বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার শস্যভাণ্ডার
প্রকাশের সময় : 2021-06-14 10:17:34 | প্রকাশক : Administration
পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি। কিন্তু মিঠা পানির পরিমাণ খুবই কম। তাই পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা সারা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীতে প্রাপ্ত মিষ্টি পানির প্রায় শতকরা ৭০ ভাগই ফসল উৎপাদনে কৃষকরা ব্যবহার করেন। শিল্প-কলকারখানা ব্যবহার করা হয় ২০ ভাগ এবং শতকরা ১০ ভাগ মিষ্টি পানি ব্যবহার করা হয় গৃহস্থলীর কাজে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের সবুজ বুকের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে হাজারো ছোট বড় নদী। কেউ বলে নদ-নদী বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড। কেউবা বলে ফুসফুসের মতো কাজ করে। যে যাই বলুক নদ-নদীর গুরুত্ব অনুধাবন করতে শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নাই। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ এই দেশটির নদ-নদী বিধৌত পলিমাটি দিয়ে নিজেকে করেছে উর্বর, ফুল ফল আর ফসলে করেছে দেশকে সমৃদ্ধ। নদী গ্রামীণ জনপদ কে কর্মচঞ্চল রাখতে একদিকে যেমন অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে তেমনি গতিময় শহুরে জীবনকে আরও বেগবান করতে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন এর ফলে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে অন্যদিকে অপরিশোধিত ও পয়ঃবর্জ্য ফেলে ভয়াবহ পানি দূষণ করা হচ্ছে। গত এক যুগে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হলেও প্রতি বছর বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতির কারণে দেশের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক হিসেবে পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরী। পানি সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং বছরব্যাপী বহমানতা বজায় রাখতে পারলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা শুধু নয় বিপুল পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন উদ্বৃত্ত রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন, নদী তীর ভাঙন প্রতিরোধ, ব-দ্বীপ উন্নয়ন, ভূমি পুনরুদ্ধার প্রভৃতি বিষয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যারেজ, রেগুলেটর, স্লুইস, খাল, বেড়ী বাঁধ, রাবার ড্যাম, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও খাল খনন-পুনঃখনন করে সেচ, জলাবদ্ধতা নিরসন, বন্যা প্রতিরোধ, নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ, ভূমি পুনরুদ্ধার বিষয়ে সেবাসমূহ প্রদান করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রুলস অব বিজনেস এর অ্যালোকেশন অফ বিজনেস অনুযায়ী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রযোজ্য বিষয়গুলো হলো-
১। নদী এবং নদী অববাহিকার উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ;
২। সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, নিষ্কাশন এবং নদী ভাঙ্গন ক্ষেত্রে সাধারণ নীতি প্রণয়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রদান
৩। সেচ, বন্যা-পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থাপনা, বন্যার কারণ এবং বন্যার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়-ক্ষতি সম্পর্কিত সকল বিষয়াবলী;
৪। নদীর অববাহিকা প্রকল্প এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মৌলিক এবং ফলিত গবেষণা পরিচালনা;
৫। বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা;
৬। সেচ বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক কমিশন এবং কনফারেন্স;
৭। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নদী ড্রেজিং, খাল খনন এবং রক্ষণাবেক্ষণ। খাল খনন কর্মসূচির আওতায় খালের উপর পানির নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ।
৮। ভূমি সংরক্ষণ, নিষ্কাশন এবং জলাবদ্ধতা বিষয়ক কার্যাবলী।
৯। পানি সংরক্ষণ, জলাধার নির্মাণ, বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ বিষয়ক কার্যাবলী।
১০। ভূমি পুনরুদ্ধার, মোহনা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কার্যাবলী।
১১। লবণাক্ততা ও মরুকরণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অন্যতম।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধান সংস্থা যা পানি সম্পদ উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট অর্ডার নং ৫৯ তদানীন্তন ইপি ওয়াপদা "পানি উইং" নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা সৃষ্টি করেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৫ বছর মেয়াদী খসড়া পরিকল্পনায় স্বল্প মেয়াদী (৮ বছর) ২৪০টি মধ্য মেয়াদি (১৫ বছর) ৮৮টি এবং দীর্ঘ মেয়াদী (২৫ বছর) ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নাধীন যোগ্য প্রকল্পের ৮০ ভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ও সহিষ্ণু সমৃদ্ধশালী ব-দ্বীপ গড়ে তোলাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিবেচনায় সার্বিকভাবে কৃষি ও শিল্প, অর্থনীতি, মৎস্য, বনায়ন, পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশকে সমন্বিত করে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে দেশের প্রথম শতবর্ষ মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ অনুমোদন করেন। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ তে অঞ্চল ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নে অঞ্চল ভিত্তিক পানি বিজ্ঞান এবং পানি সম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থা প্রধান ভূমিকা পালন করছে। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ সামগ্রিক উদ্দেশ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারের ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পানি সম্পদ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ এবং তা বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এর মূল উদ্দেশ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য নির্মূল এবং মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। এ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান-২১০০ জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, এবং ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসকে চ্যালেঞ্জ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর ৬টি অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে 'Flexible and adaptive approach' অনুসরণ করে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেচ ধর্মী প্রতিটি প্রকল্পে সেচ সম্প্রসারণ, ফসল উৎপাদন, এরিয়া বৃদ্ধি এবং ফসল উৎপাদনের নিবিড়তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। টেকসই ও নির্ভরযোগ্য ফসল উৎপাদনের জন্য আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সেচ। সেচের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে সেচের পানির প্রধান দুইটি উৎস
১। ভূপৃষ্ঠস্থ পানি
২। ভূগর্ভস্থ পানি
ভূপৃষ্ঠস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লবণ ও রাসায়নিক দ্রব্য দ্রবীভূত থাকে। এসব লবণ ও রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমাণ বেশি হলে তা গাছের জন্য ক্ষতিকর। রাসায়নিক পদার্থ গুলোর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, কার্বনেট, বাই কার্বনেট, সালফেট ইত্যাদি। সোডিয়াম কার্বনেট যৌগ পানিতে বেশি পরিমাণ থাকলে ফসল তা সহ্য করতে পারে না। সেচের পানি ঘোলা হলে তা মাটির রন্ধ্র বন্ধ করে দিয়ে মাটি শক্ত করে ফেলে। সেচের পানিতে বিষাক্ত আর্সেনিক, ক্যালসিয়াম, সীসা ইত্যাদি থাকে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। সেচকৃত পানির গুণাগুণ যাচাইয়ের জন্য নিম্ন বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করা হয়। যেমন:
১। পানিতে দ্রবীভূত লবণের মোট ঘনমাত্রা;
২। সোডিয়াম এর ঘনত্ব (ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর সাপেক্ষে),
৩। কার্বনেট ও বাই কার্বনেট এর ঘনমাত্রা;
৪। বোরনের পরিমাণ।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ষাটের দশক হতে বাস্তবায়িত ৮১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৩৯৯টি প্রকল্প হলো- এফসিডি ( Flood control and drainage) এফসিডিআই (Flood control, drainage and irrigation) প্রকল্প। অবশিষ্ট প্রকল্পগুলো হলো- নদী ভাঙন রোধ, শহর রক্ষা বাঁধ, ভূমি পুনরুদ্ধার এবং ড্রেজিং সহ বিভিন্ন ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত ছোট-বড় ৩৯৯টি FCDI ও FCD প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকা হলো সর্বমোট ৬৪.৯৬ লাখ হেক্টর জমি। উক্ত প্রকল্পসমূহ ষাট দশক হতে দেশের বিভিন্ন এলাকার বাস্তবতার নিরিখে মাঠ পর্যায়ের চাহিদা মোতাবেক বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশনব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাপাউবো অবকাঠামো প্রস্তুত করে আসছে। ষাটের দশক হতে বাপাউবো বাস্তবায়িত উল্লেখিত প্রকল্পসমূহ সময়ের আবর্তে পুরাতন ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় অবকাঠামো সমূহের পুনর্বাসন এর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ফলে এফসিডি ও এফসিডিআই (FCD/FCDI) প্রকল্প সমূহের উদ্দেশ্য অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্পকে কার্যকরী ও টেকসই করার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাপাউবো পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিগত সময়ের বিভিন্ন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় ১২৭টি প্রকল্প/স্কিমকে পুনর্বাসন করা হয়। উক্ত ১২৭টি প্রকল্প পুনর্বাসন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধার আওতায় আনয়ন করা সম্ভব হয় এবং সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে বলে পুনর্বাসন প্রকল্প সমূহ সেচ প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এযাবত বাপাউবো কর্তৃক ৫২টি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে কৃষিতে প্রত্যক্ষ বা সরাসরি সেচ সুবিধা প্রদান করা সম্ভবপর হয়ে উঠেছে। ১২৭টি সেচ ধর্মী প্রকল্পের মধ্যে বায়ান্নটি সেচ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত।
২০১৯-২০ সালে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র 1১২৭টি সেচ ধর্মী প্রকল্পে তিনটি ফসল মৌসুমে ( খরিফ-২, রবি ও খরিফ-১) ২৪.৮৪ লাখ হেক্টর জমিতে ফসল ও ১০.৮২ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। গৃহীত কার্যক্রম এর বিপরীতে যথাক্রমে ২৪.১০ লাখ হেক্টর জমিতে ফসল চাষাবাদ ও ৯.৯৬ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। এ সমস্ত প্রকল্পে প্রধান ফসল হিসেবে ধান, গম ও ভুট্টা চাষাবাদ হয়ে থাকে। এছাড়াও তেল ও ডাল জাতীয় ফসলসহ বিভিন্ন শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষাবাদ হয়ে আসছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন অবকাঠামো থাকার ফলে ফসল চাষ আবাদের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হওয়ার ফলে শস্য বহুমুখীকরণ এর পাশাপাশি শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা ফসল তথা জাতীয় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
ক্রম নং |
প্রকল্পের সংখ্যা |
আওতাভুক্ত এলাকা |
সেচ যোগ্য এলাকা |
ফসল |
সেচ |
নীট সেচকৃত জমি |
|||
লক্ষ্যমাত্রা |
সাফল্য |
লক্ষ্যমাত্রা |
সাফল্য |
লক্ষ্যমাত্রা |
সাফল্য |
||||
০১ |
১২৭ |
১৮৬৯৪৭২ |
৯৭৩৬৯৪ |
২৪৮৪৬৯৪ |
২৪১৩৮৬৫ |
১০৮২৬৭৭ |
৯৯৬৮৬১ |
৭৪৬৮২৪ |
৭২৩৫৯৬ |
২০১৯-২০ অর্থবছরে আওতাভুক্ত এলাকা, উপকৃত এলাকা ও শস্য উৎপাদনে বাপাউবোর অবদানঃ
আওতাভুক্ত এলাকা (হেক্টর) |
উপকৃত এলাকা (লাখ হেক্টর) |
ফসলের নাম |
প্রকল্প পূর্ব উৎপাদন (লাখ টন) |
প্রকল্প পরবর্তী উৎপাদন (লাখ টন) |
অতিরিক্ত উৎপাদন (লাখ টন) |
অতিরিক্ত উৎপাদিত খাদ্যশস্যের মূল্য (কোটি টাকায়) |
৬৬.৪ |
৬৪.৯৬ |
ধান, গম, ভুট্টা |
১৬৭.৭০ |
২৭৮.৭৪ |
১১১.৪০ |
২৩০২৫.০০ |
ধানের মূল্য (টাকায়): ২০৭৫০/টন
গমের মূল্য (টাকায়): ২১০০০/টন
হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ফলে ফসল উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। সুনামগঞ্জে ৬১৯ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে ১৬৫৬৬৫ হেক্টর জমি, নেত্রকোনা জেলায় ১০১.৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের ফলে ৪০৯৬০ হেক্টর জমি, কিশোরগঞ্জে ৬১.৩২ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ফলে ১,০২,০০০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
নদী ভাঙ্গন, জলাবদ্ধতা, বন্যা ও পরিবেশ বিপর্যয়থেকে রক্ষা পেতে ছোট-বড় নদী নালা খাল ডোবা ড্রেজিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়থেকে ৪০৮৭ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের মহা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায়প্রথম পর্যায়ে দুইটি সিটি কর্পোরেশন, ৩৭৫টি উপজেলার 88টি ছোট নদী ৩৫২ খাল এবং ৮টি ডোবা ড্রেজিং কাজ চলমান রয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ গৃহীত হওয়ার পর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয়পুনঃখনন শীর্ষক এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন লাভের পর একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে এর কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৪৪৮টি ছোট নদী ও খালের ৪০৮৭ কিলোমিটার পুনঃখনন সম্পন্ন হবে। ফলে দেশের ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা সংকট দূর হবে, পানির ধারণ ক্ষমতা ও নিষ্কাশন ক্ষমতাও বাড়বে। ফলে নৌ চলাচল ও যোগাযোগ সহজ হবে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা যাবে। পাশাপাশি চাষাবাদ করা যাবে ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি। যার ফলে প্রতিবছর কমপক্ষে ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন বাড়বে। গত ১০ বছরে ১৩৬৭ কিলোমিটার নদী খনন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী জনাব রমেশ চন্দ্র সেন কমিটির ৫ম বৈঠকে উল্লেখ করেন যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খনন কাজের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ ঠিক করায় এক কোটি টন খাদ্য বেশি উৎপাদন হয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজের কমান্ড এলাকার ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। এই প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করা হবে। তৃণমূলপর্যায়ের কৃষকের সেচের পানি সরবরাহ করতে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি ক্যানেল নির্মাণ করা হবে। সেচ সুবিধার কারণে ফসলের নিবিড়তা ২৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত এক লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে এবং অন্যান্য খাদ্য শস্যের উৎপাদন বাড়বে প্রায় ছয় লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান যার বাজার মূল্য ১০০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা পাড়ের মানুষের দুর্দশা লাঘবে ৮২০০ কোটি টাকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিস্তা রিভার কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট নামে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১১৫ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক খনন, স্থায়ী তীর রক্ষাসহ পৌনে ২শত বর্গ কিলোমিটার জমি উদ্ধার করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্য। ফসল উৎপাদনে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। আগে শেষ এর জন্য ডিজেল ও বিদ্যুৎ চালিত মোটর এর পাম্পের সাহায্যে পানি দিতে বিঘায় খরচ হতো ১৫০০ টাকা, আর এখন সেচ প্রকল্পের পানিতে প্রতি একরে খরচ হবে ৪৮০ টাকা। তাছাড়া পানি পেতে কোন ঝামেলা নেই। সেচের পানি প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত এবং বৃষ্টির উপরিভাগের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রতিবছর বাংলাদেশের নদীগুলোতে বিপুল পরিমাণ বালি ও পলি জমা হয়। শুধুমাত্র যমুনাতে ১২০ কোটি টন বালি ও পলি পড়ে। এসকল বালি ও পলি নিয়মিত অপসারণের জন্য নিয়মিত ড্রেজিং দরকার। শুধুমাত্র প্রকল্পভিত্তিক ড্রেজিং করে এ বালি ও পলি অপসারণ করা সম্ভব না। নদী সংস্কার ও পরিচর্যার গুরুত্ব বিবেচনা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরব্যাপী নদী খননের নির্দেশনা দিয়েছেন। নদীর পানি প্রবাহ ঠিক রাখা এবং ভাঙ্গন প্রতিরোধে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পুরো বছরের পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং সক্ষমতা বার্ষিক 50 লাখ ঘনমিটার। কিন্তু ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ড্রেজিং সক্ষমতা বাৎসরিক ৩০০ লাখ ঘনমিটার বাড়াতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ড্রেজার পরিদপ্তরের অধীনে বর্তমানে ড্রেজার আছে ৪১টি কিন্তু এর মধ্যে সচল আছে মাত্র ১৯টি। ১৫টি আছে ওয়ার্কশপে। বাদবাকি ৭টি একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী। ক্রয়ের প্রক্রিয়াধীন নতুন ৩৫ ড্রেজার বহরে সংযুক্ত হলে সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, ক্যাপিটাল এবং মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে ১৯৭০-৭১ সালে প্রাকৃতিক নির্ভর আমন আর আউস থেকে মোট উৎপাদনের সিংহভাগ আসতো। মাত্র ২০ শতাংশ ফসল আসতো বোরো থেকে। আর এখন দেশে ৬০ শতাংশ চাল আসে বোরো থেকে। ৩০ শতাংশ আসে আমন থেকে এবং ১০ শতাংশ আসে আউস থেকে। এ সময় বোরোর মোট উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। এ সময় বন্যার পানি নির্ভর আউশের চাষ কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। আমন চাষ কমেছে ৩০ শতাংশ।
বোরো মৌসুমে ১ কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এই পানির যোগান আসে ভূগর্ভস্থ পানির উৎস থেকে। সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পানির স্তর দিন দিন নেমে যাচ্ছে। পাম্পের মাধ্যমে পানি তুলতে গিয়ে চাপে বেড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের উপর। হাজার কোটি টাকার জ্বালানি ব্যয় হয়। এ দেশের কৃষক সেচের পিছনে মোট উৎপাদন ব্যয়ের ৬২ শতাংশ খরচ করে যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। অনেক দেশ ভূগর্ভস্থ পানি কৃষি কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানি সীমিত করেছে। পানির স্তর যত নিচে নামবে উৎপাদন খরচ ততই বাড়তে থাকবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর হিসাব মোতাবেক কৃষি কাজে ব্যবহার করা পাম্প আছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টি। এর মধ্যে ডিজেল চালিত ১১ লাখ ৯২ হাজার ৬৩০টি। বিদ্যুৎ এ চলে মাত্র ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০টি। অগভীর নলকূপ বিদ্যুতে চলে ১ লক্ষ ৫০ হাজার, ডিজেলের চলে ১০ লক্ষ ৭০ হাজার। গভীর নলকূপের মধ্যে ১২ হাজার ডিজেল এবং ২৬ হাজার বিদ্যুতে চলে। বোরো মৌসুমে ১৭ লাখ সেলো টিউবওয়েল কার্যকর থাকে।
১৯৭০-৭১ সালে দেশে মোট খাদ্য শস্যের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ টন। যদিও এ সময়ের ব্যবধানে প্রতিবছর দেশে মানুষ বাড়ছে ২০ লাখ। কৃষি জমি কমেছে ৮ লাখ হেক্টর করে। ১972 সালে একজন মানুষ প্রতিদিন খাদ্য পেতেন ৪৫৬ গ্রাম (খাদ্য শস্যের প্রাপ্যতা) তা ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৬৭ গ্রাম। দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এর তথ্য মতে খাদ্য শস্য উৎপাদনে চীনের অবস্থান প্রথম আর বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম।
তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প, জিকে সেচ প্রকল্প, মুহুরী সেচ প্রকল্প, বরিশাল সেচ প্রকল্প প্রভৃতি এ প্রকল্পের সুবিধা সম্প্রসারণ করে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতাই নয়, ২ কোটি মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য শস্য উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কৃষিবান্ধব কর্মসূচি, প্রকল্প বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষতা, মেধাবী একঝাঁক প্রকৌশলীর ক্লান্তিহীন কর্মযজ্ঞ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, মাননীয় উপ-মন্ত্রী, সিনিয়র সচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এর পরামর্শ ও নিবিড় মনিটরিং ফসল উৎপাদনে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাকে আরো দৃশ্যমান করবে।
৬৪ জেলা ছোট নদী, খাল ও জলাশয়খনন ও পুনঃখননের প্রকল্প (ফেজ-২) মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৮ হাজার ৫শত কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৬১২টি ছোট নদী, খাল ও জলাশয় খনন করা হবে। এর মধ্যে ২১২টি ছোট নদী, ২০০০টি খাল এবং ৪০০টি জলাশয় রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। -সূত্র: অনলাইন
সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান
প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২,
উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।
বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com