আলোচনায় অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস
প্রকাশের সময় : 2023-09-14 13:29:40 | প্রকাশক :
ব্রিকস হচ্ছে পাঁচ দেশের একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট। মূলত ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা সদস্য এই পাঁচ দেশের আদ্যক্ষর অনুযায়ী ব্রিকসের নামকরণ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে ব্রিকসের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
বিকাশমান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্রিকস বহুপক্ষীয়তা সমুন্নত রাখা, বৈশ্বিক শৃঙ্খলের সংস্কারকে গতিশীল করা এবং উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিত্ব ও বক্তব্য তুলে ধরতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আন্তর্জাতিকভাবে বলা হয়ে থাকে, বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানাতেই দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর ব্রিকস আনুষ্ঠানিকভাবেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বড় ধরনের সংস্কারের পক্ষে। ফলে নতুন নতুন দেশ ব্রিকস জোটে ঢুকলে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সংস্কারের দাবি আরও জোরালো হবে।
ব্রিকস জোটে মাত্র পাঁচটি দেশ থাকলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের অবস্থান বেশ শক্ত। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বাস করে এই পাঁচ দেশে। বৈশ্বিক জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) সাড়ে ৩১ শতাংশ ব্রিকসের দখলে। যেখানে বিশ্বের সাত ধনী দেশের ফোরাম জি-সেভেনের জিডিপি কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে।
আবার ইউক্রেন আক্রমণ করার পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ব্রিকসের কোনো সদস্যই তাতে অংশ নেয়নি; বরং রাশিয়ার সঙ্গে ভারত ও চীনের বাণিজ্য বেড়েছে। বলা হয়ে থাকে, মাঝে ঝিমিয়ে পড়লেও বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্রিকস এখন যথেষ্ট সক্রিয় ও চাঙাভাব দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক জোট হলেও পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েই হাজির হচ্ছে ব্রিকস। সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে সেই বার্তাটাই দিতে চাইছে জোটটি।
শুরুতে ছিল ব্রিক। অর্থাৎ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। ধারণাটির প্রবর্তক ছিলেন বিনিয়োগ ব্যাংক দ্য গোল্ডম্যান সাচের অর্থনীতিবিদ জিম ও নেইল। তিনি ২০০১ সালের নভেম্বরে এক রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছিলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ এই চারটি দেশই অর্থনীতিতে প্রাধান্য দেখাবে। কারণ হিসেবে জিম ও নেইল বলেছিলেন, এই চার দেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল, তাদের শ্রম সস্তা, জনমিতি অনুকূলে এবং ব্যবহার করার মতো প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। ২০১০ সালে ব্রিকের সঙ্গে যুক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। জিম ও নেইল অবশ্য এটিকে একটি গবেষণা বলেই উল্লেখ করেছিলেন। কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক জোটের কথা উল্লেখ করেননি।
ব্রিকসে একটি জোট করার উদ্যোগ ছিল আসলে রাশিয়ার। ২০০৬ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথম জোট গড়ার আগ্রহের কথা জানান। ওই বছরেরই ২০ সেপ্টেম্বর পাঁচ দেশের মন্ত্রীরা এ নিয়ে প্রথম বৈঠকে বসেন। এরপর ২০০৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। ২০০৮ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত জি-এইট সম্মেলনে পুতিন বৈঠক করেন বাকি দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সঙ্গে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। এরপরই ব্রিকসের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৯ সালের ১৬ জুন, রাশিয়ায়। সেই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের যাত্রা শুরু।
বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। বাংলাদেশ অবশ্য কয়েক বছর আগে থেকেই ব্রিকসের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, সব মিলিয়ে ২০টি দেশ ব্রিকস জোটে যোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
অবশেষে বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসের সদস্য হলো আরো ৬ দেশ। এসব দেশগুলো হলো মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। ২৪ আগস্ট জোটের শীর্ষ সম্মেলনে নতুন সদস্য হিসেবে এসব দেশগুলোর নাম ঘোষণা করা হয়। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি এ দেশগুলো ব্রিকসে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করবে। - সূত্র: অনলাইন