সন্তানকে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে
প্রকাশের সময় : 2021-08-25 15:38:11 | প্রকাশক : Administration
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সচেতনতার ফেরিওয়ালা সাঈদ রিমন। অনেক বিষয়েই তিনি মানুষকে সচেতন করে থাকেন। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করতে কাজ করছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করেন।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল দেখে তার খুব মন কাঁদে। মৃত্যু অনিবার্য, কিন্তু কোনো অকালমৃত্যু কারোর কাম্য নয়। মানুষকে ভালোবাসা তার ধর্ম। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করতে কাজ করছেন তিনি। এছাড়া স্টিকার বানিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বইয়ের উপরে লাগিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ সাত বছর যাবত মানুষকে সচেতন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে এই মানুষটি। প্রাইমারি স্কুল থেকেই শিশুদের সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪-১৫ জন মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। তার পরিচিত বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যুর সময় সাঈদ রিমনের হাত ঐ ব্যক্তির বুকে ছিল।
তার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন। ওই সন্তানের পৃথিবীতে আসার পর আর বাবার মুখ দেখা হয়নি। কতটা দুঃখজনক ঘটনা, যা আজও মানতে পারছেন না তিনি। কত বাবা-মা তাদের সন্তান হারাচ্ছেন। সন্তান তার বাবা-মাকে অকালেই হারাচ্ছে। এসব ঘটনাই তাকে নাড়া দিচ্ছে এবং উদ্বুদ্ধ করছে।
সাঈদ রিমন বলেন, ব্যক্তি সচেতনতার পাশাপাশি প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। আমরা যখন বাড়িতে সন্তানদের সময় দেই; তখন পারিবারিক আলোচনার একটি বিষয়বস্তু হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। তাতে শিশুরা আস্তে আস্তে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন হবে।
অনেক সময় দেখা যায়, বাবা তার সন্তানকে মোটরসাইকেলে করে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়ে যান। কিন্তু বাবা হেলমেট ব্যবহার করলেও সন্তানের জন্য হেলমেট রাখেন না। আরও দেখা যায়, বাবা-মা দু’জনই হেলমেট পড়ে আছেন, তাদের মাঝখানে সন্তানকে বসিয়ে রাখেন হেলমেট ছাড়া। আমার প্রশ্ন হলো- তাহলে আপনার সন্তান আপনার কাছ থেকে কি শিখলো!
সন্তান যখন স্কুলে যায়, তখন কিছু বিষয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। যেমন: সড়ক আইন সম্পর্কে জানানো, ট্রাফিক সিগন্যালগুলো সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দেওয়া, রাস্তা পারাপারে জেব্রাক্রসিং বা ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে বলা, রাস্তায় দেখে-শুনে পথ চলা, খেলাধুলা বা দৌঁড়াদৌঁড়ি থেকে বিরত থাকা, স্কুলে একটু আগেই পাঠানো যাতে তাড়াহুড়া না করতে হয়, প্রতিদিন বাড়িতে ৪-৫ মিনিটের জন্য হলেও সন্তানের সাথে সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক আলোচনা করা, রাস্তা পারাপারে বাঁক বা মোড় ব্যবহার না করা। কারণ সেখানে অপর পাশ থেকে গাড়ি আসলে দেখা যায় না, যেসব স্থানে জেব্রাক্রসিং নেই সেসব স্থানে সিগন্যাল মেনে গাড়ি থামালে দেখে-শুনে রাস্তা পার হওয়া, রাস্তায় সন্তানকে নিয়ে চলাচলের সময় নিজেরাও সচেতন থাকা ইত্যাদি।
সাঈদ রিমন অফিসে যাওয়া-আসার পথে বা অবসরে গাড়ি চালক, শ্রমিক, পথচারী, যাত্রীদের নিয়ে প্রতিদিন বাসে, রেল স্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্যাম্পেইন করেন। মাঝে মাঝে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
রাজশাহী থেকে আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ ও আরাফাত রুবেল, ঢাকা থেকে ইশতিয়াক আহমেদ মুনীর তাদের সন্তানদের এ কাজে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এখন থেকেই সন্তানকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে হবে। বলতে গেলে অনেক সহযোগিতা পাচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমও সহযোগিতা করছে তাকে।
সাঈদ রিমন মনে করেন, পাঠ্যপুস্তকে সড়ক আইনসহ দুর্ঘটনা রোধের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার বিকল্প নেই। তাই সিলেবাসে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছেন তিনি। এছাড়া আগ্রহী অভিভাবকদের সন্তান নিয়ে নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। যেখানে ছোটবেলা থেকেই তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তার সাথে স্কুলের ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করবে। -জাগোনিউজ২৪ডটকম