সব কিছুই সচল রেখেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ
প্রকাশের সময় : 2021-07-19 09:42:39 | প্রকাশক : Administration

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ। গত এক যুগের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলা আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছে। দেশের তরুণরা এখন শুধু স্বপ্ন দেখে না, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করতে জানে।
বাংলাদেশের অদম্য যাত্রায় অচিরেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বনির্ভর ও আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। তথ্য-প্রযুক্তি সেবা কৃষি বাতায়ন ও কৃষক বন্ধু কলসেন্টার চালু করা হয়েছে। ‘কৃষক বন্ধু’-৩৩৩১ কলসেন্টারের মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। ‘কভিড-১৯’-এ বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে দেখিয়েছে নতুন পথ।
জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এর মতো একটি ফোন সেবার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, নিত্যপণ্য সরবরাহসহ সরকারি তথ্য ও সেবা প্রদান করছে। গর্ভবতী নারী, মা ও শিশুর নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে মা টেলিহেলথ সেন্টার সার্ভিস তৈরি করা হয়েছে, করোনা ট্রেসার বিডি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিতকরণের কাজ করছে।
বিশ্বসভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এই বিপ্লবের প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্যতা নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে আমাদের দেশেও। এই আলোচনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা নিরলস কাজ করছেন।
বিচারিক কার্যক্রমের ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিচার বিভাগীয় বাতায়ন উচ্চ ও অধস্তন আদালতের বিচার বিভাগের সব কার্যক্রম নথিভুক্ত করছে। এ ছাড়া ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৮৭টি নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একটি সুরক্ষিত ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে।
তথ্য-প্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফলে অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিস্তৃতি লাভ করেছে। নারীরাও তথ্য-প্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে।
হাই-টেক শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের কাজ চলছে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে তিন লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবটিকস, সাইবার সিকিউরিটির উচ্চ প্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হবে।
প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর প্রজন্ম বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্যই ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিতকে আরো শক্তিশালী করা। কাগজ ও কালির আবিষ্কার এবং পরবর্তী সময়ে ছাপাখানার উদ্ভব মানুষের তথ্য বিস্তারের আকাংক্ষাকে বাস্তবে রূপায়িত।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এই বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে। জৈবিক, পার্থিব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যকার পার্থক্যের দেয়ালে চির ধরিয়েছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথডের মূল্য হ্রাস, ইন্টারনেট ব্যবহারে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে।
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটির অধিক। সারাদেশে ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সংযোগের মাধ্যমে তিন হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং ১৮ হাজার ৫০০টি সরকারি অফিস নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। দেশের ৫১ হাজারের বেশি সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটের একটি সমন্বিত রূপ বা ওয়েবপোর্টাল হচ্ছে জাতীয় তথ্য বাতায়ন।
এ বাতায়নে প্রতিদিন গড়ে এক লাখেরও বেশি জনগণ তথ্য ও সেবা গ্রহণ করতে পারছে। ডিজিটাল সেন্টার সাধারণ মানুষের জীবনমান সহজ করার পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, ঘরের কাছেই সব ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলায় সবচেয়ে বড় পাওয়া। আন্তর্জাতিক পরিসরে ফ্রিল্যান্সিং করেও তরুণরা উপার্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা।
শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রযুক্তিগত ডিজিটাল জ্ঞান তৈরি করছে নানা কর্মসংস্থান। শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো সহজ করে তুলতে এটুআইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’ ও ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন অনলাইন কনটেন্ট নিত্যনতুন জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
‘মুক্তপাঠ’ বাংলা ভাষায় সর্ববৃহৎ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা এবং কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে, যা দেশব্যাপী সম্প্রচার করা হচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্ল−বের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পাঁচটি উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। - সূত্র: অনলাইন