একই ক্লাসে পড়েন বাবা-মা-ছেলে
প্রকাশের সময় : 2019-03-13 12:05:27 | প্রকাশক : Admin
সিমেক ডেস্কঃ গ্রামের পিচ রাস্তা ধরে পাশাপাশি স্কুলমুখো তিনটে সাইকেল; একাদশ শ্রেণির তিন সহপাঠী বাবা, মা আর ছেলে! চেনা ছবিটার সঙ্গে সড়গড় হয়ে গিয়েছে ভারতের নদিয়ার হাঁসখালির মামজোয়ান গ্রাম।
পড়াশোনায় দাড়ি টেনে সেই কোন ছেলেবেলায় রুজির টানে স্কুলছুট হয়ে গিয়েছিলেন বলরাম মণ্ডল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনায় ইতি টেনে দিয়েছিলেন স্ত্রী কল্যাণীও। মাধ্যমিক পাশ করা হয়নি। পড়াশোনার ইচ্ছেটা তবুও কোথায় যেন ‘ঘুন পোকার মতো’ তাড়া করত তাঁদের।
মধ্য চল্লিশে পৌঁছে মণ্ডল দম্পতি তাই রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে মাধ্যমিক পাশ করেন বছর দুয়েক আগে। এ বছর ছেলে বিপ্ল−বের সঙ্গে তারা তিন জনেই উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়া।
নদিয়ার ধানতলার আড়ংঘাটা হাজরাপুর হাইস্কুলে কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন ওরা। বিষয় বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, শিক্ষাবিজ্ঞান এবং ইতিহাস। স্কুল খুব কাছে নয়, বাড়ি থেকে প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরে।
বলরামবাবু জানান, ‘‘পড়া আর হয়ে ওঠেনি। তবে কষ্টটা ঘুন পোকার মতো তাড়িয়ে বেড়াতো তাকে।’’ স্ত্রী কল্যাণীকে জিজ্ঞাসা করায় তিনিও জানান, পড়ার ইচ্ছে রয়ে গিয়েছে তারও। এবার তাই এক সঙ্গে ফের নতুন করে পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করেছেন তারা।
বলরামবাবু বলেন, ‘‘আগের চেয়ে আর্থিক অবস্থা একটু ফিরেছে। পরিবারের সবাই এক সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে শেষতক তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, এক সঙ্গে পড়ব।’’
কল্যাণীদেবী জানান, ‘‘সংসারে তিনটি মাত্র মানুষ। তিন জনেই স্কুলে থাকি। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে তবে খাওয়া। তবু কী যে তৃপ্তি বলে বোঝাতে পারব না!’’ তাদের পড়শিরাও এ ব্যাপারে বেশ সহমর্মী। পাশে রয়েছেন শিক্ষকেরাও।
বলরামবাবু বলেন, ‘‘স্যারেরা সব সময় উৎসাহ দেন। অসুবিধা হচ্ছে কিনা, খোঁজ নেন। তাদের মুখ চেয়ে ভাল করে পাশ করতেই হবে।’’ রাতে স্বপরিবারে পড়তে বসেন তারা। পড়া বুঝতে অসুবিধে হলে সাহায্য করে ছেলে বিপ্লব। বিপ্লবের তিন গৃহশিক্ষকও মা-বাবাকে সাহায্য করেন। বাবা-মার সঙ্গে স্কুলে যেতে কেমন লাগে বলতেই বিপ্লব জানান, ‘‘একই ক্লাসে পড়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনও বিষয় আলোচনা করে পড়লে সহজে পড়া বোঝা যায়।’’ স্কুলে এসে বয়সের ব্যবধান ভুলে যান মণ্ডল-দম্পতি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিতকুমার হোতা বলছেন, ‘‘ওই দম্পতি ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন। কিন্তু, ওদের পড়ার আগ্রহ দেখে ভর্তি করে নিয়েছি। এখন দেখছি সে দিনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না।’’
স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, ছেলের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতিযোগিতাও রয়েছে বেশ। পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে থাকলেও ছেলেকে বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরে ছেলেকে পিছনে ফেলতে চান বলরামবাবু।
তারা জানান, পড়া ধরলে এক সঙ্গেই হাত তোলেন ওরা তিন জন। একরকম প্রতিযোগীতা করেই সবসময় তারা পড়েন। কল্যাণীদেবী বলছেন, ‘‘দেখি না, কে বেশি নম্বর পায়, বাবা ছেলে নাকি আমি!’’
একই ক্লাসে পড়েন বাবা-মা-ছেলে
সিমেক ডেস্কঃ গ্রামের পিচ রাস্তা ধরে পাশাপাশি স্কুলমুখো তিনটে সাইকেল; একাদশ শ্রেণির তিন সহপাঠী বাবা, মা আর ছেলে! চেনা ছবিটার সঙ্গে সড়গড় হয়ে গিয়েছে ভারতের নদিয়ার হাঁসখালির মামজোয়ান গ্রাম।
পড়াশোনায় দাড়ি টেনে সেই কোন ছেলেবেলায় রুজির টানে স্কুলছুট হয়ে গিয়েছিলেন বলরাম মণ্ডল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনায় ইতি টেনে দিয়েছিলেন স্ত্রী কল্যাণীও। মাধ্যমিক পাশ করা হয়নি। পড়াশোনার ইচ্ছেটা তবুও কোথায় যেন ‘ঘুন পোকার মতো’ তাড়া করত তাঁদের।
মধ্য চল্লিশে পৌঁছে মণ্ডল দম্পতি তাই রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে মাধ্যমিক পাশ করেন বছর দুয়েক আগে। এ বছর ছেলে বিপ্ল−বের সঙ্গে তারা তিন জনেই উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়া।
নদিয়ার ধানতলার আড়ংঘাটা হাজরাপুর হাইস্কুলে কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন ওরা। বিষয় বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, শিক্ষাবিজ্ঞান এবং ইতিহাস। স্কুল খুব কাছে নয়, বাড়ি থেকে প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরে।
বলরামবাবু জানান, ‘‘পড়া আর হয়ে ওঠেনি। তবে কষ্টটা ঘুন পোকার মতো তাড়িয়ে বেড়াতো তাকে।’’ স্ত্রী কল্যাণীকে জিজ্ঞাসা করায় তিনিও জানান, পড়ার ইচ্ছে রয়ে গিয়েছে তারও। এবার তাই এক সঙ্গে ফের নতুন করে পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করেছেন তারা।
বলরামবাবু বলেন, ‘‘আগের চেয়ে আর্থিক অবস্থা একটু ফিরেছে। পরিবারের সবাই এক সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে শেষতক তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, এক সঙ্গে পড়ব।’’
কল্যাণীদেবী জানান, ‘‘সংসারে তিনটি মাত্র মানুষ। তিন জনেই স্কুলে থাকি। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে তবে খাওয়া। তবু কী যে তৃপ্তি বলে বোঝাতে পারব না!’’ তাদের পড়শিরাও এ ব্যাপারে বেশ সহমর্মী। পাশে রয়েছেন শিক্ষকেরাও।
বলরামবাবু বলেন, ‘‘স্যারেরা সব সময় উৎসাহ দেন। অসুবিধা হচ্ছে কিনা, খোঁজ নেন। তাদের মুখ চেয়ে ভাল করে পাশ করতেই হবে।’’ রাতে স্বপরিবারে পড়তে বসেন তারা। পড়া বুঝতে অসুবিধে হলে সাহায্য করে ছেলে বিপ্লব। বিপ্লবের তিন গৃহশিক্ষকও মা-বাবাকে সাহায্য করেন। বাবা-মার সঙ্গে স্কুলে যেতে কেমন লাগে বলতেই বিপ্লব জানান, ‘‘একই ক্লাসে পড়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনও বিষয় আলোচনা করে পড়লে সহজে পড়া বোঝা যায়।’’ স্কুলে এসে বয়সের ব্যবধান ভুলে যান মণ্ডল-দম্পতি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিতকুমার হোতা বলছেন, ‘‘ওই দম্পতি ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন। কিন্তু, ওদের পড়ার আগ্রহ দেখে ভর্তি করে নিয়েছি। এখন দেখছি সে দিনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না।’’
স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, ছেলের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতিযোগিতাও রয়েছে বেশ। পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে থাকলেও ছেলেকে বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরে ছেলেকে পিছনে ফেলতে চান বলরামবাবু।
তারা জানান, পড়া ধরলে এক সঙ্গেই হাত তোলেন ওরা তিন জন। একরকম প্রতিযোগীতা করেই সবসময় তারা পড়েন। কল্যাণীদেবী বলছেন, ‘‘দেখি না, কে বেশি নম্বর পায়, বাবা ছেলে নাকি আমি!’’