টং ঘরের খিচুড়ি বদলে দিয়েছে জীবন

প্রকাশের সময় : 2021-03-03 13:43:27 | প্রকাশক : Administration
টং ঘরের খিচুড়ি বদলে দিয়েছে জীবন

মোঃ আনিসুল ইসলাম: মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রিয়াদ আর দশ জনের মতোই দিন পার করছিল। কিশোর বয়স শেষ করে সবে যৌবনে পর্দাপণ করেছে। বাবা-মায়ের আদরের ছেলের দুষ্টুমিতে কমতি ছিল না। একটা সময় ছিল বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় তার দিন কাটতো। সকালে বের হলে রাতে বাসায় ফিরতেন।

নানা জায়গায় ঘুরে-ফিরে দিন চলে যেত। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড় রিয়াদ পাঠান (২৫)। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় একসময় সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। এ কারণে পড়াশোনাও ছাড়তে হয়। পরিবারের টানাপোড়েনের কথা চিন্তা করে চাকরিতে যোগ দেন। অতিরিক্ত কাজের চাপে চাকরি করতে ভালো লাগতো না।

বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর মন টেকাতে না পেরে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলেআসেন। বাড়িতে থাকার সময় হতাশা ও বিষণœতায় দিন কাটতো। এভাবে প্রায় দুই বছর বেকার জীবন কাটে। পরিবার-পরিজনের অবহেলা আর নিতে পারছিলেন না রিয়াদ। মাথায় তার ব্যবসায়ের চিন্তা-ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে তার কাছে কোনো অর্থ ছিল না। কারো কাছে টাকা চাইতেও পারছিলেন না। সবশেষে এক ভাইয়ের সহযোগিতায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন রিয়াদ। বাড়ির কাছে গাছতলা ব্রিজের পাশে টংগের একটি দোকান ছিল। দোকানটি কেনার ইচ্ছা জন্মালো মনে। দোকান মালিকের কাছে তা কিনতে চাইলেন। এদিকে মালিকও রাজি, ঋণের টাকার কিছু অংশ দিয়ে ভাঙা টং দোকান কিনে নিলেন।

দোকানের কিছু অংশ মেরামত করে একটু বড় ও পরিপাটি করেন। প্রথমে দোকানে ১০-১২ হাজার টাকার মালামাল ওঠানো হয়। এর মধ্যে ছিল চা-সিগারেট, বিস্কুট, কেক, রুটি, কলা, চিপস ইত্যাদি। রিয়াদের টং দোকানের পাশেই চাঁদপুর মেরিন একাডেমির ভবন। সেখানে অনেক শিক্ষার্থী ট্রেনিংয়ের জন্য যাতায়াত করত।

শহর থেকে একটু বাইরে হওয়ায় একাডেমির আশেপাশে কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। তাই শিক্ষার্থীরা খুঁজে নেয় রিয়াদের টং দোকান। শিক্ষার্থীরা রিয়াদের টং দোকানের রুটি, কলা, বিস্কুট, চা খেয়ে দিন কাটাতো। রিয়াদের কাছে বিষয়টি ভালো লাগতো না। তাই চিন্তা করলেন, নিজের তৈরি করা খিচুড়ি সস্তায় তাদের জন্য তৈরি করবেন। সঙ্গে মুরগির মাংস ও আলুর ঝোল।

মেরিনে ট্রেনিং নিতে আসা শিক্ষার্থীরা খিচুড়ি পেয়ে খুশি হলো। রিয়াদের খিচুড়ির ব্যবসা বেশ ভালোই জমে ওঠে। তখনো তেমনভাবে টং ঘরটি কেউ চিনতো না। সিপি রাইডারস্ নামে একটি গ্র“পের সদস্যরা প্রতিদিন সকালে হাঁটতে ও ব্যায়াম করতে তার দোকানের কাছে যেত। তখন তারা কৌতূহলবশত টং দোকানে আসেন। চা খাওয়ার পর তারা খিচুড়ি খান। সবাই রিয়াদের খিচুড়ি উপভোগ করেন। তারা ফেসবুকে রিভিউ দিলেন যে, অল্প টাকার মধ্যে ভালো মানের খিচুড়ি পাওয়া যায়। ফেসবুকে রিভিউ দেখে তাদের বন্ধুরা রিয়াদের দোকানে গিয়ে খিচুড়ি খেয়ে তারাও ফেসবুকে রিভিউ দেন। এভাবে স্থানীয় সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি দেখেন। পরবর্তীতে রিয়াদের টং দোকানের বিষয়ে সবাই জানতে শুরু করে।

মানুষের চাপ দিনদিন বাড়তে শুরু করে। রিয়াদের ব্যবসার প্রসার ঘটে। তখন তিনি দোকানের নাম ‘পাঠান টং ঘর’ দিয়ে ফেসবুকে একটি পেজ খোলেন। অনলাইনে খিচুড়ির অর্ডার আসতে শুরু করে। প্রথম প্রথম অর্ডার কম হলেও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। একসময় অতিরিক্ত অর্ডারের কারণে হিমশিম খেতে হয় তার। তাড়াহুড়োয় ডেলিভারি করতে গিয়ে কয়েকবার বাইক এক্সিডেন্টও হয়েছে।

এরই মধ্যে টং ঘরে কিছু পদ বাড়ানো হয়। মোরগ পোলাও ও ভুনা খিচুড়ি। বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা বিশেষ দিনে ফ্রাইড রাইসের সঙ্গে ফ্রাইড চিকেন, কোমলপানীয় ও ভেজিটেবল দিয়ে প্লে−টার করে অফার দেওয়া হয়। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে ১ টাকার চায়ের অফার ও ফ্রিতে হোম ডেলিভারিও দেওয়া হয়। পাশাপাশি কক চিকেন খিচুড়ি, বিফ খিচুড়ি করা হয়।

এ ছাড়া দুপুরে ও রাতে খাওয়ার জন্যে সাদা ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন মাছ, ডাল, ভর্তা ও সালাদ দিয়ে প্যাকেজ করা হয়। চায়ের আইটেম বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রায় ২৩ ধরনের চা পাওয়া যায়। এর মধ্যে কাজুবাদামের চা, নবাব চা এবং মালাই চা বেশি বিক্রি হয়। বিকেলে বা সন্ধ্যায় চিকেন চপ, ডিম চপ, রোল এবং নুডলস আইটেম বিক্রি হয়।

এ ছাড়া সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খিচুড়ি পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত রিয়াদের সর্বোচ্চ বিক্রিত পদ হলো খিচুড়ি। এ ছাড়াও শীতের সময়ে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি পায়েস পাওয়া যায় রিয়াদের টং ঘরে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা জায়গা থেকে মানুষ আসে। নদীর ওপর ব্রিজ ও মেরিন একাডেমি জায়গাটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

পাঠান টং ঘর নিয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে রিয়াদের। ভবিষ্যতে বড় পরিসরে রেস্টুরেন্ট করা হবে। কম খরচে ও সুলভ মূল্যে মানসম্পন্ন খাবার দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তরুণ বেকারদের জন্য তার পরামর্শ, ছোট হোক বড় হোক; কোনো কাজকে ছোট মনে করা বা অসম্মান করা যাবে না। সব কাজকে সম্মান করতে হবে। - জাগোনিউজ২৪ডটকম

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৯১২৫২২০১৭, ৮৮০-২-৭৯১২৯২১
Email: simecnews@gmail.com