কেন মানুষ আসে, কেন মানুষ যায়!
প্রকাশের সময় : 2023-01-04 16:53:29 | প্রকাশক : Administration
কামরুল আহসান: আপনাকে আমাকে মিলিয়ে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ৮০০ কোটি হলো। এটা মানুষের সভ্যতার জন্য বিরাট একটা অর্জন। এটা জন্মহার বাড়ার কারণে হয়নি। জন্মহার বরং আগের চেয়ে কমছে। এটা হয়েছে শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু কমার কারণে এবং গড় আয়ু বাড়ার কারণে। আয়ুর চেয়ে অমূল্যধন আর কী আছে, সেটা যদি গড়ে পাঁচ-দশ বছর বেড়ে যায় এটা মানুষের সভ্যতার জন্য বিরাট ব্যাপার বটেই।
একসময় পৃথিবীতে যখন মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র দুশ কোটি, মাত্র একশ বছর আগেই তা ছিল, তখনো পৃথিবীতে অনেক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ গেছে, যুদ্ধ-বিগ্রহ গেছে। আজ আটশ কোটি মানুষের মুখে বসুধা অন্ন জুটায়। ২০৮০ সালের মধ্যে এ-জনসংখ্যা হবে ১০ বিলিয়ন। তখনো মানুষ খাবে। কিছু মানুষ চিরকালই অভুক্ত থেকেছে, এটা মাটির দোষে নয়, মানুষের দোষেই। পৃথিবী যত বিশাল আর উর্বর ১০ বিলিয়ন নয়, ২০ বিলিয়ন মানুষের মুখে গ্রাস তুলে দেওয়া ব্যপার না। অথচ দেখুন আমাদের দুর্ভিক্ষের ভয় দেখানো হচ্ছে।
বিশাল এ- পৃথিবীর বেশির ভাগ সম্পদই ভোগ করে অল্প কিছু মানুষ। বেশির ভাগ মানুষেরই নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বেশির ভাগ মানুষই এ- পৃথিবীতে কতিপায় ক্ষমতাবান মানুষের পোষাপশু, উৎপাদনের যন্ত্র। উৎপাদনের যন্ত্রের পরিবর্তন ঘটছে। মানবযন্ত্রের পরিবর্তে আসছে যন্ত্রমানব। ফলে মানবযন্ত্র বেকারদশায় পড়বে। বেকারদশায় কি মানুষ না খেয়ে মরবে নাকি বিপ্লব করবে কে জানে। আগামীর পৃথিবীতে, বড়জোর আর বিশ-পঁচিশ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবী কোন দিকে যাবে, কী হবে অনেকেই তা কল্পনা করতে পারছেন না। বিজ্ঞানের উন্নতি হবে, প্রযুক্তির উন্নতি হবে, কিন্ত মানুষের সুকুমার বৃত্তির উন্নতি হবে কিনা জানি না। মানবযন্ত্র যন্ত্রমানবকে রূপ নিয়েছে, যন্ত্রমানব হয়তো যন্ত্রদানবে রূপ নিবে। সে যাই হোক, মানুষের জয় হোক। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে স্বাগতম। দুঃখ লাগছে এই, একশ বছরের মধ্যে বর্তমান পৃথিবীর কমপক্ষে ৭৫০ কোটি মানুষ মারা যাবে।
কেন মানুষ আসে, কেন মানুষ যায়। কত বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ এরই মধ্যে পৃথিবীর মাটিতে মিশে গেছে, মিশে যাবে আরও কত বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ। হায়, কী তার মানে, কে তাহা জানে। তারপরও ভোগ-দখলের কমতি নাই, ছোটলোকি-ইতরামির শেষ নাই। মানুষের মঙ্গল হোক। শুভবুদ্ধির উদয় হোক। মানুষের মনুষ্যত্বের যদি উন্নতি না-হয় এত মানুষ এসেই-বা লাভ কী। এই সিদ্ধান্ত অবশ্য আমি নিতে পারি না। মানুষ হিসেবে আমার তেমন মনুষ্যত্ববোধ নাই, তারপরও আমি বলতে পারি না আমার জীবন ফেলনা। যত দুঃখ-কষ্ট- বেদনা-ইতরপনা থাকুক, তারপরও জীবন মানেই একটা লাভ। অন্তত বুঝতে শিখলে, বোধবুদ্ধি থাকলে জীবনের এক পরম আনন্দ উপভোগ্য হয়, আর তা হলো, জীবনটা কী এটুকুই উপলব্ধি করতে পারা। আর তার সঙ্গে হায় হায়ও জুটে, হায়, এ-জীবন লইয়া কী করিব টাইপ।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ আসলে একেকটা ইউনিক, অভিনব ব্যাপার। প্রতিটি গরু বা ছাগল বা প্রতিটি মশা-মাছি যেমন একইরকম, প্রতিটি মানুষ নিশ্চয়ই একইরকম না, এটা মানুষ হওয়ার মজা। হয়তো আমি মানুষ বলেই মানুষের পক্ষে যাই। মানুষের মতো পৃথিবীর পশু-পাখি-বৃক্ষরাজিরও গণনা করা হয়েছে। বর্তমান পৃথিবীতে গাছের সংখ্যা তিন হাজার বিলিয়নের বেশি। গরুর সংখ্যা, আশ্চর্য হলেও সত্য, মানুষের চেয়ে অনেক কম, মাত্র দেড়শ কোটি। - লেখক ও সাংবাদিক