রোজ গার্ডেন হচ্ছে ‘ঢাকা নগর জাদুঘর’

প্রকাশের সময় : 2018-10-10 22:49:49 | প্রকাশক : Admin
�রোজ গার্ডেন হচ্ছে ‘ঢাকা নগর জাদুঘর’

সিমেক ডেস্কঃ পুরান ঢাকার ঋষিকেশ রোডে ঐতিহাসিক ভবন রোজ গার্ডেনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে রূপান্তর করা হবে জাদুঘরে। এর নাম রাখা হচ্ছে ‘ঢাকা নগর জাদুঘর’। তিনিই নির্বাচন করেছেন এই নাম। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষণ ও জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য ইতিহাসবিদ, রাজনীতিবিদ ও গবেষকদের পরামর্শ নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তবে পুরো কাজ শেষ করতে লেগে যাবে একবছর। সূত্র জানায়, ঢাকা নগর জাদুঘরে ঢুকতে টিকিট লাগবে। তবে প্রবেশমূল্য এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। জাদুঘর পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে জনবল। প্রয়োজনে নিদর্শন কেনার ইচ্ছে আছে সরকারের।

জানা গেছে, দুই মাসের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হাতে রোজ গার্ডেনের দায়িত্ব অর্পণের পরপরই এর কাজ শুরু হবে। এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী এ ভবনকে নগর জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই জাদুঘর

হবে মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার ঐতিহ্য, আমাদের সভ্যতা ও নদীর ক্রমবিকাশ, মানুষের জীবনযাত্রার বিকাশ, পাশাপাশি রাজনীতির ধারা; সব মিলিয়ে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হবে এটি।’

রোজ গার্ডেন একটি ঐতিহাসিক ভবন। এখানে যেমন ব্যক্তির ইতিহাস রয়েছে, তেমন দেশেরও ইতিহাস আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছিল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই দল ও ব্যক্তির স্মৃতিবিজড়িত এই রোজ গার্ডেন। আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন হয়েছে এই ভবনে। এখান থেকেই আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু। এমন একটি ঐতিহ্যবাহী ভবনকে রক্ষা ও ইতিহাসকে ধারণ করার জন্যই এটি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।’

পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত বাড়িটি কিনতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৯০০ টাকা। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনের দায়িত্বভার সরকার গ্রহণ না করলে একসময় হয়তো এটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ সংরক্ষণের অভাবে এমন ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শনই ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্ম নেয় বাংলার মানুষের মুক্তি আর অধিকার আদায়সহ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। এর ১৯২ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ভাগীরথী নদীর তীরে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। কাকতালীয়ভাবে সেই ২৩ জুন বাংলার পরাধীনতার অন্ধকার কাটাতে আওয়ামী লীগের যাত্রার মধ্য দিয়ে নতুন সূর্যসম্ভাবনাময় সকাল উদ্ভাসিত হয়েছিল রোজ গার্ডেনে।

১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়িটি নির্মাণ করেন ব্যবসায়ী হৃষিকেশ দাস। পশ্চিমমুখী ওই দোতলা বাড়ির চারপাশ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের বাগানে সাজিয়ে তোলেন তিনি। সেই থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’। বাগানটি সুদৃশ্য ফোয়ারা ও পাথরের মূর্তিতে সাজানো ছিল। মূল ভবনের দোতলায় পাঁচটি কামরা আর একটি বড় নাচঘর আছে। নিচতলায় আছে আটটি কামরা। ভবনটির মোট আয়তন ৭ হাজার বর্গফুট। উচ্চতায় ৪৫ ফুট। ছয়টি সুদৃঢ় থামের ওপর বাড়িটি স্থাপিত। প্রতিটি থামেই রয়েছে কারুকাজ।

বেহিসাবি জীবনযাপনের কারণে একপর্যায়ে দেউলিয়া হয়ে যান রোজ গার্ডেনের মালিক হৃষিকেশ দাস। ১৯৩৬ সালে খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে এর সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। তখন এর নামকরণ হয় ‘রশীদ মঞ্জিল’। মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর। এর সুবাদে ভবনটি ‘হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ নামে পরিচিতি পায়। ১৯৭০ সালে রোজ গার্ডেন ইজারা দেওয়া হয় বেঙ্গল স্টুডিও নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে।

ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন ১৯৮৯ সালে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে বাংলাদেশের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ। স্থাপত্যকলার বৈচিত্রের সুবাদে রোজ গার্ডেন এক মাস্টারপিস। সেখানে মোগল স্থাপত্য, ব্রিটিশ ঔপনিবেশবাদ, লোকজ ও ইউরোপীয় গথিক স্থাপত্যের চমৎকার সম্মিলন ঘটেছে। রোজ গার্ডেনের পশ্চিম ও উত্তর দিকের দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশে দুটি মূল ফটক আছে। প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য পশ্চিম দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে একটি বিস্তীর্ণ খোলা প্রাঙ্গণ। সেখানে মঞ্চের ওপর দণ্ডায়মান কয়েকটি সুদৃশ্য নারী মূর্তি। পূর্বাংশের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি আয়তকার পুকুর। এর পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মাঝামাঝি একটি করে বাঁধানো পাকা ঘাট আছে। তার পূর্ব দিকে রয়েছে পশ্চিমমুখী একটি দোতলা ইমারত। এটাই রোজ গার্ডেন।

রোজ গার্ডেনে প্রবেশপথের সামনের চত্বরে একটি সুন্দর ফোয়ারা আছে। সাত ধাপের একটি সিঁড়ি বেয়ে রোজ গার্ডেনের প্রথম তলায় যেতে হয়। এর সামনের দিকের মাঝামাঝি অংশের প্রতি কোঠার পাশাপাশি রয়েছে তিনটি খিলান দরজা। ওপরের তলায় প্রতিটি খিলানের ওপর একটি করে পডিয়াম আছে। বাইরের দিকে দেখা যায় উপবৃত্তাকার ব্যালকনি। এর দু’পাশে একটি করে করিনথীয় পিলার রয়েছে। সেগুলোর উভয় পাশের অংশে প্রতি তলায় আছে একটি করে দরজা।   -সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com