স্বপ্ন ও সম্ভাবনাময় কর্ণফুলী টানেল

প্রকাশের সময় : 2023-05-31 11:44:01 | প্রকাশক : Administration
স্বপ্ন ও সম্ভাবনাময় কর্ণফুলী টানেল

শেখ দিদার: চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী ট্যানেলটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার ও অর্থনীতির হৃদপিণ্ড বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে বানিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও কার্যকর বানিজ্যিক রাজধানী হয়ে উঠেনি চট্টগ্রাম। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দুঃসাহসী ও দূরদর্শী যুগান্তকারি সিদ্ধান্তের ফলে আমূল পরিবর্তনের সাথে সাথে কার্যকর বাণিজ্যিক রাজধানীতে রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। সরকারের বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পের মধ্যে         উলে−খযোগ্য একটি যা উপমহাদেশের প্রথম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুরঙ্গ সড়ক(বঙ্গবন্ধু টানেল) নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’গড়ে তোলা হবে। ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে (সরকারের সঙ্গে সরকারের) সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীন সরকারই সিসিসিসিএলকে এই টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে।

স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের পরিবর্তন ইতিমধ্যে অনেকাংশই দৃশ্যমান। এ টানেল ধরেই কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে এবং পাশাপাশি রেল সংযোগও যুগান্তকারী সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। নির্মাণাধীন এই সড়কের দুপাশেই শিল্প কারখানা এবং আবাসনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতিপূর্বে কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে চট্টগ্রাম মহানগর আর টানেল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণপাড়ও দ্রুতই রূপ পেতে যাচ্ছে শহরে।

তারই ধারাবাহিকতায় নতুন করে চট্টগ্রাম মহানগর মাষ্টার প্ল্যানের কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এতে করে বিস্তৃত হবে মহানগরীর আয়তন। যার ফলে অনেকটা অদ্যুষিত গ্রামীণ জনপদ হিসেবে পরে থাকা নদীর দক্ষিণ পারেও এখন উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে কর্ণফুলী টানেলের ভেতর দিয়ে যানবাহন উঠবে কক্সবাজার মহাসড়কে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুত হচ্ছে আনোয়ারা থেকে শিকলবাহা পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার ছয় লেনের সড়ক যার কাজও টানেলের নির্মাণের সঙ্গে শেষ হবে।

এছাড়াও এগিয়ে চলেছে দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের কাজ। শীগ্রই এ লাইনে ট্রেন চালানোর টার্গেট সরকারের। কর্ণফুলীর দক্ষিণপাড় আনোয়ারায় আগে থেকেই রয়েছে কাফকো (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড), কোরিয়ান ইপিজেড এবং বিভিন্ন ভারি শিল্প কারখানা। বঙ্গবন্ধু টানেল সেখানে শিল্পায়নের গতিকে আরও বেগবান করবে। চায়না ইকোনমিক জোন বাস্তবায়ন বড় একটি ধাপ এগিয়ে দেবে    এই টানেল। কেননা এর মাধ্যমে সুগম হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে আনোয়ারা উপজেলা নতুন করে রূপ পাচ্ছে উপশহরে। পরিবর্তন ঘটছে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায়।

টানেলের সংযোগ সড়কের জন্য শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়কের ছয় লেনের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ভৌগোলিক কারণে একদিকে সমুদ্র বন্দরের পাশে অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের ফলে আনোয়ারা হবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ এক মাধ্যম। আনোয়ারার জনসাধারণ টানেল নিয়ে দেখছে নতুন দিনের স্বপ্ন। ইতিমধ্যে স্থানীয়রা গোয়াল পাড়া এলাকার নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে মিল রেখে নাম দিয়েছে টানেল নগর।

টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে উপজেলায় জায়গা-জমির মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা, দোকানপাট, শপিংমল ও অসংখ্য অভিজাত রেস্টুরেন্ট। টানেলের কাজ সম্পূর্ণ হলে নতুন করে সৃষ্টি হবে আর্থ-সামাজিক অবস্থান। বাড়বে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। আনোয়ারাকে ঘিরে সরকারের মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল, পারকি সমুদ্র সৈকতে আধুনিক মানের পর্যটন কমপ্লে−ক্স নির্মাণ, চায়না ইকোনমিক জোন, পিএবি সড়কের ছয় লেন প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হলে আনোয়ারা শুধু উপশহর নয়, একটি আন্তর্জাতিক বাজারে পরিণত হবে।

চট্টগ্রাম শহরকে ওয়ান সিটি টু টাউন স্বপ্নের দ্বার উন্মোচনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। পারকি সমুদ্র সৈকতের পাশে চলছে বিশ্বমানের পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ। পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৩ দশমিক ৩৬ একর জমিতে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে পারকি সমুদ্র সৈকত। ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে জি টু জি পদ্ধতিতে আনোয়ারা গহিরায় এলাকায় ৭৭৪ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চায়না ইকোনমিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এতে ৩৭১টি শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। এসব কারখানায় প্রায় দুই লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। একদিকে বিদেশী সব শিল্প-কারখানা অন্যদিকে টানেলের মূল পয়েন্ট হওয়ায় এখানকার মানুষের জীবনমান একশ বছর এগিয়ে গেছে। আনোয়ারার উন্নয়নে যে ক’টি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম এগিয়ে যাবে। - জনকন্ঠ

 

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com