আমের বাম্পার ফলন

প্রকাশের সময় : 2023-05-17 16:33:35 | প্রকাশক : Administration
আমের বাম্পার ফলন

মুকুল থেকে গুটি ভালো হওয়ায় সারাদেশে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চলতি বছরে শীতের সময়ে ঘন কুয়াশা আগের তুলনায় কম ছিল। ফলে মুকুল কম নষ্ট হয়েছে। শুরুতে বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলেও এখনকার বৃষ্টিতে আমের জন্য ভালো হচ্ছে। তবে কালবৈশাখীতে কিছুটা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আমচাষিরা।

শিলাবৃষ্টি ও টানা কালবৈশাখী আঘাত না হানলে এবার আম চাষিরা বিগত বছরগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। আম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ বাংলাদেশের সব জেলাতেই এবার কৃষকের মুখে চওড়া হাসি দেখা গেছে। তাদের প্রত্যাশা আগের বছরের তুলনায় ফলন ও দাম দুটোই বেশি পাবেন তারা। বর্তমানে আম চাষের জন্য বিখ্যাত সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে আমের চাষ হয়েছে। জেলাগুলোর কৃষকরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে আম বিদেশে রপ্তানির প্রত্যাশা করেছেন। সাতক্ষীরা জেলায় এবারও আমের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং কালবৈশাখী ছোবল না দিলে আম পরিপক্ব হওয়ার সময় পর্যন্ত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার মেট্রিকটন। দেশের বাজারে এই আমের সম্ভাব্য বিক্রি মূল্য হবে ২শ’২৫ কোটি টাকা এমনটি আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।

তবে ইউরোপীয় দেশগুলোতে রপ্তানিকারক সংস্থা গুলো প্রতিবছরের মতো এবার অগ্রিম যোগাযোগ না করায় বিদেশে আম রপ্তানির বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত হয়ে আছে। অপরিপক্ব আম গাছ থেকে নামাতে নিরুৎসাহিত করা এবং রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে বাজারজাত না করতে চাষিদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বিধি নিষেধ জারি করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। ১২ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য স্থানীয় আম পাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২৫ মে থেকে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি পাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড তাপদাহের কারণে এবার জেলার অনেক স্থানে মধ্য এপ্রিলেই গাছে থাকা আম হলুদ রং ধারণ করেছে। আর এই সুযোগে অনেক চাষি অপরিপক্ব আম বাজারজাত করছে। এ বছর জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ও বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। এতে আয় হবে ২২৫ কোটি টাকারও বেশি। কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন কম হয়েছিল। এবার আমের ফলন ভালো। ঝড় বা ভারি বৃষ্টি না হলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।

মাটি, বাতাস ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, মলি−কা, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য জাতের প্রচুর আম উৎপাদন হয়। চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। গত বছর অষ্টম বারের মতো ইংল্যান্ড ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে আম রপ্তানি হয়।

এবার বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদন এবং রপ্তানির জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের শপগুলোতে যাবে সাতক্ষীরার আম। আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে অন্য জেলার চেয়ে সাতক্ষীরায় আম আগে পাকে। এ জন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরু হয়।

চলতিবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন। গত বছর ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছিল। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় বোঁটা শুকিয়ে গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

তীব্র তাপদাহের পর বর্তমানে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি সত্ত্বেও এবার রাজশাহীতে আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। এক সময় রাজশাহীর আম বলতে শুধু জেলার বাঘা ও চারঘাটেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন আমবাগানের বিস্তৃতি ঘটেছে জেলার সব উপজেলায়। এমনকি রাজশাহী শহরেও বেড়েছে আমের গাছ।

সব মিলিয়ে রাজশাহীর সর্বত্র এখন হচ্ছে আমবাগান। চলতি মৌসুমে এ জেলায় এক হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বেড়েছে আম বাগান। এখন এসব বাগানে যেটুকু টিকে আছে তা শেষ পর্যন্ত থাকলেই ভালো ফলন হবে। গাছে গাছে এখন দৃশ্যমান আমের থোকা ক্রমেই বড় হচ্ছে। প্রচন্ড খরার পর গত দু’দিনের বৃষ্টিতে আমের জন্য ভালো হয়েছে। বোটা শক্ত হয়েছে। এখন প্রাকৃতিক বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে আমের উৎপাদন ভালো হবে।

গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে আমের বাগান বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব আমবাগানে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলন হতে পারে। মাঝে কিছুদিন অতি তাপপ্রবাহে গুটি আমের ক্ষতি হলেও এখন অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ঝরে পড়ার হারও কম। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহীতে আম চাষের জন্য যে আবহাওয়াকে অনুকূল হিসেবে ধরা হয়, এখন তা শতভাগ বিরাজ রয়েছে।

রাজশাহী জেলায় এবার ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। গত বছর বাগানের পরিমান ছিল ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। গত বছর আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এবার আমের গড় ফলনের পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়া থাকলে প্রত্যাশার বেশি ফলনের আশা রয়েছে।

আশা করা হচ্ছে আগামী ২০ মের মধ্যে গুটি জাতের পাকা আম এবার মিলবে বাজারে। আম চাষের জন্য খরাও দরকার। খরা হয়েছে। বৃষ্টিও হয়েছে সময়মতো। এখন ঝড় ও শিলাবৃষ্টিসহ বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের বাম্পার উৎপাদন হবে। এবার রাজশাহীতে আড়াই লাখ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গাছে এখন আমের অবস্থা খুব ভালো। এবার রাজশাহীতে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। - জনকণ্ঠ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com