সামাজিক শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে ধর্মকর্ম

প্রকাশের সময় : 2023-01-03 09:47:44 | প্রকাশক : Administration
সামাজিক শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে ধর্মকর্ম

ড. হাসনান আহমেদ: এদেশের মানুষ কম-বেশি ধর্মভীরু। সেই আদিকাল থেকে এ দেশের সমাজব্যবস্থায় ধর্মীয় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। মানুষের চিন্তা-চেতনা, কর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সমাজব্যবস্থার প্রতিটা কর্ম, শিক্ষা ও সিস্টেম ডেভেলপমেন্টে ধর্মীয় উপাদানের সার্থক প্রয়োগ কর্ম, প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থার সফলতা অনেকটাই নির্ভরশীল।

এদেশের প্রত্যেক আস্তিক মানুষ ইহকাল ও পরকাল নিয়ে ভাবেন-কেউ বেশি, কেউ কম। জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে চান। আস্তিক ধর্ম-উদাসী মানুষকে নিয়ে বেশি অসুবিধা হয় না; যা বোঝানো যায়, তা-ই বোঝেন। ধর্মজ্ঞান অনেকের কম। অনেক ধর্মভীরু ব্যক্তির কাছেও সৃষ্টি, সমাজব্যবস্থা ও জীবনের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার নয়।

আবার বর্তমান সমাজে ভালো কাজ ও ভালো কথা বলার লোকেরও অভাব দেখা দিয়েছে। সমাজ ও দেশ পরিচালকরা তাদের চিন্তা ও কর্মব্যবস্থা দিয়ে সমাজকে বুনো আবহের দিকে সজোরে টানছেন। মাথায় আঘাত করে টাকের যত্ন নেওয়ার বিজ্ঞাপনে পারদর্শিতা দেখাচ্ছেন। মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্যের ভান্ডারে আজ টান পড়েছে। অনেক ধর্মগুরু জীবনের উদ্দেশ্যকে পরকালের জন্য নামাজ, রোজা ও হজ্বের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে অনেকটাই আবদ্ধ করে ফেলেছেন।

এসবের প্রভাব আমাদের দুনিয়াদারি, সমাজব্যবস্থা ও সমাজকমের্র ওপর পড়েছে। তাদের অনেকেই ইহকালের সামগ্রিক শিক্ষা ও কর্মজীবন অলীক-অসার ভেবে শুধু পরকালের কল্যাণকে সুনিশ্চিত করতে চান এবং সমাজে তা প্রচার করেন। ইহকালের কল্যাণ কীসে, ইহকালের কল্যাণ ছাড়া যে পরকালের কল্যাণ সম্ভব নয়, তা অনেকের বুঝে আসে না। পরকালের কল্যাণ কী প্রক্রিয়ায় অর্জিত হয়, তা-ও ভাবতে নারাজ। তারা নামাজ, রোজা, হজে¦র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বেহেশতে যাওয়ার সোজাসাপটা পথ খুঁজে বের করার বুদ্ধি করে ফেলেছেন। সেই মতো মানুষকে কর্মহীন শিক্ষা ও কর্মহীন জীবনের দিকে ধর্মীয় আবেগ দিয়ে টানেন।

কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা না করে, না বুঝে, নির্দেশনা মোতাবেক কর্ম না করে পরকাল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কুরআনের ইহকালীন কর্মজীবনের সামাজিক বিশ্লেষণ না করে শুধু বেহেশতমুখী ব্যাখ্যা দেন। হক্কুল্লাকে বোঝেন, হক্কুল ইবাদকে বোঝেন না। পরিবার, সমাজ ও মানবসেবা হলো হক্কুল ইবাদের অন্যতম দিক-এ নিয়ে অনেকে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিতেও অপারগ। জীবনকর্মকে উপেক্ষা করে শুধু বিশ্বাসের ওপর ভর করে পরকালের কল্যাণ কামনা করেন। আংশিক, অগভীর শিক্ষা ও ধর্মদর্শন, সৃষ্টিদর্শন বোঝার অক্ষমতা, কুরআন বিশ্লেষণের অক্ষমতা-এর জন্য দায়ী।

বলা হয়েছে, ‘তবে কি তারা কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না, না তাদের অন্তরে তালা পড়ে গিয়েছে?’ (মুহাম্মাদ, ৪৭:২৪)। কুরআন বোঝার মতো উচ্চশিক্ষা নেই, সামাজিক বিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান নেই, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আত্মজিজ্ঞাসা নেই, অনুভূতি নেই; মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানা নেই, চিন্তা-গবেষণার সক্ষমতাও নেই। কর্মজীবন ও সমাজজীবনে ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োগ নেই। ফলে আমাদের সুষ্ঠু সমাজ গঠন, সামাজিক সুশিক্ষা ও সমাজ উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। কুরআনের অসংখ্য বর্ণনা যে খোদা নির্দেশিত পথে ইহকালীন কাজকর্ম ও চিন্তা-চেতনা, তা আমরা এড়িয়ে যাই। কুরআনের সামান্য অংশজুড়ে পরকাল, আর অধিকাংশ বিষয়ই যে ইহকালীন সৃষ্টি-জগৎ, নির্দেশিত কাজ, পথ ও পাথেয়। সেটা আমরা বেমালুম ভুলে বসে আছি।

পবিত্র কুরআন মূলত দুটো কাল বা সময়কে নিয়ে সবিস্তার আলোচনা ও ব্যাখ্যা করে-ইহকাল ও পরকাল। ইহকালের পুরোটাই কর্মজগৎ ও চিন্তাজগৎ। ইহকালের সৃষ্টিজগৎ, জীবন ও জীবনকর্ম পুরোটাই বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আছে বলেই মানুষ ইহলোকে টিকে আছে। মানুষের জন্ম প্রক্রিয়াটা বিজ্ঞান। মানবদেহ, দেহের কার্যপ্রণালি, কোষ, রাসায়নিক পদার্থের সমন্বয় ইত্যাদি সবই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। খাবার গ্রহণের মাধ্যমে বেঁচে থাকা বিজ্ঞান। প্রাণী ও উদ্ভিদের পারস্পরিক বেঁচে-থাকা ও নির্ভরশীলতার সবটাই স্রষ্টার বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।

পরকালের পুরোটাই ইহকালীন কর্ম ও চিন্তাধারার ফল পাওয়ার জন্য পরকালের কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস (মেটাফিজিক্স)। অথচ আমাদের অনেক ধর্মগুরু বিজ্ঞান পড়েন না, বুঝতে চানও না। বিজ্ঞানের অবদান ছাড়া জীবন পরিচালনা অসম্ভব, এটা ভেবে সেই মতো কাজ করেন না। সৃষ্টি দর্শন   ও জীবনদর্শন নিয়ে ভাবেন না। দুনিয়াদারি জীবন-পেশা-কর্মব্যবস্থা বুঝতে চান না। না-জেনে না-বুঝেই ইসলাম ধর্ম প্রচারে ব্রতী হন, সৃষ্টি ও কর্মপ্রণালীর সোজা-সাপটা উপরিগত মুখস্থ ব্যাখ্যা দেন। দুনিয়ার জীবনযাপন ও কর্ম বাদ দিয়ে শুধু বিশ্বাসের ওপর ভর করে, কখনো তসবিহ পড়ে পরোকালে ভালো প্রতিদান আশা করেন। সাধারণ মানুষকে সেভাবে চালান। ইসলামকে শুধু পরকালের জন্য ইবাদত-বন্দেগির আনুষ্ঠানিক গণ্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলেন। এটা বাস্তবসম্মত নয়। এখানেই সমাজের দুর্গতি। - চলবে... অধ্যাপক, ইউআইইউ; প্রাবন্ধিক ও গবেষক, সৌজন্যে যুগান্তর

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com