আগামীর পথে জ্বালাবো মোরা সেই সময়ের আলো!

প্রকাশের সময় : 2018-10-24 16:58:38 | প্রকাশক : Admin
�আগামীর পথে জ্বালাবো মোরা সেই সময়ের আলো!

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীনঃ “সময়ের আলো” নামের এই কলামটি নিয়মিত লিখছি আজ সাত বছর হতে চললো। সময়ের হিসেবে সাত বছর হয়তো খুব বেশী সময় নয়। পাঠকের মতেও নয়। তবে আমার মতে শুধুমাত্র পত্রলেখার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কারো একজনের জন্যে এ সময় কেবল র্দীঘ সময় নয়; মহা লম্বা সময়ও। বিষয়টি আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই লিখতে বসলেই। সীমিত ভান্ডার নিয়ে লিখতে নেই। অথচ আমার জ্ঞানের ভান্ডার এতটাই সীমিত যে, আজকাল লেখার বিষয়বস্তুর স্বল্পতায়ও ভুগি।

আর বসে বসে ঝিমুই। আমাকে ঝিমুতে দেখে আমার শোনিমও হাসে। মুচকী মুচকী হাসে। ছোট্ট হলে কী হবে! ইদানীং পাকনামী বেড়েছে। তাই মিটমিটিয়ে হাসে। পাঠককূল ওর মত হাসে কি না জানি না। হাসবে কিভাবে? পাঠক তো আমাকে দেখে না। লিখতেও দেখে না, ঝিমুতেও দেখে না। তাই হাসার সুযোগই নেই। তবে সমালোচনার সুযোগ আছে। এই একটা জায়গায় তাদের বিস্তর সুযোগ আছে। বিজ্ঞ এবং সচেতন পাঠক সে সুযোগটি নেনও। পাঠক সমালোচনা করবে এটা প্রত্যাশিত। পাঠকদের কাজই হলো দুটো। কষ্ট করে পড়বে আর মন ভরে সমালোচনা করবে। সমালোচনা সব সময় আমাকে শুদ্ধ করে; এগুতে শিখায়।

তবে মাঝেমাঝে অবাকও করে। মাঝেমাঝে অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করি, পাঠকদের একটা বড় অংশ ইতিবাচক সংবাদ নয়, নেতিবাচক সংবাদের প্রতি বেশী দূর্বল; বেশী আগ্রহী। কিন্তু আমাদের এই সাপ্তাহিকী তো নেতিবাচক সংবাদের জন্যে নয়। লক্ষ্য করে থাকবেন, পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার একেবারে উপরের বামপাশে আমাদের পত্রিকার ধরনের একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেয়া থাকে সব সময়। হয়ত কারো নজরে পরে, হয়ত পরে না। তাই আমরা কেবল মাঝেমধ্যে নয়; নিয়মিত এই অংশটুকু অবিরত ছাপিয়ে যাই; “নেতিবাচক বা হতাশার নয়; ইতিবাচক সংবাদ, সুসংবাদ, সাফল্য এবং উন্নয়নের সংবাদ নিয়েই আমাদের নিয়মিত আয়োজন।”

তবে এই আয়োজনে অনেক ধরনের সংবাদের মাঝে আমরা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করি রাজনৈতিক সংবাদ। কেবল সংবাদে নয়, আমাদের সম্পাদকীয়তেও এড়িয়ে চলি। গেল সাত বছরে মাত্র সাতটি সম্পাদকীয়তেও রাজনীতি নিয়ে লিখেছি কিনা সন্দেহ। এ বিষয়ে আমাদের আগ্রহও নেই। না থাকার কারণও অনেক। আমারা রাজনীতি যেমন বুঝি না, তেমনি এর গতি প্রকৃতিও বুঝি না। খর¯্রােতা নদীরও গতিপথ বোঝা যায়। কেবল বোঝা যায় না বাংলাদেশের রাজনীতির গন্তব্যহীন আঁকাবাঁকা গতিপথ।

এদেশের রাজনীতি কিংবা রাজনীতিবিদগণ বড়ই পিকুইলিয়ার। কখন কী বলেন, বা করেন তা বুঝতে হলে আঠাঁর মত লেগে থাকতে হয়। না হলে সময়ের বিবর্তনে একই মুখে ১৮০ ডিগ্রী উল্টো কথা শুনলে ভিমড়ি খাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। অবস্থানগত তারতম্যের কারণে পাখির বুলির মত একের বুলি অন্যে আওড়ান। পাঁচ বছর আগে একদল যা বলে, পাঁচ বছর পর অন্যদল ঠিক তেমনটি বলে।

এক সময় আওয়ামীলীগ বলতো, জনগণের ভোটের অধিকারের কথা। বিএনপি বলতোও না; শুনতোও না। এখন বিএনপি বলে; আওয়ামীলীগ তেমন শোনে না। কে জানে, একদিন হয়ত আবার আওয়ামীলীগ বলবে, কিন্তু বিএনপি শুনবে না। বহু বছর এই একটি ইস্যু নিয়ে রাজপথে কঠিন সংগ্রাম করা এই আওয়ামীলীগের নিজের শাসনামলে কোথাও কোথাও ভোটের বাক্স যখন বোটের বাক্সে পরিণত হয়, তখন শেখ হাসিনার আধুনিক এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের অনেক উন্নয়নই ম্লান হয়ে যায়। বিব্রত হয় আওয়ামীলীগ। বিব্রত হয় জাতি।

জাতি বিব্রত হয়েছে সব আমলেই। জিয়াউর রহমানের আমলে জাতি কমপক্ষে বিশবার বিব্রত হয়েছে। বিশবারে বিশটি ক্যু হয়েছে। জিয়া বিরোধী ক্যু। ১৯বার জিয়া বেঁচে গেলেও বিশতম বারে বাঁচতে পারেননি। ৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত জিয়াউর রহমান ফাঁকফোকর গলে কোনমতে নিজেকে আবডালে রাখতে পারলেও বিতর্কিত হন নিজের শাসনামলে সংসদে একটি কুখ্যাত বিল পাশ করে। “বিল অব ইনডেমনিটি” নামে এই ঘৃণিত বিলটি পাশ করে তিনি আসামী হয়ে যান ইতিহাসের কাঠগড়ায়। পরিবারসহ বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার বিষয়টির কোন বিচার কেউ কোনদিনও করতে পারবে না বলে সাংবিধানিক এই বিলে স্বঘোষিত অভিযুক্তদের রক্ষা করা হয়। আর সংবিধানকে করা হয় কলুষিত। সংবিধান আর সংবিধান থাকেনি। জিয়াউর রহমান সংবিধানকে “সঙবিধান” বানিয়ে ফেলেন।

সংবিধানকে “সঙবিধান” বানানো সেই বিএনপি আজ সংবিধান নিয়েই মায়াকান্না করছে। মায়াকান্না করছে স্বয়ং সংবিধান প্রণেতাও। গুণী এই মানুষটি আজকাল প্রতিদিন সদাসর্বত্র সংবিধানের কথা বলেন; বলেন  

গণতন্ত্রের কথা। কিন্তু বেশীদিন আগের কথা নয়। ২০০৭ সালে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। ওই অনির্বাচিত সরকার ছিল সংবিধান পরিপন্থী। কিন্তু তখন তিনি ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন। অনির্বাচিত সরকারের সমর্থনে ডঃ কামাল হোসেন ফতোয়া দিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন না হবে ততক্ষণ ক্ষমতায় থাকতে পারবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁর এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার লাইসেন্স পেয়েছিল তৎকালীন অনির্বাচিত সরকার।

আর ইদানীং তাঁর সংগী হয়েছিলেন বি চৌধুরী। বি চৌধুরীর বিকল্পধারা নামটি শুনে আমজনতা এক সময় নড়েচড়ে বসেছিল। ভেবেছিল রাজনীতিতে তিনি বিকল্প কিছু নিয়ে আসবেন। পাল্টে দেবেন রাজনীতির চরিত্র এবং গতিপ্রকৃতি। কিন্তু বাস্তব এসবের ধারেকাছেও না। বাস্তবে এটা পরিস্কার, এটি স্বকল্পধারা; একান্তই তাঁর নিজের ধারা। মানে, বি চৌধুরীর কল্পনার ধারা; “বিকল্পধারা”। তবে তাদের কথাকামে মিলের অভাব থাকলেও যা করেন দেশে বসেই করেন। বিদেশে বসে করেন না।

বিদেশে বসে অনেকেই করেন। একজন তো হরহামেশাই করেন। ইদানীং শুরু করেছেন বিচারপতি সিনহা। তিনি কঠিন লড়াই শুরু করেছেন। কিন্তু বিদেশে বসে কেন? নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকলে দেশে থেকেই লড়াই করতে পারতেন। সরকার যত খারাপই হোক, একজন সৎ সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিতে পারত? আমার মনে হয়, কোথাও না কোথাও ঘাপলা ছিল বলেই তিনি পালিয়েছেন। এতদিনেও তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সুনির্দিষ্ট  অভিযোগের কোনো জবাব দেননি। বিশাল বইয়েও কিছু লেখেননি। নিউইয়র্কের টাইম টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি শুধু বলেছেন, “ষোড়শ সংশোধনীর আগে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না।” এই জবাব যথেষ্ট? তিনি যে নিউজার্সিতে বিলাসবহুল বাড়িতে থাকছেন, তার উৎস কী? এ নিয়ে সময় টিভি সেই বাড়ির ড্রয়িংরুমেই তাঁকে চেপে ধরেছিল। তিনি বলতে পারেননি কিছুই; কেবল এ্যা উহ্হ্ করে তোতলিয়েছেন। মানুষ তোতলামি করেন কখন?

২৩ বছর শাসন করেও মালয়েশিয়ার মাহাথির কখনো তোতলাননি। যখন যেখানে যা বলেছেন স্পষ্ট করেই বলেছেন। শক্তিধর আমেরিকার বিরুদ্ধে উচিত কথা বলতে দ্বিধা করেননি। তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বিরুদ্বে কোনো অভিযোগ কখনো ওঠেনি। কখনো দলীয়করণ, দূর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলার সুযোগ পায়নি। তিনি আধুনিক মালয়েশিয়ার নির্মাতা। একটি সাধারণ রাষ্ট্রকে অসাধারণ রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। তাই তিনি জাতির অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং শ্রদ্ধার পাত্র; এবং এজন্যেই ৯২ বছর বয়সেও জনগণ তাঁকে আবার প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে; দেশের দায়িত্ব দিয়েছে। আর তিনিও মনপ্রাণ ঢেলে দেশ নির্মাণে আবার হাত দিয়েছেন।

আমাদের প্রত্যাশাও ওনার হাতের মত শুধু দুটি হাত। যে হাত কেবলই গড়তে জানে; ভাঙতে জানে না। দরকার ওনার মত একজন শক্ত এবং বলিষ্ঠ নেতা। আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের উজ্জীবিত করবে; অনুপ্রাণিত করবে। আমরা ওনার মত সময়ের উপযোগী নেতা দেখতে চাই। আমরা ধ্বংস হতে চাইনা; উন্নয়ন চাই। চলমান উন্নয়নের ধারাকে আরো উন্নততর করতে চাই। এলোমেলো ওগোছালো বর্তমান সমাজকে বদলে উন্নয়নের ধারাকে আরো উন্নততর করতে চাই। এলোমেলো ওগোছালো গতিহীন সমাজকে পাল্টে একটি সুন্দর সমাজ গঠনে দৃঢ় নেতৃত্ব চাই।

চাই আগামীর রথে চড়ে আলোর পথে যেতে। কোনভাবেই অনাচার আর অন্ধকারে যেতে চাই না। বরং সকল অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। সমাজের আনাচে কানাচে আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিতে চাই। আর উদ্দীপ্ত কন্ঠে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার সমস্বরে বলতে চাই,

আঁধারের যত অনাচার সব, আঁধারকুঞ্জে ঢালো,

দীপ্তশিখার প্রদীপগুলো সমাজগঞ্জে জ্বালো।

আলোকিত সেই সমাজের হবে সব কিছুতেই ভাল,

আগামীর পথে জ্বালাবো মোরা সেই সময়ের আলো।।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com