক্ষমতার দুটি ব্লাডার ট্যাংক ও অটোমোশন সিস্টেম।

এই পাইপলাইন দিয়ে ভারতের তেল আসলে উত্তরবঙ্গে তেল পাঠানোর খরচ আর থাকবে না। এতে অর্থ যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি ওই অঞ্চলের মানুষজন অল্প সময়েই তেল পাবে। তবে এই তেল জাতীয় খাতের চাহিদা পূরণে এখনই তেমন প্রভাব না ফেললেও মোট চাহিদায় বড় একটা প্রভাব ফেলবে। ভারতের রিফাইনারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজার দরেই ডিজেল আনা হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে যেটি আনা হবে, সেটিও আন্তর্জাতিক বাজার দরেই আনা হবে। পাইপালাইনের মাধ্যমে ডিজেল আনতে পারলে আমাদের পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হবে। - সূত্র: অনলাইন

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com