অবহেলিত বাগেরহাট হচ্ছে সিঙ্গাপুর

প্রকাশের সময় : 2021-10-06 14:57:57 | প্রকাশক : Administration অবহেলিত বাগেরহাট হচ্ছে সিঙ্গাপুর

বাবুল সরদার: অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একদা অবহেলিত বাগেরহাট জেলায় এখন প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এরমধ্যে ১৮টি মেগা প্রকল্প রয়েছে। যার অধিকাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ফলে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে এ জেলার গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই লক্ষাধিক বেকার যুবার কর্মসংস্থান হচ্ছে।

আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি আসছে। বাগেরহাটে মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, খানজাহান আলী বিমান বন্দর, রামপাল তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেললাইন, মোংলা বন্দরের উন্নয়ন, খুলনা-মোংলা জাতীয় সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, পানগুছি সেতু, মোংলা খাদ্যগুদাম, প্রাণ ফিরে পাওয়া মোংলা- ঘষিয়াখালি আন্তর্জাতিক নৌপথ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, শরণখোলা- মোংলা- রামপাল বেড়িবাঁধ, বেপজা, ইপিজেড, ২৫০ শয্যার শেখ রাজিয়া নাসের হাসপাতাল, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উন্নয়ন, শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামের আধুনিকায়ন, চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র, মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, পশুর, ভৈরব, চিত্রা নদী ড্রেজিংসহ ৮৩ খাল পুনর্খনন ইত্যাদি।

বিশ্ব ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ, মোংলা সমুদ্র বন্দর, খানজাহান আলী বিমান বন্দর, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেল যোগাযোগ, বিদ্যুত কেন্দ্র এ জেলায় রয়েছে। পদ্মা সেতু, খুলনা-মোংলা রেল যোগাযোগ প্রকল্প, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, রামপাল তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ফলে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ির বৃহৎ উৎপাদন ক্ষেত্র বাগেরহাট বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হতে শুরু করেছে।

তিন হাজার আটশত কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা থেকে খুলনা রেললাইন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শেষ হওয়ার পথে। ৬৫.৭৫ কিলোমিটারের এ রেললাইন দ্রুত চালু হবে। বর্তমান সরকাররের সময়ে গত একযুগে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বহুমুখী উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ভরাট হওয়া ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নৌরুট ঘষিয়াখালী চ্যানেল এখন সচল। বর্তমানে ৮ থেকে ১০ ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দরে ভিড়তে পারছে। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসায় বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জাহাজ আগমনে ৭০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগের হিসেবে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব রেকর্ড ভঙ্গ করে মোংলা বন্দরে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে।

বাগেরহাটের অন্যতম মেগা প্রকল্প ‘রামপাল তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র’। জেলার রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ও রাজনগর ইউনিয়নের কৈগর্দ্দাশকাঠি- সাপমারী মৌজায় পশুর নদীর তীরে ১৮৩৪ একর জমির ওপর এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট এই মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার বিদ্যুত কেন্দ্রের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬শ’ কোটি টাকা।

খানজাহান আলী পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরের জন্য নতুন করে ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের তিনগুণ বেশি মূল্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে এখানে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। চ্যানেল চালু হয়েছে, সাইলো হয়েছে, অর্থনৈতিক জোন হয়েছে, ১৮টি এলপিজি গ্যাস ফ্যাক্টরি হচ্ছে, খুলনা-মোংলা রেললাইন হচ্ছে, ইপিজেড হয়েছে।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বৃহৎ অংশ বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত। বিশ্বখ্যাত এ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষাসহ ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে গত একযুগে সরকার বহুমুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার ফলে সুন্দরবনে অবৈধভাবে গাছ কাটা, বন্যপ্রাণী শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সুন্দরবনে পর্যটন বিকাশে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ, গবেষণা এবং বনজীবীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এখনও প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

এছাড়া পূর্ব বিভাগের আন্দারমানিক ও শরণখোলার আলীবান্দায় নতুন দুটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ৯শ’ ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বহু প্রত্যাশিত পানগুছি নদীর ওপর ১৪শ’ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘পানগুছি সেতু’ ইতোমধ্যে অনুমোদন হয়েছে। শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা-মোংলা জাতীয় সড়কের সাড়ে ৩০ কিঃমিঃ ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প (কুদির বটতলা থেকে দ্বিগরাজ) এখন প্রক্রিয়াধীন। ৪৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩.৮২৮ কিঃমিঃ বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ইতোমধ্যে গত ১০ আগস্ট একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।

এছাড়া ৩০৭.৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭.২৫ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের মোংলা- জয়মনির ঘোল- জিসি- চিলা- জিসি- বৌদ্যমারী বাজার জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পটিও অনুরূপ প্রক্রিয়াধীন। পানগুছি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ছিল বাগেরহাটবাসীর অর্ধশতাব্দীর দাবি। এই দাবি পূরণে সম্প্রতি ৯শ’ ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতুর নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে। পল্লী সড়ক শুধু সড়কই নয়-কর্মসংস্থান, জীবিকা ও উন্নততর জীবনের অবলম্বন।

১৭ লাখ লোক অধ্যুষিত বাগেরহাটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পূর্ণাঙ্গ ২৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ রাজিয়া নাসের হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যার আইসিইউ বেড এবং ২০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিটের কাজ চলমান।