নিজে বাঁচুন, সন্তানকে বাঁচান!!

প্রকাশের সময় : 2020-01-16 17:29:37 | প্রকাশক : Administration
নিজে বাঁচুন, সন্তানকে বাঁচান!!

সিমেক ডেস্কঃ ফেসবুক আসক্তি আজ রূপ নিয়েছে এক বৈশ্বিক মহামারীতে। বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফেসবুক ব্যবহারকারীর শহর ঢাকা! যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্টিফিক আমেরিকান (২০১৩)-এর মতে, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে যত বেশি সময় কাটায়, সে হয়ে পড়ে তত হতাশ একাকী পরিবার-বিচ্ছিন্ন ও বিষণ্ন। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব স্বীকার করে ডিসেম্বর ২০১৭-তে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ!

দেশের আনাচে-কানাচে নিতান্ত স্বল্প আয়ের মানুষের হাতেও পৌঁছে গেছে স্মার্টফোন। এটা কারো প্রয়োজন, কারো কাছে স্ট্যাটাস সিম্বল। তবে সমস্যার শুরু তখনই-যখন কেউ মনে করে স্মার্টফোন ছাড়া তার জীবন অচল । যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬ শতাংশ মানুষ এমনটাই মনে করেন। এ প্রেক্ষিতে গবেষকরা বলছেন, একটু পর পর নোটিফিকেশন চেক করা, কাজ ফেলে শয়তানের এই বাক্সের দিকে তাকিয়ে থাকা ইত্যাদি অভ্যাস কারো মধ্যে দেখা গেলেই বুঝতে হবে সে স্মার্টফোন আসক্তিতে আক্তান্ত।

যখন-তখন যত্রতত্র সেলফি তোলার প্রবণতাকে এখন আর নিছক হাস্যকর আত্মপ্রেম বলে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই। কারণ সেলফিজনিত কারণে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মৃত্যুহারের দেশ ভারতে চারশ জনের ওপর গবেষণার ভিত্তিতে মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যারা ঘন ঘন সেলফি তোলেন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলফি পোস্ট করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে পড়েন, তারা ‘সেলফিটিস’  নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত। (ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মেন্টাল হেল্থ এন্ড অ্যাডিকশন, ২০১৭) ২০১৮ সালে প্রণীত ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজ-এ ভিডিও/অনলাইন গেম আসক্তিকে প্রথবারের মতো একটি মানসিক রোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইতোমধ্যেই চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ভিডিও গেম আসক্তিকে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অনলাইন গেমে আসক্ত ব্যক্তি বাস্তবতা ও কল্পনার মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। (সিএনএন, ৫ মার্চ ২০১০) যুক্তরাজ্যের হার্লি স্ট্রিট রিহ্যাব ক্লিনিকের একটি গবেষণায় বলা হয়, শিশুর হাতে স্মার্টফোন/ ট্যাব তুলে দেয়া আর কোকেন বা মদের বোতল তুলে দেয়া একই কথা। (দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ৭ জুন ২০১৭) স্মার্টফোন আসক্তি মানুষের মস্তিষ্কের কর্মকাঠামোতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। (রেডিওলজিক্যাল সোসাইট অব নর্থ আমেরিকা, ৩০ নভেম্বর ২০১৭)

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্স বিভাগের পরিচালক ড. পিটার হোয়াইব্রোর মতে, স্মার্টফোন/ট্যাব স্ক্রিন হলো ইলেক্ট্রনিক কোকেন। চীনা গবেষকরা একে বলছেন ডিজিটাল হেরোইন। আর পেন্টাগন ও ইউএস নেভির অ্যাডিকশন রিসার্চ বিভাগ ভিডিও গেম ও স্ক্রিন টেকনোলজিকে অভিহিত করেছে ডিজিটাল মাদক হিসেবে। (নিউইয়র্ক পোস্ট, ২৭ আগস্ট ২০১৬)

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চারটি সড়ক দুর্ঘটনার একটি ঘটে গাড়ি চালকের মোবাইলে মেসেজ আদানপ্রদানের কারণে। (দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮) শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জবস একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমার সন্তানরা কখনো আইপ্যাড ব্যবহার করেনি। কতটুকু প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করবে, সেই মাত্রা আমি ঠিক করে দিয়েছি। (নিউইয়র্ক টাইমস, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪) মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তার সন্তানদের বয়স ১৪ হওয়ার আগে মোবাইল ফোন কিনে দেননি। এমনকি তিনি নিয়ম করে দিয়েছিলেন দিনে ৪৫ মিনিটের বেশি কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না এবং খাবার টেবিলে মোবাইল ফোন আনা নিষেধ। (দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, ২১ এপ্রিল ২০১৭) ফেসবুকের সাবেক প্রেসিডেন্ট শন পার্কার অনুতপ্ত হয়ে স্বীকার করেছেন যে শুধু ঈশ্বরই বলতে পারবেন- আমরা পৃথিবীর শিশুদের মস্তিষ্কের না জানি কী সর্বনাশ করে বসে আছি! (দ্য গার্ডিয়ান, ১২ ডিসেম্বও ২০১৭)

ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম, সেলফি, ইউটিউব, ওয়েব সিরিজ, টিভি সিরিয়াল, ভার্চুয়াল গেম, স্মার্ট টিভি, অনলাইন শপিং, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট আসক্তি। পিলে চমকানো সব বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্ব জুড়ে গবেষকরা বলছেন, এসব ভার্চুয়াল ভাইরাস মাদকাসক্তির চেয়েও মারাত্মক-যার মর্মান্তিক পরিণতি শুধু ব্যক্তিকে নয়, ধবংস করে দিতে পারে পরিবার, সমাজ এমনকি একটি জাতিকেও। তাই আসুন, সময় থাকতে সচেতন হই। ভার্চুয়াল ভাইরাসের মরণ-আগ্রাসন থেকে নিজে বাঁচি। বাঁচাই সন্তানদের। সচেষ্ট হই আত্মীয়-বন্ধু- প্রতিবেশীদেরও বাঁচাতে। বাঁচাই প্রিয় দেশবাসীকে।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৯১২৫২২০১৭, ৮৮০-২-৭৯১২৯২১
Email: simecnews@gmail.com