স্বপ্নের নগরী ভেনিসে একদিন

প্রকাশের সময় : 2018-10-24 17:34:07 | প্রকাশক : Admin
স্বপ্নের নগরী ভেনিসে একদিন

ভেনিস ভেনেতো অঞ্চলে আড্রিয়াটিক সাগরের উপর অবস্থিত একটি প্রধান বন্দর এবং একটি জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষণস্থল। শহরটি ১১৮টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। রাস্তার বদলে এখানে আছে খাল। আর এই খালগুলো ছোট বড় ৪০০ ব্রীজ দিয়ে সংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া খালগুলো দিয়ে ভেনিসবাসীরা চলাচলের জন্য এক-বৈঠাওয়ালা গণ্ডোলা ব্যবহার করে।

১০ বছর আগেও ঢাকা থেকে সাভার যাওয়ার পথে যেমন দেখা যেত পানি, পানি আর পানি। মাঝে মাঝে উঁকি দেয় কিছু কিছু বাড়িঘর। সারা বছরই একটা বন্যার আমেজ। একবারে হুবহু প্রায় সেরকম এলাকা। বিস্তীর্ণ জলাজমি, সমুদ্রের অংশ। একটা কেমন যেন সমুদ্রের ঘ্রাণও পাই। অনেক বড় একটা প্রায় প্রাগৈতিহাসিক ব্রিজ পার হয় আমাদের ট্রেন। পাশ দিয়ে বিলাসবহুল বাস। ব্রিজ পেরোতেই ভেনিসের মূল স্টেশন। আগের দিন রাতে এসে পৌঁছেছি ভেনিস মেস্ত্রেতে। জুরিখ থেকে মিলান হয়ে মেস্ত্রে।

সুন্দর মানুষ, সুন্দর প্রকৃতির ভুবনে ভেনিস আমাদের প্রথম গন্তব্য। ভেনিস নিয়ে অনেক শুনেছি। অনেক কল্পনা। মানুষ কীভাবে থাকে, কীভাবে হাঁটে, কীভাবে চলে, কোনোমতেই মাথায় ঢুকত না। পানির মধ্যে একটা শহর! সেই শহরের মূল স্টেশনটা থেকে বাইরে আসতেই দেখি লোকে লোকারণ্য। বেশিরভাগই তো দেখি আমার বাংলাদেশের ভাই বেরাদার। আমাদের পুরনো ঢাকা যেমন ৫২ গলি ৫৩ বাজারের শহর। ভেনিসও প্রায় তা-ই।

অলিগলি, দোকান, বাজার, পুরনো আদি অকৃত্রিম ছাঁচে যতেœ রেখে দেয়া গায়ে গা লাগানো বাড়িঘর। আর একটা-দু’টো সারি বাড়ির পরই কাকচক্ষু জলের খাল। সমুদ্র থেকে সরাসরি এসে ভেনিস শহর এফোঁড়-ওফোঁড় করে মিলেছে আবার সমুদ্রে। এরকম কয়েকশ’ খাল বা ক্রিকের ফাঁকে ফাঁকেই গড়ে উঠেছে কিংবদন্তির ভেনিস। সেই ভেনিসের পথঘাট ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় পুরোটাতেই বাঙালির প্রাধান্য।

রাস্তার ধারে রংবেরঙের ফলের দোকান বা ভাসমান মুখোশের টং, জমজমাট ওয়ান স্টপ পিৎজা শপ থেকে বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্ট, সবখানেই বাঙালির পদচারণ। এক ঝলক ভেনিস দেখায় মনে হয় এখানে দু’রকম মানুষ। একরকম বাঙালি আরেকরকম টুরিস্ট। সারা বিশ্ব থেকে টুরিস্ট আসে ভেনিস দেখতে আর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী মানুষ ভেনিস দেখায়।

আমরাও সেদিন ভেনিস দেখি। সকাল থেকে গা ভাসানো মিষ্টি রোদ, দূপুরের পর ঝিরঝিরে বৃষ্টি। রোদ বৃষ্টিতে মাখামাখি হয়ে পার হয়ে যাই গলির পর গলি তস্য গলি। ছোট্ট ছোট্ট পুল। কেউ কেউ ৪০০ বছরের পুরনো। খালের ধারে গাছের নিচে অনেকটা জায়গা রেখে একটা পিৎজার দোকান। মালিক দুই বাংলাদেশি ভাই। প্রমাণ সাইজ রিয়েল ইতালিয়ান পিৎজায় লাঞ্চ।

ঘাটে বাঁধা একেকটা গোন্ডলা একাই দোলে ঢেউয়ের তালে। মাঝ দরিয়ার ভেতর কিছু একলা বসতবাড়ি। কি জানি কে থাকে, কারা থাকে দূরে পানির ভেতর ওইসব ঘরে। আকাশ থেকে পানি পড়ে, পায়ের নিচে পানি, নিঃসঙ্গ ওই বসত দেখে আমার চোখেও পানি। ভেনিস মেস্ত্রেতে আমাদের তিন দিনের যাপিত জীবনে আমি সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছি মানুষের নিঃসঙ্গতা। মাইলের পর মাইল লোক নাই, জন নাই। হঠাৎ পথের ধারে একলা একটা রেস্টুরেন্ট। মনে হয় কোন সুদূর থেকে হঠাৎ মাথা তুলে বের হয়েছে। উঠোনজুড়ে ঝরাপাতার দল।

এক বিকেলে ওখানটায় গিয়ে আরেকবার মোচড় দেয় ভেতরটা। অদ্ভুত গাঢ় সবুজ রঙের ধান আর গমের ক্ষেত প্রায় পুরোটা মেস্ত্রে জুড়েই। বরফ গলার পর থেকে আবার বরফ পড়া পর্যন্ত যেটুকু সময় পাওয়া যায় তার মধ্যে তিনটা ফসল উঠবে। ধানগাছ বা গমগাছ তাই সময় পায় খুব কম। চোখের সামনে ধেই ধেই করে বড় হয়ে ওঠে। এইরকম একটা দিগন্তজোড়া ধানের ক্ষেতের কাছে, কুয়ার্তো ডি আলতিনো নামে ছোট্ট একটা রেল স্টেশনের পাশে হাতে গোনা কয়েকটা ভিলা নিয়ে একটা লোকালয়। প্রায় সবগুলো বাড়িই খালি থাকে বেশি সময়। বেশিরভাগই শহুরে লোকের ছুটি কাটানোর ঠিকানা।

এই স্বপ্নের শহর ভেনিস সম্পর্কে প্রবাসী মেজবাউদ্দিন জানান ভেনিসে এবার পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশী। মূলত ভেনিসের আয় দিয়ে অঞ্চলটির খরচ মেটানো হয়। পৃথিবীর সকল দেশ থেকে শহরটি দেখতে আসেন নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। আমরা সানমারকো ঘুরতে ঘুরতে দেখা মেলে লিমা চৌধুরী নামের এক বাংলাদেশীর। বৃত্তশালীর কন্যা লিমা জানান, তিনি এই ভেনিস দেখার জন্যই ঢাকা থেকে এসেছেন। বলেন, ভেনিস না এলে চোখ জুড়ানো এ সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হতাম। সুযোগ পেলে রোমেও যাবেন তিনি।

ভেনিসের ইতিহাস বলে জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য এখানে প্রবাসীরা বসতি গড়ে তুলে। পরে লোক সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং পানির উপর গড়ে উঠে এ শহর। সবশেষ জরীপ অনুযায়ী ভেনিসের লোকসংখ্যা ২ লাখ ৬৫ হাজার। এখানে বিভিন্ন ধরণের রেস্টুরেন্ট এবং নানা ধরনের স্যুভেনিরের দোকানগুলো আকর্ষন করে পর্যটকদের। ইসমাইল হোসেন স্বপন, ইতালি

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com