কক্সবাজারের ‘শতাব্দীর স্বপ্ন’ এখন দৃশ্যমান
প্রকাশের সময় : 2023-02-15 15:33:00 | প্রকাশক : Administration
সায়ীদ আলমগীর: ‘শতাব্দীর স্বপ্ন’ সারাদেশের সাথে পর্যটননগরী কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ স্থাপন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালে সমাপ্ত হবার সিডিউল নিয়ে দ্রুত এগুচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প। তবে নির্মাণ সমাপ্ত হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না পর্যটন নগরবাসীকে।
চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবরে পর্যটক নিয়ে দরিয়ানগরে রেল আসার প্রত্যয়ে দ্রুত এগুচ্ছে চলমান রেল প্রকল্পের কাজ। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পরিকল্পনা মতো এ বছরেই 'শতাব্দীর স্বপ্ন' বাস্তবে রূপ পাবে বলে আশা করছেন কক্সবাজারবাসী। রেল চালু হলে পর্যটক যাতায়াত সহজ হবার পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন করা যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
তথ্যমতে, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণে পর্যটন নগরীর সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি বহুদিনের। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নত করার পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের দাবি দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়।
গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেল পথের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সারাদেশের মানুষ ট্রেনে পর্যটন নগরী কক্সবাজার যাওয়ার অপেক্ষায়।
কক্সবাজারের জন্য ট্যুরিস্ট কোচের আদলে উন্নত মানের কোচ দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। এজন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি কোচ কেনা হবে যেগুলোর জানালা সুপ্রশস্ত। মানুষ অনায়াসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবে। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের সম্মতি না থাকায় আপাতত রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ হচ্ছে না।
১০০ কিলোমিটার রেলপথে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদরসহ স্টেশন থাকছে আটটি। এ জন্য সাঙ্গু মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় সেতু। এছাড়াও রেলপথে তৈরি হয়েছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং।
সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। স্টেশনটিকে সৈকতের ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট।
ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। এর পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা যাওয়া করতে পারবেন। নদী-নালা-খাল বিল, পাহাড় ঘেঁষে হচ্ছে এ প্রকল্পের কাজ। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। - সংগৃহিত