বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

প্রকাশের সময় : 2023-05-31 11:44:19 | প্রকাশক : Administration
বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

রহিম শেখ: বিশ্বের বৃহত্তম দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। এই অধ্যায় এমন এক সময় রচিত হলো যখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অর্ধশতক বছর পার করেছে বাংলাদেশ। সহজ করে বললে, সত্তরের দশকের শুরুতে উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক যতটুকু ধারণা করেছিল সেটিকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংক এখন বলছে, উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। কখনো বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের সফল আখ্যান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে দাতা সংস্থাটি। কিন্তু এই সফলতার পেছনে ছিল ‘সাহসী’ এক গল্প। দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগে অনেক টালবাহানার পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ফিরিয়ে দিয়ে পুরোপুরি নিজস্ব অর্থে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠানো প্রকল্পটি। প্রায় এক বছর ধরে এই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল করছে। দেশের অর্থনীতির চাকা আরও সচল করেছে। কিছুদিন পর ছুটবে ট্রেন। অথচ এই বিশ্বব্যাংক একসময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশে ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্পে তারা ভেবেচিন্তে ঋণ দেবে।

খুব দ্রুতই আবার সিদ্ধান্ত বদলায় সংস্থাটি। পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে আসার পর বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা উলে−খযোগ্য হারে বেড়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ৫০ বছরের সম্পর্ক উদযাপন করছে বেশ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি ছিল ভিন্নধর্মী। সংস্থাটির সদর দপ্তরে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে এ ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আগে কখনই হয়নি। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। স্বভাবতই বাংলাদেশও বিশ্বব্যাংককে বিভিন্ন সময়ে পাশে চায়। মনে রাখতে হবে, পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতি এবং তাদের উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান মিলেমিশে আছে।

বিশ্বব্যাংক ভূরাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। একথা সত্য, বিশ্বব্যাংক আলাদা একটি সংস্থা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কোন্নয়ন মানে পশ্চিমাবিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো হওয়ার সুযোগ বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত রাখছে কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গত পাঁচ দশকের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে। পদ্মা সেতুতে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। পদ্মা সেতুই হতে পারত কোনো একক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় অর্থায়ন। কিন্তু দুর্নীতি হতে পারে এমন অভিযোগ এনে ২০১১ সালে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় সংস্থাটি।

সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কানাডার আদালত; কোথাও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৩২ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে। প্রায় ১০ বছর আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়।

দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের জুনে চালু হয়েছে সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

সেতুটি একদিকে যেমন বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, তেমনি পুরোপুরি নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণ করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিশ্বব্যাংকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যেমন স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় চার হাজার কোটি ডলার সহজশর্তে ঋণ ও অনুদান দিয়েছে।

মূলত তিনভাবে সহায়তা দিয়ে থাকে সংস্থাটি। এগুলো হলো-বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়। এছাড়া পরামর্শক সেবা দিয়ে থাকে। যেমন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে অনেক সময় পলিসি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সহায়তা দেয়। এর বাইরে কারিগরি সহায়তা হিসেবেও সহায়তা দেয় বিশ্বব্যাংক। যেমন দারিদ্র্য নিয়ে জরিপ করা, এর প্রশ্নপত্র তৈরি, কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ইত্যাদি দিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অনুদানও দেওয়া হয়।

পদ্মা সেতুতে যে অর্থায়ন করার কথা ছিল, তার চেয়েও বেশি অর্থ অতিরিক্ত হিসেবে অন্য প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের যে শাখা- ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) - নিম্ন আয়ের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য ঋণ দেয়, তাদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ বাংলাদেশ।

অন্যদিকে বাংলাদেশেরও সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, সত্তরের দশকের শুরুতে উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা সম্পর্কে ব্যাংক যতটুকু ধারণা করেছিল সেটিকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। গত ৫০ বছরে আইডিএ’র কাছ থেকে অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ আর কম সুদে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ।

এই অর্থ কাজে লেগেছে দারিদ্র্য বিমোচনে। রাস্তাঘাট, ভবনসহ বড় অবকাঠামো নির্মাণেও অর্থ দিয়েছে এই বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাংক দশকের পর দশক অর্থ দিয়ে আসছে। বর্তমানে ৫৭টি চলমান প্রকল্পে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক। - সংগৃহিত

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com