একজন আবদুল লতিফ মণ্ডল
প্রকাশের সময় : 2023-09-03 12:49:09 | প্রকাশক :
মানুষের জীবনে সংকট বা সমস্যা থাকেই। সেখান থেকে উত্তরণের জন্য মানুষই আবার মানুষের সহায় হয়। করোনা মহামারিতে সেটি সবচেয়ে বেশি প্রতীয়মান হয়েছে। প্রতিটি দুর্যোগ বা বিপর্যয়ে কমবেশি এমনটি আমরা দেখি। খাবার, অর্থ, পোশাক, চিকিৎসা দিতে কতভাবে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ায়। এমনকি বাজার করে দিয়েও।
বইখাতা, খেলনা বিতরণ বা শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টিও আমরা দেখে থাকি। তবে ঢাকার উত্তরার আজমপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল লতিফ মণ্ডল যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা একেবারে অনন্য। হাঁটতে-চলতে অক্ষম বা দুর্বল লোকদের তিনি ছড়ি (লাঠি) বিলিয়ে যাচ্ছেন। তাও একদুই দিন বা একদুই মাস নয়; বছরের পর বছর।
আবদুল লতিফ ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ১৯৯২ সালে তিনি অবসরে যান। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে হলেও চাকরিসূত্রে ঢাকাতেই থিতু হন তিনি। বার্ধক্যের কারণে ছড়ির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ছড়ি ও হুইলচেয়ারের সাহায্যে ২০১০ সালে তিনি হজ্বও করেন।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত দুই মেয়ের কাছে বেড়াতে গেলে তাঁর ভাবনায় আসে, মানুষকে ছড়ি বিতরণ করেও সহায়তা করা যায়। ছোট মেয়েসহ দেশে ফিরে সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তর করলেন। মেয়ের সহযোগিতায় প্রেসক্লাবের উল্টো পাশের এক দোকান থেকে কিনলেন কিছু ছড়ি। সেগুলো এলাকার অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন।
এরপর থেকে তিনি উত্তরা থেকেই কিনতে চলে যেতেন প্রেসক্লাবে। বাস, রিকশা ইত্যাদি যানবাহনে করে যেতেন ছড়ি কিনতে। মানুষকে সহায়তা করার প্রতি তাঁর এমন একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতা দেখে একপর্যায়ে দোকানিই তাঁকে বারণ করেন এত দূর আসতে। তিনিই তাঁর বাসায় ছড়ি পৌঁছে দিতেন। দামও কম রাখতেন।
বাসায় ছড়ি তো রাখেনই, এমনকি গাড়িতেও কয়েকটি করে ছড়ি রাখেন। গ্রামের বাড়ি গফরগাঁওয়ে যাওয়ার সময়েও নিয়ে যান ছড়ি। চলাচলে অসুবিধা হয়, এমন মানুষ দেখলেই তাঁকে ছড়ি দেন তিনি। একেকটি ছড়ি কেনেন ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দিয়ে। এখন পর্যন্ত কতগুলো ছড়ি দিয়েছেন, তা গুনে রাখেননি। তবে এ সংখ্যা ২৫০ থেকে ৩০০টি হবে বলে তিনি ধারণা করেন।
তার মানে, একাই তিনি এতগুলো মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাও এই বার্ধক্যকালে। এমনকি তিনি না থাকলেও এ কার্যক্রম কীভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়, সেটি নিয়েও ভাবছেন। আবদুল লতিফ নিঃসন্দেহে একজন সাদামনের মানুষ। এমন পরোপকারী ও নিঃস্বার্থ মানুষই সমাজকে এগিয়ে নেন। তাঁকে আমাদের অভিবাদন। - সূত্র: অনলাইন