একজন নিভৃতচারী সাদা মনের মানুষ গণি মিয়া

প্রকাশের সময় : 2019-03-13 12:15:49 | প্রকাশক : Admin
একজন নিভৃতচারী সাদা মনের মানুষ গণি মিয়া

সিমেক ডেস্কঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝুঁকির মধ্যে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না করে খাইয়েছেন। বিভিন্ন অপারেশনে গোলাবারুদ কাঁধে তুলে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন গন্তব্যে। ১১নং সেক্টরে থেকে নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রশিক্ষণও। তারপরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কুড়িগ্রামের উলিপুর শহরের পরিচিত মুখ আব্দুল গণি মিয়ার (৬৭) আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। এজন্য তার ক্ষোভ বা হতাশাও কিছুই নেই।

দেশের প্রয়োজনে আত্মনিয়োগ করা হাজারো সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার ভীড়ে নিভৃতে সময় কাটছে এই সহজ-সরল মানুষটির। গণি মিয়া দিনে কাপড়ের দোকানের সামান্য কর্মচারী। আর রাতে গোপনে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তাছাড়া তিনি একজন ভালো সংগঠকও।

গণি মিয়ার পরিচিতরা জানান, দেশ স্বাধীনের আগে ভারতসহ বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলে তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। ভালো ফুটবল খেলতেন। ক্রীড়ামোদী ও মুক্তিযোদ্ধা নিভৃতচারী এই মানুষটি জীবনের সায়াহ্নে এসে দিনে দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। আর রাতে নিজ উদ্যোগে উলিপুর বড় মসজিদে (মসজিদুল হুদা) করছেন পরিচ্ছন্নতার কাজ। এই কাজ করে খুশি গণি মিয়া।

গণি মিয়া জানান, প্রতিদিন রাত ৯টার পর চলে আসেন মসজিদ কমপ্লেক্সে। ঝড়-বৃষ্টি- শৈত্যপ্রবাহ তাকে আটকে রাখতে পারে না। এখানে এসে হাতে তুলে নেন ঝাড়ু। নিজে ক্রয় করা সামগ্রী দিয়ে মসজিদের অজুখানা, প্রসাবখানা, অপরিষ্কার ড্রেনসহ ক্যাম্পাস পরিষ্কার করেন। এখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাজ করে বাসায় গিয়ে গোসল সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবেই ৭/৮ বছর ধরে এই সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। গণি মিয়া জেলার উলিপুর উপজেলার পৌর এলাকার নাড়িকেলবাড়ি কাজিরচক গ্রামের বাসিন্দা। মরহুম আব্দুল জলিল মিয়ার পূত্র তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে ৬ সন্তানের জনক। ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সবাই যার যার সংসারে ব্যস্ত। গণি মিয়া উলিপুর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় দুই যুগ ধরে। এছাড়া স্থানীয় লালদল ক্রীড়া সংগঠনের একজন সদস্য।

তিনি জানান, ছোট বেলা থেকেই ছিলেন ডানপিটে স্বভাবের। খেলাধুলার প্রতি ছিল অসম্ভব টান। দেশ স্বাধীনের পূর্বে ভারতের মাইনকার চর, বকবান্দাসহ কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলে পরিচিতি লাভ করেন। এখনো ভালোবাসেন ফুটবলকে। স্থানীয়ভাবে লালদল ক্রীড়া সংগঠনের সাথে জড়িত। দুস্থ খেলোয়াড়দের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যে ভাতা প্রতি বছর দেয়া হয় তা তিনি পেয়েছেন কয়েকবার।

গণি মিয়া শহরের কে পি সাহা এন্ড বস্ত্রালয় কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকানের কাজ শেষে তিনি ছুটে যান মসজিদুল হুদায়। সেখানে থাকা বিরাট অজু খানা, প্রসাব খানা, ড্রেনসহ মসজিদ ভবনের বাইরের অংশ তিন ঘন্টারও বেশি সময় ধরে নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করেন। পরে গভীর রাতে বাড়িতে গিয়ে গোসল সেরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এই তার প্রতিদিনের জীবন রুটিন।

গণি মিয়া জানান, মুক্তিযুদ্ধেরসময় দেশ সেক্টরের   মাতৃকাকে মুক্ত করতে ১১ নংপ্রশিক্ষক নজরুল ইসলামের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও ওই সময় জেলার উলিপুর ও চিলমারীতে বিভিন্ন অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ বহন এবং ক্যাম্পে রান্নার কাজ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন।

উলিপুর মসজিদুল হুদা’র সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব দেলোয়ার হোসেন জানান, গণি ভাই যে কাজটা করেন সেটা মেথর বা সুইপারের করার কথা। দীর্ঘদিন থেকে নিজ উদ্যোগে অত্যন্ত আনন্দের সাথে কাজটুকু করেন তিনি। ঝড় বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি শ্রম দেন। উনি কখনোই এ জন্য পারিশ্রমিক চাননি। আল্ল−াহর ঘরের খেদমত করাকে তিনি নিজের কাজ হিসাবে বেছে নিয়েছেন।

সাবেক উলিপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম ডি ফয়জার রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি গণি মিয়ার নাম অর্ন্তভূক্ত করে কেন্দ্রে প্রেরণ করেছেন। যুদ্ধকালীন তার ভূমিকার জন্য ১১ নং সেক্টরের প্রশিক্ষক নজরুল ইসলাম ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের প্রত্যয়নপত্র তার রয়েছে। -সুত্রঃ ইউএনবি

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com