পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশ! সত্যি কি বদলাবে স্বপ্নের বাংলাদেশ!!

প্রকাশের সময় : 2018-04-12 12:21:43 | প্রকাশক : Admin
পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশ!  সত্যি কি বদলাবে স্বপ্নের বাংলাদেশ!!

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীনঃ  শুভ নববর্ষ! বছর ঘুরে আবার এলো নতুন বর্ষ। বাংলা নববর্ষ। সমস্ত বাঙালীর জন্যেই বাংলা বছরটা কঠিন আবেগ ও ভালবাসার। এ জাতির সামান্য যা কিছু একান্তই নিজের, বাংলা সালটি তার মধ্যে অন্যতম। বাংলা সাল; বিজ্ঞান সম্মত একটি অত্যন্ত গোছানো সাল। পৃথিবীর অধিকাংশ জাতিরই নিজের সাল বলতে কিছু নেই, বছর নেই। বহুল প্রচলিত ইংরেজী বছর, ইংরেজী সালেই চলে। কিন্তু এখানে আমরা ব্যতিক্রম। আমাদের অনেক কিছুই না থাকতে পারে, কিন্তু গর্ব করার মত একটি সাল আছে! বাংলা সাল, বাংলা ক্যালেন্ডার!!

শুধু কি তাই? বাংলা বর্ণমালা সমৃদ্ধ আমার ভাষাও আছে। অনেক জাতিরই তা নেই। ফিলিপিন, মালয়েশিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ার নিজস্ব ভাষা আছে। কিন্তু নিজস্ব বর্ণমালা নেই। তারা ইংরেজী বর্ণমালায় নিজের ভাষা লিখে। কিন্তু আমরা বাংলায় লিখি, বাংলায় কথা বলি, বাংলায় গাই। বাংলা আমার ভাষা, আমার মাতৃভাষা। আমার প্রাণ, আমার অহংকার। কী চমৎকার এই ভাষা, এই সুর! মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়! খুব শান্তি পাই আমার শোনিমের কন্ঠে বাংলায় গান শুনতে; আমি বাংলায় ভালবাসি, আমি বাংলাকে ভালবাসি। আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি!!

ভালবাসার এই বাংলা আছে বলেই আমরা মনেপ্রাণে বাঙালী। রূপে লাবন্যে, বন্যে কিংবা অরন্যেও আমরা বাঙালী। দেশে কিংবা বিদেশেও বাঙালী। দোষে গুণে আমরা পুরোপুরি বাঙালী। সর্বোপরি আমরা বাংলাদেশী বাঙালী। বাংলা বলেই আমরা বাংলাদেশী। পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন দেশের নামের ভেতর “দেশ” শব্দটি নেই। বাংলাদেশ নামের শব্দটিও ব্যতিক্রম। কেমন মায়া মায়া লাগে! শব্দটার সাথেই মিশে আছে একটি স্বপ্ন। বাংলাকে, বাঙালীকে সর্বোপরি বাংলাদেশকে নিয়ে একটা মায়াবী স্বপ্ন। আমরা সর্বদা স্বপ্ন দেখি একটি সুখী সুন্দর এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশের।

লক্ষণীয় যে, স্বপ্নের সেই সোনালী দেশটি দিন বদলের হাওয়ায় বদলে যাচ্ছে। বদলানো বিষয়টি প্রত্যাশিত। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো পজিটিভলি বদলাচ্ছে কি না। একটু পরখ করা যাক। বদলে যাওয়া দেশে হোটেল রেঁস্তোরার ছড়াছড়ি। সেগুলোতে ঢুকে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। কিন্তু খাবারের মান এখনো প্রকৃত মানদন্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। অবাক লাগে পোশাক ও খাবারের বৈপরীত্যে। ডিজিটাল দুনিয়ায় আরব বিশ^ থেকে পোশাক নিলেও খাবার নেওয়া হয়েছে আমেরিকা ইউরোপ থেকে। পোশাক অনুযায়ী কাবাব বা গড়গড়া সেবনের কথা হলেও খাচ্ছি কিন্তু ক্যাপচিনো কিংবা ইতালিয়ান পিৎজা।

আমরা বদলাচ্ছি বটে। কিন্তু দেশের কৃষ্টি এবং কালচারকে ধরে রেখে বদলাচ্ছি না। বাইরের যা কিছুই পাচ্ছি, লুফে নিচ্ছি। মান বিচার করছি না। সবার আগে নিচ্ছি যা কিছু ক্ষতিকর, দৃষ্টিকটু কিংবা নিষিদ্ধ। আমাদের সময়ে কাঙ্খিত প্রেমিকাকে পাবার জন্যে কত ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে হতো। সামান্য একটা চিঠি পৌঁছাতে মাস লেগে যেত। বইয়ের মলাটের ভিতর ভরে দশচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে তারপর পৌঁছতো। আর ধরা পড়লেই জীবন কাহিল করে ছাড়তো। লজ্জাশরমের ভয়তে আমরা গর্তে লুকাতাম। বর্তমানে নারীপুরুষের মেলামেশা বা দেখাশোনা সহজতর হয়েছে বটে, কিন্তু লজ্জাশরম হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তনের হাওয়ায় রাস্তাঘাটে, বাসে কিংবা ট্রেনে বেড়েছে বেলাল্লাপনা। আর ভালবাসা দিবস! এ তো সাতখুন মাফের দিবস!!

এসবে বিদেশে কোন বিধি নিষেধ নেই। আমাদের এখানে ছিল এবং থাকা দরকার। সমাজ তথা দেশ বদলানোর অজুহাতে এসব তো উম্মুক্ত হবার বিষয় নয়। আমি অনেক কিছু বদলাতে পারি। কিন্তু কৃষ্টি কিংবা কালচার তো বদলানোর বিষয় নয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এদেশে সবার আগে বদলাতে শুরু করে কৃষ্টি এবং কালচার। ঐ দুটো বদলানোর একটা নগ্ন প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায়। একদিন বিদেশে থাকা দূর আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়েছি। অনুষ্ঠান ঢাকায়। বেচারা ইউরোপে থাকে। কথাবার্তা কিংবা ব্যবহারে এর কিছুটা বোঝাও যায়। আমাকে পেয়ে বিপদেই পড়ে গেল। সার্ভিস দেয়ার জন্যে পাগল হয়ে গেল। বারবার টেবিলে এসে স্যরি বলছে রঙিন পানীয়ের ব্যবস্থা করতে পারেনি বলে।

আমি মুচকী হেঁসেছি। কিছু বলিনি। তার মুখের উপর বলতে পারিনি, এত ব্যতিব্যস্ত হবার কিচ্ছু নেই। গেল তেইশ বছরে তেইশ ফোঁটা নিষিদ্ধ পানীয়ও গিলি নাই। হার্ড ড্রিঙ্কস তো দুরের কথা, পেপসি-সেভেন আপ না হলেও আমার চলে। বিদেশে আছি, টাকার পেছনে ছুটছি; কথাটা সত্যি। কিন্তু তাই বলে তথাকথিত এলিট হবার চেষ্টা কোন কালেও করিনি। মদ খাইনা বলে কারো কারো কাছে আমি আনকালচারড হতে পারি। কিন্তু নিজের কাছে, নিজের পরিবার তথা স্বীয় স্বত্ত্বার কাছে বাঙালী কালচারে অভ্যস্ত থাকার চেষ্টা করছি; স্রোতে গাঁ ভাসিয়ে বদলে যাইনি।

বদলে যাওয়ার হিড়িকে দেশের অনেক কিছুই বাড়ছে। শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে বুদ্ধিজীবির সংখ্যাও। দেশে এখন বুদ্ধিজীবিতে ঠাসা। ঘরে ঘরে, চ্যানেলে চ্যানেলে বুদ্ধিজীবি। এটা সমস্যা না। সমস্যা হলো, জাতির জীবনে এত বুদ্ধিজীবি অথচ একজনও দিক নির্দেশক নেই। সবাই কেবল মুখেমুখে বুদ্ধি জাহির করে। একজনও প্রয়োগ করে না। দেশে এত মোফাচ্ছেরে কোরআন; এত তাফসিরকারক। অথচ একজনও কোরআনের তাফসির নিয়ে বই লেখেননি। তাফসিরের কোন লেখক আমাদের দেশে নেই। যারা আছেন সবাই অনুবাদক। বিদেশী তাফসিরের বইকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন কেবল। 

আমরা বদলাচ্ছি, কিন্তু কেমন যেন ভিন্নভাবে, একটু ভুলভাবে বদলাচ্ছি। মজার ব্যাপার হলো, বদলায়নি সাধারণ মানুষ। তারা ঠিক আগের মতই আছে। আমার কাছে দেশের সাধারণ মানুষেরাই অসাধারণ। তারা দিনরাত কাজ করে। প্রচন্ড পরিশ্রম করে কাজ করে। আগেও কাজ করতো, এখনো করে। তারা যেমনি কলে কারখানায়, ক্ষেতে খামারে কাজ করে; তেমনি রাজনীতিতেও কাজ করে। রাজনীতিকদের সহযোগীতা করে। সহযোগীতা না করলে এই দেশে রাজনীতিই তো থাকতো না। মিছিল হতো না, মিটিং হতো না। তারা বুঝে হোক, না বুঝে হোক, এখনো সামান্য ক’টি টাকার বিনিময়ে এসবে অংশ নেয় বলেই না রাজনীতিবিদদের সমাবেশ কিংবা মিছিল এত জমজমাট হয়।

তবে এখন তেমন মিছিল মিটিংও হয় না। দেশের রাজনীতিও বদলাচ্ছে। রাজনীতিতে এখন জনগণ ততটা ফ্যাক্টর নয়। এখন মিছিল সমাবেশ ততটা না করলেও চলে। কালেভদ্রে করলেই হয়। এত মিডিয়া থাকতে ওসবের দরকারই বা কি! মিডিয়াতে কথা বললেই তো হয়। নেতারা অবিরত তাই করে যাচ্ছে। যা মনে চায়, তাই বলে যাচ্ছে। যেখানে যা মানায় না, বা বলা যায় না, তাও বলছেন। জনগনের নাড়ীর স্পন্দন নেতারা তেমন বোঝেনও না, বোঝার দরকারও পড়ে না। সব দলই কথা বলে ১৬ কোটি জনতার দোহাই দিয়ে। ওদের একপক্ষেই যদি সব জনগণ থাকে তাহলে বিপক্ষের লোকজন কারা?

অবশ্য বদলে যাওয়া দেশে বিপক্ষ বলতে কিছু এখন অবশিষ্ট নেই। সবাই একপক্ষ; আওয়ামীলীগ। উপরে উপরে আওয়ামীলীগ; পোশাকআষাকেও আওয়ামীলীগ। সবখানে কেবলই আওয়ামীলীগ। কোথায়ও নেই বিএনপি। বিএনপি হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এই দলটির নির্লিপ্ততা কিংবা নিস্ক্রিয়তা চোখে পড়ার মত। তৃণমূল পর্যায়ে বিপুল জনপ্রিয়তা থাকার পরেও বিএনপির এভাবে চুপসে যাওয়া রাজনীতির জন্যে সাংঘাতিক রকমের দূর্ভাগ্যের।

ভবিষ্যত বোঝার ক্ষমতা নেই বলে আবোলতাবল চিন্তা আমার মাথায় আসে। কোন কুলকিনারা খুঁজে পাই না। তাই ভয়ও করে। যদিও ভয়কে জয় করে এগিয়ে যাবার বহু রেকর্ড বাঙালী বহুবার দেখিয়েছে। অন্তত ইতিহাস তো তাই বলে।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com