বিএনপির সবচেয়ে বড় ভুল

প্রকাশের সময় : 2019-01-19 11:53:05 | প্রকাশক : Admin

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী: একাদশ সংসদে ঐক্যফ্রন্টের মাত্র সাতজন (বিএনপির ৫ জন এবং গণফোরামের দু’জন) সদস্যের জয়লাভ বিস্ময়কর; কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই গণনা ছিল ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী না হলেও নতুন সংসদে ষাট সত্তরটি আসন পেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল গঠন করতে পারবে।

তারপরও নির্বাচনে বিএনপি প্রায় নির্মূল হয়ে যাওয়ার এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। এটা কি জালিয়াতি করে অথবা বিরোধী জোটের উপর হামলা-মামলা চালিয়ে করা হয়েছে? ঐক্যফ্রন্ট এখন এই অভিযোগ করছে। কিন্তু উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর আগে বিএনপির কি উচিত নয় আয়নায় নিজেদের চেহারাটা দেখা? তাদের অবশ্য এতটা শোচনীয় পরাজয়ের আশঙ্কা ছিল না। তারা নিজেদের কৌশলের গোলে নিজেরা পরাজিত হয়েছে। এই ব্যাপারে আমার মতো এক নগণ্য সাংবাদিকের বিশ্লেষণটি কি তারা একবার বিবেচনা করে দেখবেন?

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও আন্দোলন চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি বহু আগেই ধরে নিয়েছিল ডিসেম্বর নির্বাচনে তাদের জয় লাভ অসম্ভব। সুতরাং চক্রান্তের পথেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে, ষড়যন্ত্রের পথে না গিয়ে তারা যদি ধৈর্য ধরে জনগণের কাছে যেতেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন ভুল ত্র“টির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করতেন, তা হলে তো দীর্ঘসূত্রী হলেও পরিণামে ফল দিত। বিএনপি সে পথে কখনও যায়নি। প্রচুর অর্থ ব্যয়ে বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ করে সরকারের বিরুদ্ধে সত্যাসত্য প্রচার চালানো এবং ভারতসহ বৃহৎ শক্তির কাছে ধর্ণা দিয়ে তারা সরকার উচ্ছেদ করার কাজে তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছেন।

সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য গণসংযোগের কাজটি তারা করেননি। মিথ্যা প্রচার চালিয়েছেন এবং সরকার উচ্ছেদে বিদেশীদের সাহায্য নিয়ে সফল হবেন ভেবেছেন। নির্বাচন বর্জন ও সংসদ বর্জনের রাজনীতি করেও তারা সফল হননি। এবারেও ডঃ কামাল হোসেনকে ‘হায়ার’ করে তাদের জোটের নেতৃত্বে এনে মৃতদেহে প্রাণসঞ্চার করা সম্ভব হয়নি। খালেদা জিয়াকে জেলমুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনার একটি দুর্বল আন্দোলনও গড়ে তুলতে না পারার ব্যর্থতা দলের তৃণমূল পর্যন্ত নেতা ও কর্মীদের মধ্যে যে হতাশা সৃষ্টি করেছে, তা থেকে বিএনপি আর নতুন করে মনোবল তৈরি করতে পারেনি।

বিএনপি সবচাইতে বড় ভুল করেছে ডঃ কামালকে হায়ার করে এনে জোট পুনর্গঠন করে। ডঃ কামাল নির্বাচনে বারবার পরাজিত একজন ব্যর্থ নেতা। তার উপর পরাজয়-ভীতি থেকে নিজে নির্বাচনে দাঁড়াননি। অর্থাৎ ঐক্যফ্রন্ট ছিল একটি হেডলেস চিকেন। জনগণ জানে না, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে কে নতুন সরকার গঠন করবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবে? এশিয়ায় রাজনীতিতে নেতা ও নেতৃত্ব একটা বড় ভূমিকা পালন করে। ঐক্যফ্রন্টে নেতা ও নেতৃত্ব এর কোনটাই ছিল না। সেনাপতিবিহীন সৈন্যেরা যেমন যুদ্ধ জয় করতে পারে না, তেমনি ঐক্যফ্রন্টও পারেনি।

মনোবলবিহীন বিএনপি চাঙ্গা হয়ে দাঁড়াতে পারলে একটা বড় ধরনের ফাইট দিতে পারত তো। তারা পারেনি। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কেও শেষ পর্যন্ত দোমনা ছিল। অধিকাংশ নির্বাচন-কেন্দ্রে তারা প্রচার চালায়নি। দেয়ালে পোস্টার পর্যন্ত সাঁটেনি। এটা ঢাকায় পর্যন্ত ঘটেছে। এত ব্যাপকভাবে ঘটেছে যে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল বিএনপি কি সত্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়, না চায় না? ব্যারিস্টার মওদুদ ও বিএনপির আরেক নেতার যে টেলিফোন-আলাপ ফাঁস হয়েছে তাতে দেখা যায় মওদুদসহ বিএনপির একটা অংশ শেষ মুহূর্তেও নির্বাচন বর্জনের পক্ষে। দোদিল বান্দার তো বেহেশ্ত পাওয়ার কথা নয়। বিএনপিও পায়নি। আমার বিশ্লেষণে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জোটের এত বড় পরাজয়ের কথা ছিল না। তারপরও তা ঘটেছে। এ জন্য বিএনপির নীতি ও নেতৃত্বই দায়ী বেশি। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে, তারেক রহমানের এবারের রণকৌশল ছিল নির্বাচন বর্জন করে নয়, নির্বাচনে ঢুকে তাকে বানচাল করা। নির্বাচনে নিজেরা ব্যাপকভাবে পরাজিত হওয়ার ব্যবস্থা করে প্রমাণ করা আওয়ামী সরকারের নেতৃত্বে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে না এবং হয়নি। সুতরাং তাদের মিত্র বিদেশী শক্তিগুলোর উচিত, আওয়ামী লীগের উপর চাপ দিয়ে তিন মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। 

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com