সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে প্রবাসীদের অবদান অনন্য
প্রকাশের সময় : 2023-01-18 12:53:03 | প্রকাশক : Administration
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ: এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমানো যারা উন্নতজীবনের জন্য কর্মসংস্থানের খোঁজ করেন এবং অন্য দেশে চাকরি করেন তারা অভিবাসী। ভারত বা নেপালে কয়েক মাস চাকরি করতে যাওয়াকেও অভিবাসী বলা হয়। ভিনদেশে স্থায়ী বসবাসকারীকে প্রবাসী বলে। বিশ্বের অনেক দেশেই অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নত বৃহৎ অভিবাসী প্রেরণকারী ও রেমিটেন্স আহরণকারি দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও করোনার পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু শ্রমিক অপ্রত্যাশিত কারণে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে যা বাংলাদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মধ্যপ্রাচ্য শ্রমবাজার ক্রমান্নয়ে সংকীর্ণ হয়ে আসছে। বাংলাদেশের শ্রমিকেরা মধ্যপ্রাচ্যে ভালো নেই। কয়েক বছর আগে সৌদিআরবে শ্রমবাজার শতকরা ত্রিশভাগ বাংলাদেশী শ্রমিকদের দখলে ছিলো। বর্তমানে সে সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশে ফিরে আসা অভিবাসীদের গড় বয়স প্রায় ত্রিশ এবং প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন। ফেরত আসা অভিবাসী একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি। অভিবাসী শ্রমিকেরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন ঋণ ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে।
এই সমস্ত ফিরে আসা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে ও ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ব্যবসা আত্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর মধ্যে মৎস্য চাষ, পল্ট্রিফার্ম ও ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাংলাদেশকে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারকে উদ্ধার করার জন্য সবচেয়ে প্রাধান্য দিতে হবে। উল্লেখিত দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সর্ম্পক জোরদার করে বিদ্যমান সমস্যা সমূহ চিহ্নিত করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসী ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের যার সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ বাংলাদেশে ফেরত আসায় অর্থনৈতিক বিরাট আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে জনশক্তি মন্ত্রণালয় দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ করে ফেরত আসা অভিবাসীদের দেশের মধ্যে কর্মসংস্থান ও বিদেশে প্রেরণ করে চাকরির ব্যবস্থা করা উচিত কেননা বেকারত্ব পারিবারিক সামাজিক অশান্তির সৃষ্টি করে। বাংলাদেশকে বর্হিবিশ্বে প্রচারনার মাধ্যমে জনমত তৈরি করে বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।
ল্যাটিন আমেরিকার একটি পথ ধরে প্রতি বছর এশিয়া, আফ্রিকার হাজার হাজার অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যে পথটি অনেকের অজানা ছিলো। ৪০ জনের মতো একটি সাংবাদিক গ্রুপ এই ধরনের অভিবাসীদের যাত্রাপথ নিরুপণ করেন। সুষ্ঠ ও নিরাপদ অভিবাসনের জন্য বেশ কিছু শর্তপূরণ করতে হয়, বৈধ পাসপোর্ট, কর্মসংস্থানের ভিসা, বিমানের টিকেট, নিয়োগপত্র কন্ট্রাকফর্ম স্মার্টকার্ড, দেশের জন্য নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়, চাকরির বিবরণ বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্টের নাম ঠিকানা, ও দেশের আইনকানুন মেনে চলতে হবে।
অভিবাসনের বিষয় যে দুইটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। [১] দারিদ্র ও সুযোগের অভাবসহ যেসকল করণে মানুষ অভিবাসী হতে আগ্রহী হয় সেইসব প্রতিকূলতা চিহ্নিত করে এর প্রতিকার গ্রহণ করা। [২] সকল পর্যায়ে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র, অভিবাসনের সুফল বয়ে আনার কৌশল নির্ধারণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। অভিবাসনের মত অনেক পুরানো বিষয়টি জাতিসংঘে এখনো পরিপূর্ণ অধিভূক্ত হয়নি। তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সাল এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসনকে নিরাপদ ও সকলের জন্য কল্যাণকর করণে বিশ্ববাসি ঐক্যমতে পৌঁছেছে।
শ্রম অভিবাসনের মতে অভিবাসীদের স্বার্থে চাকরিদাতা পরিবর্তনের সুযোগ (যা কাফালা ব্যবস্থায় অনুপস্থিত), চাকরিদাতা কর্তৃক অভিবাসীদের যেকোনো প্রকার দলিল জব্দকরণকে নিষিদ্ধকরণ এবং চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতার মধ্যকার লিখিত চুক্তিনামার সঠিক বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
স্বচ্ছ মানদন্ড নির্ধারণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসীদের সমষ্টিগত বিতাড়নের উদ্যোগ বন্ধ করে প্রতিটি কেস আলাদা আলাদা মূল্যায়নের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডিটেনশনকে শুধু সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। নিয়মিত-অনিয়মিত নির্বিশেষে অভিবাসীদের মানবাধিকার ও মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে যৌথভাবে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।
আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহকে কেন্দ্রীয়ভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত একটি জাতীয় ওয়েবসাইট চালুকরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে অভিবাসী ও অভিবাসনে আগ্রহীগণ সঠিক তথ্য প্রাপ্তি ও যাচাইয়ের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন। ইউএনসিডিএফ ও ইউএনডিপির যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, সব অভিবাসীর জন্য ডিজিটাল সমাধান নিশ্চিত করতে একটি সহায়ক নিয়ন্ত্রক ও নীতিগত পরিবেশ, সৃজনশীল উপায়ে ডিজিটাল লেনদেনের প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকার ও বেসরকারি খাতকে ইউএনসিডিএফ ও ইউএনডিপি সহায়তা করতে চায়। যাতে করে তারা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ নিজেদের দেশে অব্যাহত রাখতে পারেন এবং করোনাভাইরাসের ফলে মারাত্মকভাবে পর্যুদস্ত অভিবাসী পরিবারগুলোকে সহায়তা করতে পারেন। বাংলাদেশের অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সহায়তায় অনেক কিছু করার আছে, প্রয়োজনে নীতিমালা প্রণয়ের ব্যবস্থা করে মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। - লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়