আপন তিন বোন ব্যারিস্টার

প্রকাশের সময় : 2019-05-09 19:22:13 | প্রকাশক : Administration
আপন তিন বোন ব্যারিস্টার

চট্টগ্রামের বনেদি পরিবারের সন্তান প্রিয়াংকা আহসান, ফাতিমা ওয়ারীথাহ আহসান ও প্রিয়া আহসান। তারা আপন তিন বোন। তিনজনই ব্যারিস্টার। যা বাংলাদেশে বিরল। নানা আব্দুল মালেক উকিল ছিলেন প্রখ্যাত আইনজ্ঞ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বাবা আবদুল্লাহ আল আহসান, দেশের শিল্পখাতের অন্যতম আইকন। ছোটবেলা থেকেই নেহেরু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আইনজ্ঞ নানার গল্প শুনে বড় হওয়া তিন বোন বাবার অনুপ্রেরণায় ব্যারিস্টারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাবার স্বপ্ন পূরণে এক এক করে তিন বোন পাড়ি জমান লন্ডনে।

তাদের ভাষায় ‘প্রথম থেকেই বাবার কনসেপ্ট ছিল- তিনজনই ব্যারিস্টার হবে। দেয়ার ইজ নো আদার অপশন। এ কারণে আমরা কখনও অন্য কোনো অপশন চিন্তা করিনি।’ ব্যারিস্টারি পাশ করে দেশে এসে

বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিন বোন শুরু করেছেন আইন পেশা। প্রখ্যাত আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলামের চেম্বারে কাজ শুরু করা বড় বোন ব্যারিস্টার প্রিয়াংকা আহসান আইন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। পাশাপাশি শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান।

সেভ দ্যা চিলড্রেন, হোপ ফর চিলড্রেন, অ্যাকশন এইডসহ বিভিন্ন এনজিওতে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মেঝ বোন ব্যারিস্টার ফাতিমা আহসান আইন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে শুধু দেশেই না বিশ্বজনীন ভাবে আইন প্র্যাকটিস করে তার মেধা কাজে লাগাতে চান। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত এনজিও’র মাধ্যমে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যেতে চান তিনি। অপরদিকে, সংবিধান প্রণেতা ডঃ কামাল হোসেনের চেম্বারে কাজ শুরু করা ছোট বোন ব্যারিস্টার প্রিয়া আইন পেশায় লেগে থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যেতে চান। সমাজের অবহেলিত-দরিদ্র মানুষের জন্য কাজও করতে চান তিনি।

এক বিছানায় তিন বোনের বেড়ে উঠা, ব্যারিস্টারি পড়ার দিনগুলো, তিন বোনের খুনসুঁটি, ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে এই প্রথম গণমাধ্যমের সঙ্গে নিজেদের জবানীতে কথা বলেছেন তারা।

আমাদের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা। আমার প্রপিতামহের নাম ছিল আব্দুল লতিফ মাস্টার। তিনি একজন শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি আরবি, ইংরেজি এবং বাংলা তিন ভাষায় পারদর্শী শিক্ষাবিদ ছিলেন। সেই খ্যাতি অনুসারে তৎকালীন ওই এলাকার মানুষ তাকে আব্দুল লতিফ মাস্টার নাম দিয়েছিলেন। তারই পরম্পরায় আমাদের দাদা আহমেদ কবির চৌধুরী স্কুল কলেজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দেন। আমার দাদা গহিরা স্কুল, গহিরা মাদ্রাসা ও আরো বিভিন্ন অবৈতনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।

আমাদের পরিবারে শিক্ষাকে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয়। দাদা এবং দাদার বাবা দুইজন এই সমাজসেবা করে রাউজানে অনেক উন্নয়ন করেন এবং শিক্ষার চর্চা এনে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের বাবা-চাচারাও শিক্ষাকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেন। আমার বাবা-চাচারা সাত ভাই। আমার বড় জেঠা আব্দুল্লাহ আল মামুন একজন শিক্ষাবিদ ছিলেন। আমার মেঝ জেঠা আব্দুল্লাহ আল হারুন। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর এবং আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এম পি ছিলেন।

আমার মেঝ জেঠা  University of Science and Technology (USTC)- এর প্রো ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। আমার সেজো জেঠা আব্দুল্লাহ আল হান্নান একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। চতুর্থ জেঠা আব্দুল্লাহ আল নোমান একজন মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা। এরপর জেঠা  আব্দুল্লাহ আল রায়হান একজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনিও একজন শিক্ষাবিদ।

ষষ্ঠ আমার বাবা আব্দুল্লাহ আল আহসান, আব্বু পেশাগতভাবে একজন শিল্পপতি। আব্বুর হাতে গড়া ইন্ডাস্ট্রিজ ৭০ ও ৮০’র দশকের। সেই সময়ে বাংলাদেশে তেমন কোনো বিজনেস আইকন ছিল না। Cement factory, Cotton Spinning Mill, Oil mill সহ বেশ কিছু ফ্যাক্টরি বাবার হাতে গড়া। তিনি আমার মেঝ জেঠা আব্দুল্লাহ আল হারুনের পদাংক অনুসরণ করে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাবা ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।

অনেক ব্যস্ত থাকা স্বত্ত্বেও জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এর অনুরোধে ইউ.এস.টি.সি কে সংগঠন গড়ে তোলার জন্যে মনোনিবেশ করেন এবং সাত বছর তিনি বিনা পারিশ্রমিকে USTC-র প্রো ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে কাজ করেন। মানুষের জন্য কাজ করা আব্বুর এক ধরনের নেশা বলতে পারেন। ছোট চাচা আব্দুল্লাহ আল ফরমান একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

নানার বাড়ি নোয়াখালী। নানা আব্দুল মালেক উকিল প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন। তিনি পাকিস্তান আমলে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্পিকার ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। আম্মুরা পাঁচ বোন দুই ভাই। আমাদের দুই মামা রাজনীতিতে সক্রিয়। ছোট মামা বাহার উদ্দিন, বিটিভির ডিজি ছিলেন। আমাদের বাবা-মা দুইজনেরই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আমার মা আমেনা বেগম, তবে বেবি নামে পরিচিত। রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে ও বৌ হওয়াতে মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন এবং সব আগলে রাখেন একজন আদর্শ নারী হিসেবে।

আমরা তিন বোন এক ভাই। ভাই সবার বড়। পড়াশুনা করেছে ইন্ডিয়াতে। এমবিএ করেছে। এখন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করছে। আর আম্মু সবচেয়ে বড় কাজটা করে। মূলত আজকে আমাদের যেখানে দেখছেন এটার পেছনে অবদান অনেকটা আমার মায়ের। আম্মু সারাজীবন আমাদেরকে আগলে ধরে রেখেছেন। আমার মা ল’ইয়ার না। কিন্তু তার নলেজ আমাদের থেকে অনেক ভাল। চৎবংবহপব ড়ভ সরহফ অসাধারণ।

তিন বোন এক সঙ্গে আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ। পরিকল্পনার মধ্যে আমরা সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য কাজ করতে  চাই। আইনি সহযোগিতা দিতে চাই। আমাদের সমাজে বেশির ভাগ নারী অনেক অবহেলিত এবং তারা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্তু অনেকে লজ্জায় বলতে পারে না। তাদেরকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আমি তাদের জন্য তাদের জীবন সহজ করতে চাই। আমি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে সক্রিয় থাকতে চাই। -মেহেদী হাসান ডালিম; রাইজিংবিডিডটকম

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com