জার্মান রাষ্ট্রদূতের চোখে বাংলাদেশ!!!
প্রকাশের সময় : 2019-01-03 20:17:43 | প্রকাশক : Admin
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীঃ ঢাকার প্রথম আলো দৈনিকে একটি সাক্ষাৎকার বেরিয়েছিল বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজের (২১ নভেম্বর)। সাক্ষাৎকারটি পাঠ করে বুঝেলিাম, 'সত্যের ঘণ্টা আপনি বাজে।' জার্মান রাষ্ট্রদূত হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন এবং সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'এই সরকার স্বৈরতন্ত্রী সরকার নয়।' প্রথম আলো হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যা প্রচার করতে চায়, তাকে এক কথায় নাকচ করে দিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত যা বলেছেন, তা পত্রিকাটিকে গিলতে হয়েছে।
প্রথম আলো পত্রিকাকে আমি একটা ধন্যবাদ দিই। তারা জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকারটি টুইস্ট করেনি। তবে রাষ্ট্রদূতকে করা প্রশ্নগুলো দেখে মনে হয়, তারা প্রশ্নগুলো এমনভাবে সাজিয়েছিল, যাতে রাষ্ট্রদূতের জবাবকে ব্যবহার করে হাসিনা সরকারকে বিব্রত করতে পারে এবং হাসিনা সরকার সম্পর্কে তারা যা বলে, তা সত্য বলে দাবি করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রদূত পিটার তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও সততার সাহায্যে এমনভাবে প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়েছেন যে, যাতে শেখ হাসিনার সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে এবং তার ভালোমন্দ কাজের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, 'ভারতে দুই বছর (২০০৪-০৬) কাজ করেছি। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া সফর করেছি। বাংলাদেশে আসার আগে যা শুনেছিলাম, তা আসার পরে বদলে গেছে। বাংলাদেশের বিরাট অগ্রগতি ও উন্নয়ন দেখে আমি বরং অভিভূত হয়েছি।' এরপর প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকের আর কোনো কথা থাকে না।
এরপর এসেছিল জাতীয় সংলাপের কথা। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, 'গণতন্ত্র এমন বিষয় নয় যে, যা কেবল সরকারই ম্যানেজ করতে পারে। এটা একটি প্রক্রিয়া, যাতে সব পক্ষ অংশ নেবে। প্রত্যেক রাজনীতিকের ভূমিকা থাকবে। তাহলেই গণতন্ত্র এগিয়ে যাবে।' এই প্রসঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূত বিএনপির অর্থাৎ বাংলাদেশে যারা কথায় কথায় সংলাপ বর্জন, নির্বাচন বর্জনের হুমকি দেয়, তাদের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, 'গণতন্ত্র মানে সর্বদাই সমঝোতা। কোনো এক পক্ষ দাবি করতে পারে না যে, তার পথই শতকরা সঠিক। যদি কেউ দাবি করে থাকে যে, আমি এই প্রক্রিয়ার অংশ নই, আমি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেব না, তাহলে সে নিজেকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করতে পারে না।'
এই সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল, যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে অহরহ চিৎকার (সম্ভবত সুশীল সমাজ) করে, তাদের উদ্দেশ্যেই সম্ভবত তিনি বলেছেন, 'আপনি যদি জার্মানির ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন, পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রে পৌঁছতে জার্মানদের বহু বছর লেগেছে। পিটার ফারেনহোল্টজ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'বাংলাদেশে যা চলছে তা স্বৈরতন্ত্র নয়।'
তিনি খোলাখুলি বলেছেন, 'বাংলাদেশ স্বৈরতান্ত্রিক নয়। স্বৈরতান্ত্রিক দেশে কাজ করা, আমার দেশের অভিজ্ঞতাও আমার আছে।' অর্থাৎ নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি জানেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে না। তার মতে, তিনি ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভ হতে দেখেছেন এবং সংবাদমাধ্যমে সরকারের প্রচুর সমালোচনা হতে দেখেছেন। তারপরও তিনি কী করে বলবেন, এটা স্বৈরতন্ত্রী দেশ?
ডঃ কামাল হোসেন ও সুশীল সমাজের সুশীলরা অনবরত পশ্চিমা দেশগুলোকে বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই, স্বৈরতন্ত্র চলছে। প্রথম আলোও এই প্রচারণায় শরিক। কিন্তু এই প্রচারণা যে কাজে দেয়নি, প্রথম আলোতে প্রকাশিত জার্মান রাষ্ট্রদূতের এই সাক্ষাৎকারটিই তার প্রমাণ। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে পাশ্চাত্যে খারাপ ধারণা থাকতে পারে। কিন্তু তিনিও যে ধারণা নিয়ে এসেছিলেন, বাস্তবে তার বিপরীত অবস্থা দেখে বিস্মিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে পরিপূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত- এ কথা কেউ বলবে না। রাতারাতি তা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এটুকু বলা চলে, হাসিনা সরকার অত্যন্ত বাধাবিঘ্নের মধ্য দিয়ে তা প্রতিষ্ঠার দিকে এগোচ্ছে। তাকে প্রচন্ড লড়াই করতে হচ্ছে সামরিক ও অসামরিক স্বৈরতন্ত্রের লেগাসি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য। এই সরকারকে লড়াই করতে হচ্ছে মধ্য যুগীয় সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে। আর এসব অপশক্তির দ্বারা কবলিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়।