স্বপ্নের সেতু স্বপ্নের শহর

প্রকাশের সময় : 2019-06-26 20:06:33 | প্রকাশক : Administration

পদ্মায় টলটলে নতুন পানির ঢেউ। এরই মাঝে ছন্দে ছন্দে বসছে পাইল। কাজ করে চলেছেন সাত হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। শুধু এই পাইলই নয়, ভারি ভারি নানা যন্ত্র অবকাঠামো নির্মাণের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে দেশী-বিদেশী কর্মীদের ব্যস্ততা। আর নদীর ধারে মানুষের কোলাহল, চরে কৃষকের চাষবাস, রাখাল গরু নিয়ে ছুটছে এমন দৃশ্য এখানে নিত্যদিনের।

রাতের বেলাও থামছে না এ কর্মযজ্ঞ। দুপুরের সংযোগ সড়কসহ প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু এলাকার সবখানেই কাজের ছোঁয়া। এর বাইরে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, নদী শাসন আরও কয়েক কিলোমিটার এলাকায় চলছে কাজ। পদ্মা সেতুর কাজ এখন বিশেষ এক পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে একটি একটি করে সেতুর ২০০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতুর রোডওয়ে স্ল্যাব স্থাপনও শুরু হয়েছে।

পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে; এভাবে চলতে থাকলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, এখন আর প্রকল্পে কোন চ্যালেঞ্জ নাই। এখন যত তাড়াতাড়ি প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করা যায় সে তৎপরতা চলছে। দিন দিন দৃশ্যমান হচ্ছে পদ্মা সেতু। ক্রমেই স্বপ্ন থেকে মূল সেতু নির্মাণে একের পর ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখতে পেয়ে সবার চোখে মুখে এখন আনন্দের ঝিলিক। পদ্মার দুই পাড়ের বাসিন্দাদের খুশির শেষ নেই।

একই সঙ্গে পদ্মার দুই পাড়ের বাসিন্দাদের আনন্দ বাড়ল। সেতু নির্মাণের মহাকর্মযজ্ঞ নিয়ে তাদের উৎসাহের কমতি নেই। একদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে, অপরদিকে সেতু ঘিরে পদ্মার দুই পাড়ে গড়ে উঠছে নগরায়ন। নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন আর অট্টালিকা। এক কথায় পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই পাড়ের চিত্রপট পাল্টে যাচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের চেহারা।

এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলায় দুই পাড়ের বাসিন্দারা নতুন নগরায়ন গড়ে তুলছেন। তাদের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হচ্ছে। সেতু ঘিরে পদ্মার দুই পাড়ের বাসিন্দারা নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। নগরায়নের বাতায়নে পদ্মার দুই পাড়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন হাট-বাজার। নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠছে দুই পাড়েই।

পদ্মা সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এবং মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এসব জায়গার দাম বাজার মূল্য অপেক্ষা উচ্চমূল্য পাওয়ায় অনেকেই পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্লট পান, সেখানে পাকা ভবন তুলে বসবাস করছেন। কেউ কেউ আবার আশপাশের শহরগুলোতে পরিবার নিয়ে বসতি গেড়েছেন।

পদ্মা সেতু ঘিরে সেতুর দুইপ্রান্তে নানা অবকাঠামো গড়ে উঠবে। নদী তীরে পার্ক, শপিং মল, বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র, উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পাশাপাশি আবাসিক এলাকাও গড়ে উঠবে। সেতুর উত্তর প্রান্তে লৌহজংয়ে মাওয়া ও এর আশপাশের মানুষের পাশাপাশি সেতুর অদূরের চরাঞ্চলের মানুষজনও আশায় বুক বাঁধছেন।

পদ্মাতীরে পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে হচ্ছে এই সেনানিবাস। এই সেনানিবাসের কর্মকান্ড এখন চলছে পুরোদমে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তেও থাকছে সেনা ক্যাম্প। বর্তমানে দু’পাড় মিলে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডে কর্মরত প্রায় ২ হাজার সেনা সদস্য। মাওয়া প্রান্তের দোগাছি ১ নম্বর সার্ভিস এরিয়ার ভেতরে এখন সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। ওপারের কুতুবপুর ২ নম্বর সার্ভিস এরিয়ার ভেতরে আরেকটি ক্যাম্প। দুটি সেনা ক্যাম্পে প্রায় এক হাজার করে সেনা সদস্য রয়েছে।

পদ্মা সেতুর জন্য জমি দেয়া ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হয়েছে দুই পাড়ে সাতটি। পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২৮শ’ পরিবার বসবাস করছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে রয়েছে পাঁচটি স্কুল এবং পাঁচটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। রয়েছে ছয়টি নান্দনিক মসজিদ। রয়েছে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত ২৮শ’ পরিবারকে এখানে পুনর্বাসন করেছে। তাই মানুষের সমাগমও বেড়েছে।

পদ্মাতীরের জনপদের এখন চেহারা পাল্টে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নির্মাণ হয়েছে নান্দনিক ঘরবাড়ি। এখানে মানুষগুলো শান্তি-শৃঙ্খলায় বসবাস করছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা জমি দিয়েছেন তারা জমির ন্যায্য মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা পেয়েছেন। আবার পেয়েছেন এমন চমৎকার বাড়ি। উন্নত হয়েছে তাদের জীবনমান। তাই বদলে যাচ্ছে সব কিছু।

পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তে থানা ভবন কয়েক মাস আগে স¤পন্ন হয়ে গেছে। তবে জনবলের অভাবে থানা দুটি এখনও চালু হয়নি। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম (বার) জানান, চলতি মাসেই থানা ভবন দুটি পুলিশ বুঝে নিবে। এরপর নিজস্ব জনবল নিয়েই চালাবে থানা দুটি। তবে নতুন করে জনবল নেয়ার চেষ্টা চলছে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ ভবন দুটি নির্মাণ করেছে। ছয় তলা ফাউন্ডেশনের ওপর চার তলা করে নান্দনিক ডিজাইনে পদ্মার দুপ্রান্তে অর্থাৎ মাওয়া ও জাজিরায় থানা ভবন দুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রাণী জাদুঘর করা হয়েছে পদ্মা সেতুর দোগাছি সার্ভিস এরিয়ায়। দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে জাদুঘরটি। ৫ হাজার প্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ জাদুঘরে। জাদুঘরে কাঁচের বোতলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এর মধ্যে রয়েছে বিষধর গোখরাসহ বিভিন্ন ধরনের সাপ, কুনোব্যাঙ, টিয়া, হুতুমপেঁচা, কাক, বালিহাঁসসহ কয়েক প্রজাতির পাখি। ২০১৬ সালের ফেব্র“য়ারি থেকে জাদুঘরের কাজ শুরু হয়। এটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার কথা রয়েছে। -মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, জনকণ্ঠ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com