আসলে আমরা কেমন হবো!
প্রকাশের সময় : 2023-03-29 13:09:22 | প্রকাশক : Administration
তাপিতা খানম: আমাদের সমাজের কিছু মানুষ আছে, যাদের কাজই হলো পরচর্চা করা। তারা এই কাজে বেজায় আনন্দ পায়। এটাকে তারা বিনোদনের একটা মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু এতে যে তাদের পাপের পাল্লা ভারি হচ্ছে বা যাদের নিয়ে কথা বলা হচ্ছে সেসব মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছে, সেদিকে কারোর কোন নজর নেই। কি ছেলে আর কি মেয়ে, সেই ছোট বেলা থেকে শুরু হয় নানা টাইপের কথা শোনা।
একটা বাচ্চা জন্মানোর সাথে সাথে শুরু হয় তার গায়ের রং আর মোটা-চিকন নিয়ে কথা। তখন সেসব কথাগুলো বাবা মায়ের শুনতে হয়। আরে ভাই বাচ্চা-কাচ্চা তো আল্লাহ দান। অনলাইন থেকে অর্ডার করে আনা জিনিস না। এরপর স্কুলে ভর্তি হলে শুরু হয়- সবার চেয়ে বেশি নম্বর পেতে হবে, ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে।
শুরু হয় প্রতিযোগিতা। কাজিনরা যদি কোনভাবে তার থেকে বেশি ভালো করে, তাহলেতো আর কথাই নাই। কথার বুলেট খেতে খেতে বুকটা পুরা জাজরা হয়ে যাবে। এই প্রতিযোগিতা যেন চলতে থাকে আমৃত্যু। কেনরে ভাই জীবনটা কি শুধু প্রতিযোগিতা করার জন্য? কয়টা মানুষ চায় তার সন্তানটা স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মত মানুষ হোক? মুখে মুখে চায় বা মনে মনে ভাবে। কিন্তু বাস্তবিক চিত্র থাকে ঠিক উল্টো।
তবে এ কথাও ঠিক যে সন্তানকে শাসন করতে হবে, নয়তো বেপথে যাবে। আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, কোন কিছুই বেশি ভালো নয়। বেশি শাসনে সন্তান বিগরে যায়। এখনকার প্রেক্ষাপটে সন্তান মানুষ করা খুব বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সস্তা নেট দুনিয়ায় সব কিছু হাতের মুঠোয়। এখন ভালো থাকাটা সত্যিই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আসুন এবার একটু মেয়েকাব্য নিয়ে বসি। ছয় ক্লাস থেকেই শুনতে হয়- এখন কিন্তু বড় হয়ে গেছিস, এটা করা যাবেনা-ওটা করা যাবেনা, এটা পরা যাবেনা, ঐ ছেলের দিকে ওভাবে তাকালি কেন, মেয়ের হাবভাব ভালো ঠেকছে না, তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে হবে ব্লাব্লা । এগুলো শুনতে শুনতে অনার্সের মাঝামাঝি পর্যন্ত যারা যেতে পারে তাদের শুনতে হয়- এত পড়াশুনা দিয়ে কি হবে, সেইতো রান্নাবান্নাই করতে হবে, গাল ভেঙ্গে যাওয়ার আগে মেয়ে বিয়ে দাও, বিয়ে দিতে দেরি করলে পরে আর ভালো ছেলে পাওয়া যাবে না ইত্যাদি।
এসবের কারণে এদের মধ্যে বিরাট একটি অংশ ঝরে পরে। অবশ্য ঝরে পরাটাও খারাপ না। জামাইর ঘাড়ে বসে নিশ্চিন্তে খেতে পারে। ক্যারিয়ার নিয়ে এত মাথা ঘামাতে হয় না। ক্যারিয়ার সচেতন মেয়েদের এক হিসেবে লসও হয়। কেননা এদের ঘর ও বাইরে দুইটা সামাল দিতে জীবনটা তেজপাতা হয়ে যায়।
যাইহোক, পড়াশুনার শেষের দিকে শুনতে হয় নতুন কথা। ভালো ক্যারিয়ার গড়তে হবে। নয় তো সমাজ আর আত্মীয় স্বজনের কাছে মুখ দেখানো যাবেনা। ওমুকে ডাক্তার হয়েছে, তমুকে ইঞ্জিয়ার হয়েছে, ওতো সরকারি চাকরি পেয়েছে, ওতো বিসিএস ক্যাডার হয়েছে, ব্যাংকার হয়েছে- এগুলো শুনতে শুনতে আপনার কান দুইটা পঁচে যাবে!
এবার বলি বিয়ে সমাচার নিয়ে। মেয়ে যদি পড়াশুনা শেষ করে ফেলে তাহলে শুনতে হয়- হায়রে! পড়া শেষ এখনো বিয়ে করেনি, আর কবে বিয়ে করবে বুড়ি হলে, একাল গিয়ে ওকালে ঠেকেছে আর বিয়ের দরকার কি! ধরেন বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর শুরু হবে- এত দেরিতে বিয়ে করেছিস! বাচ্চা নিবে কবে, এখনো বাচ্চা হয়নি, কিছু খেওটেওনা, তাড়াতাড়ি বাচ্চা নাও, এতদিন বিয়ে হলো এখনো বাচ্চা হয়নি, ওর মনে হয় বাচ্চা হয় না সমস্যা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সাহস করে এসব কথায় উত্তর দিলে সে হয় বেয়াদব। উত্তর না দিলে হয় ড্যাম কেয়ার। আসলে আপনি যাই করতে যাবেন সব কিছুতেই দোষ খুঁজে বের করা হবে। কেনোরে ভাই আপনাদের অন্য মানুষ নিয়ে এত ভাবনা কেন? মানুষের কথার কষ্টে ঘুম হারাম হয়ে যায়, সাময়িক সময়ের জন্য হলেও স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। কেউ কেউ কষ্ট পেয়ে ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। অন্যথায়, মানুষের সুন্দর কথায় মানুষের জীবন অনেক সুন্দরও হয়।
কাজেই “পাছে লোকে কিছু বলে”এই জিনিস পাত্তা দিয়েছেন তো মরেছেন। নিজেকে ভালোবাসুন। নিজে কিভাবে পছন্দের মানুষগুলো নিয়ে ভালো থাকবেন সেই পরিকল্পনা করুন। মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজের মত বাঁচুন। কারণ জীবনটাতো খুব ছোট!