প্রকাশের সময় : 2021-10-06 15:29:15 | প্রকাশক : Administration
করোনা দিনের ডায়েরি...
২৭ তম পর্ব
ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীন
কথা বললেই কথা বাড়ে। তাই ইদানীং কথা বলতে চাইনা। বলিও না। দেশে কথা বলার এত লোক থাকতে আমার মত চুনোপুঁটির কথা না বলাই শ্রেয়। কিন্তু সমস্যা হলো, ওরা যত না ভাল কথা বলে, তার চেয়ে ঢের বেশি আকথা বলে। কুকথার চেয়েও আকথা বেশি ক্ষতিকর। মারাত্মক ক্ষতিকর। আকথা আকামের হয়। কামের হয় না। কামের কথা হলো পজিটিভ কথা। অবশ্য এটা বলার মানুষ দেশে যেমন কম, শোনার মানুষ তার চেয়েও কম।
কিন্তু শোনা দরকার। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলার যাবতীয় পরিকল্পনা এবং জীবন-জীবিকা পরিস্থিতির দিকনির্দেশের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে করোনায় মৃত্যুহারের সূচকটি। গত চার মাসের পরীক্ষা, শনাক্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার যত ওপরের দিকে উঠেছে, শনাক্ত তুলনায় মৃত্যুহার ততই নেমেছে নীচের দিকে। সেই সঙ্গে সুস্থতার হার উঠে গেছে অনেক ওপরে, যা থেকে শুভ ইঙ্গিতই মিলছে।
এটা তো সুসংবাদই। সুসংবাদ আরো হলো, ইদানীং শোনার মানুষ বাড়ছে। করোনার আতঙ্কে থাকতে থাকতে মানুষের বোধ পাল্টাচ্ছে। নেগেটিভ কথা আর শুনতে ভাল লাগছে না। তারা এগিয়ে আসছে; অনুপ্রেরণা দিচ্ছে পজিটিভ কথা শোনানোর জন্যে। আতেলদের কথা আলাদা। তারা এসাইন্ট হয়েছে নেগেটিভ কথা বলার জন্যে। এটা তাদের পেশা। জাতিকে আতঙ্কে রেখে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। মানে ডাল ভাত খায়।
ওদের ডাল ভাতই পাওনা। করোনা নিয়ে শুধু শুধু এবং মিথ্যে মিথ্যে যে আতঙ্ক ওরা কয়েকমাস ধরে ছড়িয়ে যাচ্ছে তাতে ওদের এমন অভিশাপই প্রাপ্য। আমরা, এই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষেরা শুরু থেকেই করোনাকে যেভাবে দেখে আসছিলাম, আজ চারমাস পরে সেটা সত্যি বলে প্রমাণ হচ্ছে। প্রমাণ হচ্ছে, গেল চারমাসে করোনা বাঙালীর বড় কোন ক্ষতি করতে পারেনি। পারবেও না।
অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার ১ জুলাই, ২০২০ পর্যন্ত মোট পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৩৩৫। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ২৫৪। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৮৮৮। দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার বেড়ে হয়েছে ১৯.০৩ শতাংশ। আর শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহার কমে হয়েছে ১.২৬ শতাংশ। অন্যদিকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাড়তে শুরু করে সুস্থতার হার। গতকাল পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছে ৬২ হাজার ১০৮ জন। শনাক্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৪১.৬১ শতাংশ।
গবেষক বিজন শীল বলেন, ‘আমরা এখন খুবই ভালো অবস্থায় আছি বলেই আমি মনে করছি। আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আমরা এখন পিক (চূড়া) ক্রস (অতিক্রম) করছি। এর পরই নীচের দিকে নামব। মৃত্যু ও সুস্থতার সূচকও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।’ তিনি বলেছেন, সব মহামারির সময়ই প্রথম দিকে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি থাকে। সংক্রমণের তীব্রতাও বেশি থাকে। আক্রান্তদের উপসর্গ ও জটিলতাও তীব্র হয়ে থাকে। একপর্যায়ে গিয়ে সেগুলোও কমতে থাকে। এখন সেই অবস্থাই চলছে।
টেস্টের অপ্রতুলতার কারণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতা বাংলাদেশে কম বলে, মৃতের সংখ্যা দিয়েই মহামারীর ভয়াবহতা বিচার করা বেশি যুক্তিযুক্ত। দৈনিক মৃতের সংখ্যা নিয়ে খুব দ্বিমত কারো নেই এদেশে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত লাখে একজন এই রোগে মারা গেছে; যেখানে সারা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে গড়ে ১৬ হাজারে একজন।
এটাকে আর যাই বলুক, মহামারীর ক্ষতি বলে না। লোকে গিজগিজ করা বাংলাদেশে মৃত্যুহার বেশি হবার কথা এবং সংক্রামক রোগ অন্য দেশের তুলনায় দ্রুত ছড়ানোর কথা। অথচ গত মার্চে শুরু হওয়ার চারমাস পরেও রোগের বিস্তার এবং মৃত্যুর যে হার, তা বিশেষভাবে ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় অস্বাভাবিক রকমের কম। কেউ কেউ খোঁড়া যুক্তি দিয়ে বলার চেষ্টা করছে, দেশে এখনো মহামারীর পিকটা আসেনি। কিন্তু কেন এই পিক আসতে এত সময় লাগবে? অন্য কোথায়ও তো এত সময় লাগেনি। তাহলে বাংলাদেশে লাগবে কেন?
এসব আসলে বাহানার কথা। খামাখা বাহানা খোঁজা হচ্ছে। এখন পেয়েছে কোরবানীর বাহানা। কোরবানীকে সামনে রেখে আলতু ফালতু যুক্তি ফুক্তি দিয়ে “সামনে পিক আসছে” বলে নতুন আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। এই আতঙ্কের ফলে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ। বাস্তবে যতটা আতঙ্কিত আমরা করোনায় হচ্ছি, ততটা হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আমরা মোটেও নেই।
না থাকি; কিন্তু করোনায় অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে। তবে বাড়াবাড়ি রকমের নয়। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে করোনায় যত না ক্ষতি হচ্ছে, ভিন্ন কারণে ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। চাকরি হারাচ্ছেন শত শত লোক, ব্যবসায়ীরা পথে বসছেন এবং দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হচ্ছে।
সব কিছু অচল করে দেয়ার ফলে এগুলো হচ্ছে। চলমান মৃত্যুহার অবশ্যই সবকিছুকে অচল করে দেওয়া সমর্থন করে না। সন্দেহ নেই, করোনা বেজায় রকমের রিস্কি একটা নতুন রোগ। যার অনেক কিছুই এখনো অজানা। তাই ভয় পাওয়াটাই যুক্তিসংগত এবং সে মতে কঠিন রকমের সাবধানেও থাকতে হবে। তবে কোনভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
প্রিয় পাঠক! আসুন ক্রাইসিসের এই সময়ে আতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখি। রোজ বিকেল আড়াইটায় টিভি ঘোষণায় যখন বলা হবে, আজ করোনায় আক্রান্ত ৩,৫০০। আতঙ্কিত না হয়ে তখন কেবলই ভাববো; করোনা মানেই নিশ্চিত মৃত্যু নয়! ভাববো, এর মধ্যে কমপক্ষে ৩,৪৬০ জনই সুস্থ হয়ে যাবে!! শুধু ভাববো না। চেষ্টাও করবো। চেষ্টা করবো বাকী ৪০ জনের মৃত্যু কিভাবে রোধ করা যায়! আল্লার রহমতে এটাও নিশ্চয়ই আমরা রোধ করতে পারবো!! খুব শীর্ঘই পারবো ইনশাল্লাহ!!! চলবে...