বাঁকা চোখে আঁকা ছবি (পর্ব ১)!!!

প্রকাশের সময় : 2023-05-17 16:24:05 | প্রকাশক : Administration
বাঁকা চোখে আঁকা ছবি (পর্ব ১)!!!

সরদার মোঃ শাহীন

 

ফজর শেষে ঘুমিয়ে পড়লেও গভীর ঘুমে পড়িনি হয়ত তখনও। রাতভর না ঘুমানোয় একটু বেলা করে ওঠার নিয়্যত করেই ভোরের সকালে ঘুমিয়েছিলাম। চোখে ঘুম তেমন ছিলও না। এপাশ ওপাশ করে ঘুমিয়ে পড়বো পড়বো করছি মাত্র। হঠাৎ ঝড়বৃষ্টির হালকা শব্দে উঠে বসলাম। বছরের প্রথম ঝড়। এবং ভোর বেলার ঝড়। সাধারণত ঝড় ভোর বেলায় কেন আসে, কিংবা বৃষ্টিই বা ভোরে কেন হয় এটা আমার আজও অজানা।

অবশ্য আমার জানা অজানায় ঝড়ের কিচ্ছু আসে যায় না। ঝড় তার নিয়মেই চলে। ঝাপটা মেরেই চলে। তবে আজকে ঝড়ের ঝাপটাটা খুব একটা ছিল না। তবুও সেটা ঝড় ছিল। বলা নেই, কওয়া নেই; ছোটখাট মাপের এই ঝড়টির আসার কথাও ছিল না। আকাশ মোটামুটি পরিষ্কারই ছিল। পরিষ্কার ছিল বাতাসও। হালকা মেজাজেই চলছিল সবকিছু। কিছুক্ষণ আগেও পর্দা মেলে দেখছিলাম বাইরের দৃশ্য। স্ট্রীট লাইটের আলোতে আলোঝলমল সামনের ব্যস্ত বড় রাস্তায় ছোটবড় গাড়িগুলো তখনও চলছিল। স্বাভাবিকের চাইতে সংখ্যায় সামান্য কিছুটা কম হলেও চলছিল।

অবশ্য এদেশে এখন স্বাভাবিক বলতে কিছু নেই। আশপাশে যা কিছু ঘটে, স্বাভাবিকের চাইতে অস্বাভাবিকতাই এখানে বেশি থাকে। এপ্রিল মাসের প্রথম থেকেই হুট করে ঢাকা শহরে আগুন লাগা শুরু হলো। অনেকটা সেই ঝড়ের মত ভোরের দিকেই লাগছিল। একদমই নিরিবিলি, নিঝুম সেই স্থাপনায় সিকিউরিটি গার্ড ছাড়া আর কেউ নেই। কোন বাসা বাড়িতে নয়, অফিস আদালতেও নয়। একেবারে পাবলিক   প্লেসে আগুন। পাবলিক প্লেসেরও অনেক ধরণ থাকে। কিন্তু এখানে শুধু একটাই ধরণ; শতশত দোকানে গিজগিজ করা শপিংমল।

ঈদের আগে শপিংমলগুলো হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কয়েক লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয় এখানে। সার্বিক ভাবে হয় দেশের অর্থনীতি চাঙা। চাঙা করার ঠিক এই জায়গাটিতে একের পর এক আগুন লাগায় এবং আগুনে বিশাল বিশাল একেকটা মার্কেট পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। মিলাতে পারছিলাম না এর হিসেব কোনভাবেই যে, এটা এমনি এমনি হচ্ছে, নাকি উদ্দেশ্যমূলক নাশকতার ফল। ধরে নিলাম নাশকতা নয়। তাহলে শট সার্কিট থেকে আগুন কেন মোটামুটি ভোরের দিকেই লাগে। দিনের কর্মব্যস্ততায় কেন আগুনের সূত্রপাত ঘটে না! ঘটে নিশুতি রাতের শেষ প্রহরে। যখন ঘটনাস্থলে কারো থাকারও কথা না, আবার জানারও কথা না।

কিন্তু কেমন করে যেন দেশের বিরোধী দল জেনে যায়। আগুন লাগতে না লাগতেই বিরোধী দল দাবী করে ফেলে, এটা সরকারের কাজ। নিশ্চিত করেই দাবী করে। আর দাবী করেই যে বসে থাকে সেটাও নয়। প্রোপাগান্ডাও শুরু করে। নাশকতার হোতা আর কেউ নয়, সরকার দলীয় লোকজন; বলে বক্তৃতা বিবৃতিও দেয়। এবং টার্গেট করে সন্দেহের তীর ছোড়ে স্বয়ং শহরের মেয়রের দিকে। সরকারী দলের মেয়র।

মানুষও বিশ্বাস করতে শুরু করে। শুরু করে ট্রল। মানুষের দোষ নেই। পরিকল্পিতভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোকারীরা বিশ্বাস করার মত করে বলে বলেই বিশ্বাস করে। ফলে সরকার কিছুটা বেকায়দায় পড়ে যায়। তবে একটার পর একটা আগুন লাগার ঘটনায় সরকারও নড়েচড়ে বসে। প্রথমে সরকার ভাবে, সারাদেশের প্রচন্ড দাবদাহই এই আগুন লাগার মূল কারণ। কিন্তু সারাদেশের আর কোন শহরে আগুন লাগে না, আগুন লাগে কেবল ঢাকা এবং এর আশেপাশের শহরে। এখানেই বিষয়টা ভাবিয়ে তোলে সরকারকে।

এভাবে নানামুখী ভাবনা সরকারকেও সন্দেহপ্রবণ করে তোলে। প্রথম দিকে নবাবপুরের আগুনকে স্বাভাবিক দুর্ঘটনা হিসেবেই নিয়েছিল সরকার। কিন্তু বঙ্গবাজারের আগুনে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। অতঃপর নিউ সুপার মার্কেটের আগুনে সরকার নিজেই নাশকতার সন্দেহ করা শুরু করে। এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। কেননা আগুনলাগা থামছিলই না। একটার পর একটা মার্কেটে আগুন লাগতে লাগলো। আজ শহরের এদিকে লাগে, তো কাল ওদিকে।

এক পর্যায়ে আগুন লাগে উত্তরার বিজিবি মার্কেটে। একই দিনে বায়তুল মোকাররমেও লাগে। পরদিন ওয়ারীতে। কিন্তু ধরা যাচ্ছিল না কাউকে। শেষমেষ ধরা পরে টঙ্গীর ছফুরা মার্কেটে। ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যায় আগুন লাগাতে আসা দুষ্কৃতিকারীদের কর্মকান্ড। রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে টঙ্গী বাজারের ছফুরা মার্কেটে এক যুবক ব্যাগ হাতে ঘোরাফেরা করছে। এক সময় রাসেল স্টোরের সামনে      প্ল−াস্টিকের পণ্যের নিচে হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। তবে ভাগ্য ভালো, পাশের দোকানদার টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ততক্ষণে কুকর্মকারী চক্রটি মার্কেটে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় এক বোতল অকটেন, ভাঙা ব্যাটারি ও টিস্যু পেপার।

তবে এতেই যে সব প্রমাণ হয়ে যায়, কিংবা সবগুলো অগ্নিকান্ড নিয়ে একটা উপসংহারে আসা যায়, সেটাও ঠিক নয়। আসলে কোন পক্ষ আগুন লাগায় অথবা কিভাবে আগুন লাগে আমজনতা এসবের কিচ্ছু জানে না। কোনদিন জানতে পারেও না। আগুনে তারা কেবল পুড়ে। পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়। সরকারী কিংবা বিরোধী পক্ষের কেউ পোড়েও না। অঙ্গারও হয় না। ক্ষতি যা হবার আমজনতারই হয়।

এমনিতেই প্রচন্ড খড়তাপে আমজনতার জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। জান যায় যায় করছে। তার উপরে আছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আর তিলে তিলে শেষ হচ্ছে মানুষ। এইসব মানুষদের জন্যে কিছু না কিছু করার নিমিত্তে মাঠে ছিল বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যথেষ্ঠ সুনামের সাথে তারা সেই সব মানুষদের সেবাও করে গেছে। তারা মানুষের পাশে থেকেছে যেমনি অতি গরমে, তেমনি অতি শীতেও থেকেছে। তারা বিদ্যা সহায়তায় যেমনি পাশে ছিল, পাশে ছিল ক্ষুধা নিবারণেও। বিদ্যানন্দের এত্তএত্ত ভাল কর্মকান্ড দেখে দানশীল মানুষেরাও তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল অবিশ্বাস্য ভাবে।

এবং বিদ্যানন্দও তড়তড় করে বড় হচ্ছিল। বিশাল হচ্ছিল। এই বিশালত্বের দিকে যাওয়াটাই মেনে নিতে পারেনি একটা পক্ষ। তাদের চক্ষুশূলে এবং লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয় বিদ্যানন্দ। এই পক্ষটি কোনভাবেই মানতে পারছিল না বিদ্যানন্দের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি। মানুষের দানের এত্ত এত্ত টাকা শুধু বিদ্যানন্দ পাবে কেন, এটা কিছুতেই মানতে পারছিল না দেশের দানপ্রত্যাশী বেশ কিছু সংগঠন। বিদ্যানন্দকে ধরতে তারা ছুঁতো খুঁজছিল। অবশেষে ছোটখাট একটা ছুঁতো যখন পেয়েই গেল হাতে, অমনি শুরু করলো নাচন কোঁদন। ট্রলের পর ট্রল।

লক্ষ্য একটাই। যেমন করেই হোক, বিদ্যানন্দকে মাঠ থেকে সরাতে হবে। তাদের গায়ে বিতর্কিত ট্যাগ লাগাতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে ভাল কাজ করার কাউকেই এই পক্ষটি মাঠে থাকতে দেবে না। মাঠ থাকবে শুধু তাদের দখলে। মানুষের কাছ থেকে দয়াদাক্ষিণ্য কিংবা দানখয়রাত পাবার একমাত্র হকদার তারা। তাদের কপালও ভাল। আমজনতা বিদ্যানন্দের কাছে তাদের সকল কর্মকান্ডের হিসেব চায়। কিন্তু তাদের কাছে চায় না।

আমজনতা সব সময় সবকিছুতেই বিভ্রান্তিতে থাকে। আগুন লাগায় থাকে, বিদ্যানন্দ ইস্যুতেও থাকে। বিভ্রান্তি মুক্ত হয়ে সবকিছু জানা এবং বোঝার অধিকার নিয়ে আমজনতার জন্ম হয়নি এদেশে। বড় অভাগা এই আমজনতা। পোড়ার জন্য তাদের জন্ম হয়েছে। জন্ম হয়েছে বঞ্চিত হবার জন্যে! তাদের জন্মই যেন আজন্মের পাপ!! জন্ম জন্মান্তরের পাপ!!!  

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com