মাইনাসের পথে জিএম কাদের!!!

প্রকাশের সময় : 2023-01-03 09:59:40 | প্রকাশক : Administration
মাইনাসের পথে জিএম কাদের!!!

দিন যতই যাচ্ছে জাতীয় পার্টির রাজনীতি ততই যেন জটিল হয়ে উঠছে। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ৫ মাস ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে সময়ই তাকে মাইনাস করার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয় দলে, যাতে জি এম কাদেরের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিলো বলেই মনে করা হয়। একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিলো, রওশন এরশাদ প্রকৃত অর্থেই কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন। কিন্তু সুকৌশলেই সে অবস্থা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি, বিভিন্ন সমীকরণ থেকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন জি এম কাদেরের অবস্থাই টালমাটাল, যার নেপথ্যে রওশনই কলকাঠি নাড়ছেন বলে জানা গেছে।

রওশন দেশে ফেরার আগেই তার পক্ষের এক নেতা এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা মামলা করেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে। সেই মামলার রায়ে নিম্ন আদালত কাদেরের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও চেম্বার আদালত আবারো নিষেধাজ্ঞা বহাল করেন। এই পরিস্থিতিতে রওশন এরশাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেন জিএম কাদের।

রওশন এরশাদ দেশে ফিরে হোটেল ওয়েস্টিনে উঠেছেন। সেখানেই তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন জি এম কাদের। আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ না পেলেও দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু সেই বৈঠকে জি এম কাদেরের অনুকূলে কিছু ঘটেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে। এরপর জিএম কাদের তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেন। 

এরই ধারাবাহিকতায় আবার বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আলোচনার প্রথম ইস্যু ছিলো জাতীয় পার্টিতে চলমান সংকট নিরসন। এই লক্ষ্যে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার। দ্বিতীয়ত জিএম কাদেরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত একজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং সেই পদে নিজের নামই প্রস্তাব করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেগম রওশন এরশাদ ব্যারিস্টার আনিসুল হকের কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দেননি। বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, এই মূহূর্তে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার মতো কেউ নেই, আপনাকেও করা যাচ্ছে না। কারণ কেউ আপনাকে মেনে নিতে চাইবে না। এতে দলের আরও ক্ষতি হবে।

জানা গেছে, নির্ধারিত সময় ১ জানুয়ারিতেই দলের সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন রওশন এরশাদ। এই কাউন্সিলেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হবেন বিরোধীদলীয় সংসদ নেতা রওশন এরশাদ এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান হতে পারেন রাহ্গীর আল মাহি এরশাদ সাদ। জিএম কাদেরকে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে রাজনীতি করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। যদি এই প্রস্তাব মেনে নেন, তাহলে জি এম কাদের জাতীয় পার্টিতে রাজনীতি করতে পারবেন। অন্যথায় আসন্ন কাউন্সিলে তিনি দলের প্রাথমিক সদস্যপদও হারাতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। মূলত আইনি জটিলতায় আটকে আছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের। দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের অক্টোবর থেকে দলীয় কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না।

৪ অক্টোবর জিয়াউল হক জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলায় দল থেকে জিয়াউল হকের বহিষ্কারাদেশকে বেআইনি ঘোষণা এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০-এর উপধারা ১(১) অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানানো হয়। দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, জাতীয় পার্টিকে চাপে রাখার জন্য এমন সিদ্ধান্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন তা প্রমাণিত হয়েছে।

জানা যায়, আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকায় দলীয় কার্যক্রমেও অংশ নেন না জি এম কাদের। বনানী কার্যালয়ে মাঝেমধ্যে গেলেও দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ৬ নভেম্বর সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে ২০তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য দিয়েছেন। আর ৭ নভেম্বর জি এম কাদেরের উত্তরার বাসভবনে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করেন। দীর্ঘ পথ চলায় এই দল থেকে অনেকে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা দল গঠন করেন। কিন্তু মূল দল হিসেবে দেশের রাজনীতিতে ক্রমাগত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আসন ছিল ৩২টি, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৭টি, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩৪টি। বর্তমানে জাতীয় পার্টির আসন ২৬টি।

দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টি বেশ সরব ও সক্রিয়। বিগত দিনের মতো আগামী সংসদ নির্বাচনেও মূল ফ্যাক্টর হবে জাপা। রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন, যারা ভোট এবং ক্ষমতার অঙ্ক কষেন, তারা এটা ভালো করেই জানেন জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে সরকার গঠন করা প্রায় অসম্ভব। টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী  লীগ। প্রথমবার তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোট গঠন করেই সরকারে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়াদে দলটি ক্ষমতাসীন হওয়ার পেছনেও মূল অনুঘটকের কাজটি করে জাতীয় পার্টি। - সূত্র: অনলাইন

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com