সত্যিকারের মানুষ কি বানানো যাবে?
প্রকাশের সময় : 2020-09-03 17:01:16 | প্রকাশক : Administration

আফছানা খানমঃ দিন কয়েক হলো SSC পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। প্রকৃতির এতো দূর্যোগেও চারিদিকে একটা উৎসবের আমেজ! Class Ten Pass করার আনন্দ সবার! অনেকেই ফোন করে তাদের ছেলেমেয়েদের সুখবরটা জানিয়েছে! সোশ্যাল মিডিয়াতেও একটা হৈ হৈ কান্ড! কেউ GPA5, কেউ Golden GPA, কেউবা Point Something কম। সকলকেই অভিনন্দন! GPA কথাটার মানে আগে জানতাম না, Google করে শিখেছি, Grade Point Average । আমাদের সময় এসব ছিলোনা। একটার পর একটা Division ছিলো, তারপর star, stand, আরও অনেক কিছু! পরীক্ষার ফল বের হবার আগে বুকটা ধুকধুক করতো, তা পরীক্ষা যেমনই হোক! সবচেয়ে বেশি চিন্তা হতো আম্মা আব্বাকে নিয়ে, তাদের স্বপ্ন পূরণ হবেতো! সকলের কাছে তাদের মুখ থাকবেতো!
ইস্, দেশে থাকলে কত্ত মিষ্টি খেতে পারতাম! অনেকেই মিষ্টি এনে আমাদের সদর দরজার বাইরে রেখে যেতো! সামাজিক দুরত্ব মানলেও এই সামাজিকতাটুকু নিশ্চয়ই এখনও আছে! না দিলেও আমি চেয়ে খেতাম! এটা আমার সামাজিক অধিকার!
হঠাৎ করেই মনে পরলো শোনিমও তো Class ten pass করেছে! কই আমিতো কাউকে ফোন করে জানাইনি! মিস্টি কিনে কারো বাসায় পাঠাইনি! কি লজ্জা, কি লজ্জা! সবাই নিশ্চয়ই ভেবেছে, ছেলে আমার রেজাল্ট খারাপ করেছে! আসলে কি বলবো, আমি নিজেই এখনও ছেলের রেজাল্ট জানিনা। সত্যি কথা বলতে, রেজাল্ট কি হবে তা একবারও ভেবে দেখিনি। শুধু এটুকু জানি, class ten এর রেজাল্ট ঘোষণার আগেই শোনিম শাহীন eleven class এ উঠে গেছে। কি আশ্চর্য ব্যাপার!
শোনিমের school year শেষ হয় June এ। Covid-19 এর কারনে March 6 তারিখের পর থেকে school বন্ধ। অনলাইনে কিছু পড়া হচ্ছিলো। এরই মধ্যে April এর প্রথম সপ্তাহে শোনিমকে eleven class এ ভর্তির জন্য TDSBতে application করতে হয়। এর দুই সপ্তাহ পরে acceptance letter চলে আসে। তখনও school year শেষ হতে দুই মাস বাকি।
জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি স্কুলে ভর্তির প্রথম দিন থেকেই আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়। ভর্তির প্রথম দিন থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিন পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে হয়! আর প্রতিবারই রেজাল্টের অপেক্ষায় ভীতিকর সময় কাটাতে হয়! আমি আজও বুঝতে পারিনি এই পরীক্ষা পদ্ধতির আসল উদ্দেশ্য কি। কি শিখাতে চায় আর কি বানাতে চায়? তবে এই পরীক্ষা পদ্ধতি আমাদের রিতিমতো পাকাপোক্ত নকলবাজ বানিয়েছে।
প্রতিবছরই দেখছি পরীক্ষার নিয়ম-কানুন আরও জটিল করার সংস্করণ হচ্ছে, অথচ আজও আধুনিক যুগপোযোগী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি পরীক্ষা তথা শিক্ষা পদ্ধতি আমরা পাইনি! কোমলমতি শিশুকে শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করার চেয়ে ভীতিকর পরীক্ষার মাধ্যমে বাঁধা দেয়াই যেন আসল উদ্দেশ্য! পরীক্ষা পদ্ধতির বেড়াজালে আটকে সত্যিই কি কাউকে বা কোন জাতিকে শিক্ষিত করা যায়? পৃথিবীর ইতিহাসে খ্যাতিমান মহান জ্ঞানী, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক বহু মানুষ রয়েছেন যারা কোন পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্বীকৃত নন। যখন আধুনিক উন্নত বিশ্ব বলে পরিচিত দেশগুলো প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে উদার সহজতর শিক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে, তখন আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি যেন আরও জটিল হচ্ছে! শিশুদের সহজাত প্রতিভা, বিচারবুদ্ধি, সামাজিক মূল্যবোধ এবং দর্শণকে বিকশিত না করতে দিয়ে শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞানের বোঝা চাপিয়ে সত্যিই কি তাদের সত্যিকারের মানুষ বানানো যাবে? - ভাইস চেয়ারম্যান, সিমেক গ্রুপ
