ইসলাম বই পাঠের উৎসাহ দেয়
প্রকাশের সময় : 2019-03-27 18:12:48 | প্রকাশক : Administration
আমিনুল ইসলামঃ দুটি অক্ষরের সমন্বয়ে ছোট্ট একটি শব্দ বই। যার দুই মলাটের ভেতর শুয়ে আছে পৃথিবী, পৃথিবীর মতো আরও অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্র। কালো অক্ষরের সেলাই করা জীবনের কথা, সফলতার কথা, ভালোলাগার কথা, ভালোবাসার কথা, জীবন ঘনিষ্ঠ আরও কতো কথাই যে ফুল হয়ে ফুটে থাকে বইয়ের পাতায় পাতায়। কি নেই বইয়ে?
অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনার সব উপায়ই তো বই পই পই করে বলে দেয়। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে বইকে প্রাণহীন মনে হয়। আদতে বই প্রাণহীন নয়। পাঠক যখনই বইয়ের মুখোমুখি হয়, তখনই বই হয়ে ওঠে জীবন্ত এক রাহবার। বলে দেয় পৃথিবীর গত হওয়া কাহিনী। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সম্ভাবনার মিনার। বই মানুষের অবসরের সঙ্গী। মানুষের চিত্তবিনোদনের নির্মল উপাদান। বই হচ্ছে জ্ঞানের প্রতীক। বইয়ের সঙ্গে যার যত বেশি সম্পর্ক, তার জ্ঞানের গভীরতা ততোই প্রখর।
আর জ্ঞান হলো আল্লাহ প্রদত্ত এক অফুরন্ত নিয়ামাত, যা জ্ঞানী ও মূর্খদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য নির্ণায়ক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ (সূরা জুমার : ০৯) প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তার চিন্তা-চেতনা ও অভিজ্ঞতার বিবরণ লিখনীর মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছানোর বিভিন্ন চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আর সেই চেষ্টা-প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় সফলতার জোয়ার এনে দেন জোহানেস গুটেনবার্গের অক্ষরযন্ত্র। যখন থেকে (১৪৪০-৫০) এ অক্ষরযন্ত্রের আবির্ভাব হয়েছে, তখন থেকেই শুরু হলো বইয়ের দুরন্ত পথচলা। অতীত-বর্তমান, দূর-দূরান্তের দেশ আর কালের গণ্ডির দুস্তর ব্যবধান দূর হয়ে গেল বইয়েরই সেতুবন্ধনে।
মানবজীবনে বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা বই হচ্ছে মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ মাধ্যম। অকৃত্রিম বন্ধু। যেমন তেমন বন্ধুই নয়, একশত মানুষ বন্ধুর চেয়ে একটি ভালো বই অতুলনীয় ভালো বন্ধু। মানুষ বন্ধুর দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও বইয়ের দ্বারা তার সম্ভাবনা নেই। মনুষ্য বন্ধুত্ব ততক্ষণই অটুট থাকে, যতক্ষণ দু’জনের মাঝে বিনিময়ের আদান-প্রদান থাকে। কিন্তু বই তার সম্পূর্ণ বিপরীত। বই শুধু দিয়েই যায়, বিনিময় প্রত্যাশা করে না।
সময়ের সর্বশেষ্ঠ বন্ধু হলো বই। এছাড়াও বই মানুষের ঘুমন্ত মনুষত্বকে জাগিয়ে তোলে। জাগিয়ে তোলে সুপ্ত প্রতিভা। করে নৈতিকতায় উজ্জীবিত। বই মানুষের মন-মননকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে পৌঁছে দেয় জীবনের কাঙ্খিত মাঞ্জিলে। জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তিদের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আলোকিত করতে যে মাধ্যমটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব রেখেছে, সে মাধ্যমটির নামই হচ্ছে বই।
তাই তো রুশ ঔপন্যাসিক ও দার্শনিক টলস্টয় মানবজীবনে বইয়ের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। বই, বই এবং এছাড়াও বই। পরিশেষে ওমর খৈয়ামের সেই চিরন্তন বাণীটিই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বই একটি অনন্ত যৌবনা। যদি তা তেমন বই হয়।’