আশার আলো ‘নিরাপদ পথ খাবার’ ভ্যান
প্রকাশের সময় : 2019-03-27 18:41:09 | প্রকাশক : Administration
ওয়াজেদ হীরা: বেল, পেঁপে, মাল্টা কিংবা আঙুর- এসব মৌসুমি ফলের জুস বিক্রি করেন কামাল হোসেন। বয়স ষাটের কাছাকাছি হলেও নিরাপদ খাবার হওয়ায় তার জুস খেতে উপচে পড়ে মানুষ। দিন শেষে বিক্রির টাকা কখনও দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। এ দিয়েই চলছে কামালের সংসার। আর অসংখ্য ধুলাবালি আক্তান্ত রাজধানীতে একটু হলেও ভালমানের পথখাবার পাচ্ছে মানুষ।
শুধু কামাল নন রাজধানীতে সচিবালয়ের আশপাশে তিনটি পয়েন্টে ভ্যানে পাওয়া যায় এই ‘নিরাপদ পথখাবার’। এজন্য তিন পথখাবার বিক্রেতাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের হাতে ভ্যানগাড়ি ও তৈজসপত্র তুলে দিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ ভাল খাবারের প্রতি শহুরে মানুষের আগ্রহ বাড়িয়েছে। খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভ্যানটি দেখতে সুন্দর, নান্দনিক, ঘরের আদলে তৈরি, যার চারপাশ কাঁচ দিয়ে ঢাকা। ভেতরের খাবার বাইরে থেকে দেখা যায় কিন্তু ময়লা লাগার সুযোগ নেই। ভ্যানের সামনে লেখা, নিরাপদ পথখাবার/ সৌজন্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, খাদ্য মন্ত্রণালয়। গাড়ির ভেতরে প্রত্যেক বিক্রেতা ঢাকা সিভিল সার্জনের দেয়া স্বাস্থ্য সনদও ঝুলিয়ে রেখেছেন। রাজধানীবাসীকে স্বাস্থ্যসম্মত পথখাবার তুলে দিতে প্রাথমিক প্রকল্প হিসেবে গত বছর এই তিন বিক্রেতাকে নিরাপদ পথখাবারের গাড়ি দেয়া হয়।
এর মধ্যে কামাল হোসেন জিরো পয়েন্ট, বাদশা শরীফ ওসমানী উদ্যানের গেট ও আব্দুল খালেক সচিবালয় লিঙ্ক রোডে (প্রেসক্লাবের দিকে) ভ্যানে এসব খাবার বিক্রি করেন। এসব ভ্যানে মৌসুমভেদে বিভিন্ন ধরনের ফল, পিঠা, হালিমসহ বিভিন্ন পথখাবার বিক্রি করা হয় বলেও জানান বিক্রেতারা। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভ্যান ও তৈজসপত্র মিলে ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। দোকানদারদের কাছ থেকে তিন কিস্তিতে ১০ শতাংশ হারে সাড়ে ৭ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। বিক্রেতারা নিরাপদ খাদ্য পরিবেশন করছে কিনা, তা তদারকি করা হচ্ছে। রাজধানীর অনেকেই শখ করে ফুটপাথের বা ‘পথখাবার’ খেয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে এই পথের খাবার খেতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে অফিস-আদালতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষের মধ্যাহ্নভোজের ভরসা এই রাস্তার খাবার। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০ লাখ মানুষ ঢাকায় পথখাবার খেয়ে থাকেন। ’১৭ সালে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পথখাবার নিয়ে গবেষণা করে। ওই গবেষণায় উঠে এসেছে রাজধানীতে দৈনিক ৬০ লাখ মানুষের পথখাবার খাওয়ার তথ্য। ফুটপাথের খাবার বিক্রেতাদের মানসম্মত খাবার ঠিক রাখতে সরকার একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছিল। তখন জাতীয় গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার এক’শ খাবার বিক্রেতাকে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ফুটপাথের সব বিক্রেতাকে এই প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা থাকলেও সবাইকে দেয়া হয়নি।
আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবির গবেষকরা বিক্রেতার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দেখেছেন অধিকাংশ খাবারে প্রচুর জীবাণু রয়েছে। এর প্রধান কারণ বিক্রেতাদের অসচেতনতা। পথখাবার যারা বিক্রি করেন তাদের বসার কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই। তারা ফুটপাথে বসছেন। ফলে ধুলাবালি, রোগ-জীবাণু সহজেই মিশে যাচ্ছে। পাশাপাশি হাত পরিষ্কার না করেই তারা খাবার তৈরি ও বিক্রি করছেন। আইসিডিডিআরবির গবেষণায় এসেছে, ফুটপাথের ৫৫ ভাগ খাবারেই জীবাণু রয়েছে। আর ৮৮ ভাগ বিক্রেতার হাতেই এসব অস্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে।
তবে সাধারণ পথখাবারের চেয়ে এই বিক্রেতারা একটু ব্যতিক্রম। তাদের হাতে যেমন সব সময় গ্ল−াভস্ পরা থাকে তেমনি ভ্যানের ভেতরে যে সব খাবার বিক্রি হয় সবই পরিচ্ছন্ন। পথখাবার বিক্রেতা আব্দুল খালেক খাদ্য মেলার সামনে বলেন, আমি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে নানা খাবার বিক্রি করছি। কিন্তু এই গাড়ি নেয়ার সময় ট্রেনিং নিয়ে বুঝছি আগে আমরা কত ভুল করছি। এখন আর হেই আগের ভুল করতে চাই না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা সংশ্লি−ষ্ট এলাকায় যাচাই-বাছাই করে যারা দীর্ঘদিন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের মধ্যে তিনজনকে এই পথখাবারের গাড়ি দেন। তবে বিক্রেতারা বলছেন, গাড়ি পাওয়ার পর থেকে খুব একটা বসতেই পারছেন না তারা। কারণ হিসেবে বলেন, রাস্তায় বিভিন্ন সময় পুলিশ বা অন্যরা উঠিয়ে দেয়। তখন বিক্রি না করে থাকতে হয়। আমাদের গাড়ি বসালে পাশাপাশি অন্যান্য গাড়িও বসাতে হয় তাই যখন উঠিয়ে দেয় সবাইকে ওঠায়। বিক্রেতারা দাবি করে বলেন, যেহেতু সরকার আমাদের ট্রেনিং দিয়েছে, আমাদের যদি নির্দিষ্ট করে দিত যে আমাদের ওঠানো যাবে না তাহলে অন্যরা আরও বেশি সচেতন হয়ে যেত। -জনকণ্ঠ