বঙ্গবীর এখন বঙ্গতির!
প্রকাশের সময় : 2019-01-19 11:35:31 | প্রকাশক : Admin
সিমেক ডেস্কঃ বঙ্গবীর এখন বঙ্গতির হয়েছেন। তার কথার তীরের ধারালো তীক্ষ্ণতা সকলের মতো আমাকেও দারুণভাবে বিদ্ধ করেছে। তিনি এমন তীরন্দাজ হয়ে উঠেছেন যে, অর্জুনের চেয়েও অনেক বেশি লক্ষ্যভেদী তীর নিক্ষেপ করে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছেন। ব্যক্তিপ্রতিহিংসা যে এতো ভয়ংকর ও সর্বগ্রাসী হতে পারে, ডঃ কামাল হোসেন ও কাদের সিদ্দিকীকে না দেখলে বুঝতাম না!
আদর্শ, নৈতিকতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন তাদের কাছে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার একমাত্র হাতিয়ার। ডঃ কামাল হোসেন তবু রয়েসয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু কাদের দিদ্দিকী একেবারে কাছাখোলা। তা না হলে যে বঙ্গবন্ধু তাকে সন্তানতুল্য মর্যাদা দিয়ে নিজের ছেলে করে নিয়েছিলেন, তারই কন্যাকে তিনি শুধু ‘ব্যক্তি ইগো’র কারণে এমন করে আক্রমণ করতে পারেন?
আসলে নীতিনৈতিকতা কাউকে শিখিয়ে দেয়া যায় না। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করলেও তিনি নিজের আদর্শবাদী ভাইকে অনুসরণ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যর্থতা তার ইচ্ছেকৃত। তিনি মুক্তিযুদ্ধে এক অনন্য ভূমিকা রেখে সেই তাওয়াতে এখনো পরোটা ভেজে খেতে চাইছেন।
শুরু হয়েছিলো অনেক আগে থেকেই। যদি প্রশ্ন করা হয়, তার আয়ের উৎস কী? ঠিকাদারি? সেই ঠিকাদারি নিয়ে তার কেলেংকারীর ইতিহাস সকলেরই জানা আছে। তার নৈতিকতার স্খলন তো তখন থেকেই শুরু হয়েছিলো। কাদের সিদ্দিকীর মতো এমন মহীরুহ মুক্তিযোদ্ধার কেন ঠিকাদারি করে তাতে কেলেংকারীর আশ্রয় নিয়ে টাকা আয় করতে হবে? মুক্তিযুদ্ধ করলে এ ধরনের কেলেংকারী করা যাবে, এমন কথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কোথায় লেখা ছিলো? আসলে মুক্তিযুদ্ধে তিনি বাঘা সিদ্দিকী হতে পেরেছিলেন শুধু তার একার মেধায় নয়, তার সহযোগিদের বদান্যতায়ও, সেটা তিনি তেমনভাবে কখনো স্বীকার করেননি। নিজেকেই শুধু বারবার মহিমান্বিত করার চেষ্টা করেছেন। এখন তার নানা কিসিমের ডিগবাজি দেখে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে।
মানুষ কতোটা পচলে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যে কাদের সিদ্দিকী ফাঁসির আসামি বিশ্বজিৎসহ আরো অনেককে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন এবং সে কারণে স্বৈরশাসক জিয়া তাকে দেশ থেকে বিতাড়িতও করেছিলো এবং তিনি ১ দশকেরও বেশি ভারতের মাটিতে নির্বাসন গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই তিনি এখন গলায় গামছা আর হাতে ধানের শীষ নিয়ে জোর গলায় বলছেন, “যেখানে জিয়াউর রহমান আছে, আসম রব আছে, কাদের সিদ্দিকী আছে, সেখানে পক্ষ লাগে না, আমরাই স্বাধীনতা।”
কথাটি শুনে হাসবো না কাঁদবো, বুঝে উঠতে পারছি না। তা হলে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হত্যায় বিদ্রোহ এর সবই ছিলো নাটক? আসলে পাকিস্তানি আর্মিতে কাজ করা একজন উর্দিবাজ কী করে আদর্শহীনতা নিয়ে এতো বড় একটা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন, তা নিয়ে তো সংশয় জাগছে! ঠিকাদারি মানসিকতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা যায়? বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করা যায়? দলবদল হতে পারে, মন বদল হতেই পারে; কিন্তু পিতাবদল হতে পারে, জানা ছিলো না। অনেক কিছুই জানতে পারছি কাদের সিদ্দিকীর সৌজন্যে।
তাকে ধন্যবাদ এজন্য যে, অবশেষে তিনি জিয়ার গায়ে স্বাধীনতার বিশাল তকমা এঁটে দিয়েছেন। এবার যদি ধানের শীষে বাতাসও খেলে যায়, তাতেও কাদের সিদ্দিকী যে ইতিহাসের পাতায় শেষপর্যন্ত তার পূর্বমহিমা নিয়েও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন, সেটা ইতিহাসের যারা সাধারণ পাঠক, তারাও নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন। শাব্বাস কাদের সিদ্দিকী। আদর্শহীনতার সিপাহশালার, এই সত্য স্বীকারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।