স্বপ্নের থার্ড টার্মিনাল
প্রকাশের সময় : 2019-04-11 16:58:44 | প্রকাশক : Administration
আজাদ সোলায়মানঃ রাজধানী নিকুঞ্জের লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে শাহজালালের দিকে যেতে বাঁ দিকের বিস্তীর্ণ বাগানে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। দিনরাত কানে আসে জঙ্গল পরিষ্কার ও মাটি সমতল করার টুকটাক শব্দ। রাতে চোখে পড়ে পশ্চিম দিগন্তের অজস্র তারকারাজির ন্যায় বিমানবন্দরের আলোকরশ্মি। নিকুঞ্জের প্রান্ত থেকে উত্তরে শাহজালালের গোলচত্বর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ দিগন্ত বরাবর এভাবেই প্রস্তুত করা হচ্ছে বহুল কাঙ্খিত স্বপ্নের থার্ড টার্মিনাল।
ক্রমবর্ধমান এভিয়েশন খাতের বিপরীতে আগামী বিশ বছরের চাহিদা মাথায় রেখে নেয়া হয়েছে শাহজালাল সম্প্রসারণের তৃতীয় প্রকল্প। দ্রুততম সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু ও শেষ করার টার্গেট নিয়ে ইতোমধ্যে ডাকা হয়েছে দরপত্র। তার আগেই শুরু হয়েছে প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকা বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার, বিভিন্ন স্থাপনা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ। সবার আগে বেসরকারী হেলিকপ্টার হ্যাঙ্গার সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়।
২ লাখ ২৬ হাজার বর্গফুটের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য যতটুকু জমি প্রয়োজন সেটা নির্মাণোপযোগী করে তোলার জন্য কাজ অনেকটাই শেষের দিকে। এরই মধ্যে ড্রয়িং-ডিজাইন চূড়ান্ত করে ডাকা হয়েছে দরপত্র। এ প্রকল্পের জন্য বিশ্বের নামীদামী ২২ বিমানবন্দর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। এর আগে ২০১৫ সালে বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। ২০১৭ সালের ১১ জুন এ প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ (বেবিচক)।
প্রকৌশল বিভাগের মতে-থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগবে চার বছর। চলতি বছরের একেবারে শেষদিকে টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে। সে হিসেবে ২০২২ সালের দিকে নতুন টার্মিনালটি ব্যবহারে জন্য চালু হতে পারে। জানা গেছে, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে দরপত্র আহ্বান করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ (সিএ)। সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া যেতে পারে জুলাইয়ের শেষদিকে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের কাজ শুরুর টার্গেট নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বেবিচক প্রকৌশল বিভাগ।
স্বপ্নের এই টার্মিনাল নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়ার পর থেকে সময় গণনা শুরু হবে। আধুনিক এই টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সরকারের বৃহৎ এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। মোট টাকার মধ্যে এই প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে দুই হাজার ৩৯৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। বাকি অর্থের পুরোটাই দেবে জাইকা। সেভাবেই এগোচ্ছে সবকিছু।
বহুল প্রতীক্ষিত এই থার্ড টার্মিনাল হবে অত্যাধুনিক মডেলের। তিন তলাবিশিষ্ট স্টীল ও কংক্রিটের কম্পোজিট স্ট্রাকচার ভবনে থাকবে সব কটি ওয়ানওয়ে এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট। রাজধানীর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে যারা আসবেন তারা নিকুঞ্জের লা মেরিডিয়ান পয়েন্ট থেকে উঠে যাবেন টাার্মিনাল কানেক্টিং সড়কে। যেখানে থাকবে টার্মিনালের এন্ট্রি গেট। তিন তলা থেকে বহির্গামী যাত্রীরা এস্কেলেটরে নেমে যাবেন দ্বিতীয় তলায়, যেখানে থাকবে বহির্গামী ও এ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ও চেকইন কাউন্টার।
আবার রাজধানীর উত্তর প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীরা বর্তমান বলাকার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবেশ করে উড়াল সেতু দিয়ে চলে যাবেন টার্মিনাল ভবনে। একইভাবে টার্মিনাল থেকে বের হবার সময় একই আন্ডারপাস ও ওভারপাস দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে নির্বিঘ্নে চলে যাওয়া যাবে। থার্ড টার্মিনালে যাতায়াতে যানজটের বিন্দুমাত্র কারণও থাকবে না। এমনভাবে ট্রাফিক সিস্টেম সুযোগ রাখা হয়েছে যা কেবল চোখেই দেখার মতো, বলার মতো নয়। অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন এই টার্মিনাল হবে বিশ্বের অন্যতম মডেলের।
এতে থাকবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ৫৬টি চেকইন সেন্টার, ১৬টি এ্যারাইভাল লাগেজ বেল্ট, আধুনিক ভিআইপি ভবন, ট্যাক্সিওয়ে, থাকবে মেট্রোরেল কানেকশন। যাত্রী ও দর্শনার্থীর আসা-যাওয়ার পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক এসকেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট, রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবনসহ বহুতল গাড়ি পার্কিংও থাকবে। তিনতলা টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যে রাখা হবে নান্দনিকতার ছোঁয়া। থার্ড টার্মিনাল ভবনের আয়তন হবে দুই লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। আর নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভিভিআইপি কমপ্লেক্স হবে পাঁচ হাজার ৯০০ বর্গমিটার আয়তনের।
জানা গেছে, আগত যাত্রীদের চাপ সামলাতে ও যানজট এড়াতে বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়কেও আসবে পরিবর্তন। বিমানবন্দরের সঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করতে সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে।