অমুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় মহানবী (সাঃ) এর বাণী
প্রকাশের সময় : 2021-11-03 12:37:08 | প্রকাশক : Administration

ধর্মে-বর্ণে বৈচিত্র্য থাকলেও সৃষ্টিগতভাবে সব মানুষই এক। সবাইকে মহান আল্লাহ আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) থেকে সৃষ্টি করেছেন। সর্বোপরি তিনি মানুষকে সম্মানিত করেছেন এবং সব সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছেন। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। তথাপি সমাজে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য ইসলাম বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হলে পারস্পরিক সুসম্পর্ক, সামাজিক শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রাণ-সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান: যেসব অমুসলিম মুসলিম দেশে রাষ্ট্রের আইন মেনে বসবাস করে অথবা ভিসা নিয়ে মুসলিম দেশে আসে, তাদের সুরক্ষা এবং জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করল, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না, অথচ তার সুগন্ধ ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (বুখারি, হাদিস: ২৯৯৫)
ধর্মীয় অধিকার: প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। মুসলিম সমাজেও অমুসলিমরা নিজেদের পরিমণ্ডলে ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করবে। অমুসলিমদের যেসব রীতি-নীতি ও আচার-অনুষ্ঠান ধর্ম পালনের অংশ, সেগুলোতে মুসলিমদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের দ্বিন তোমাদের, আমার দ্বিন আমার।’ (সুরা: কাফিরুন, আয়াত: ৬)
দেশ রক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তায় সবার অংশগ্রহণ: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মদিনায় বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের অনেক পণ্ডিত স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হিজরতের পাঁচ মাস পর মদিনা রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মদিনায় বসবাসকারী অমুসলিমদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করেন, যা মদিনা সনদ নামে পরিচিত। সনদে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নেতৃত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
বল প্রয়োগ করে ইসলাম নয়: ইসলামের সৌন্দর্য্যে অনুপ্রাণিত হয়ে যুগে যুগে মানুষ স্বেচ্ছায় ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। কোনো ধরনের চাপ বা বল প্রয়োগ করে ইসলামে দীক্ষিত করার কোনো বিধান নেই। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তা অস্বীকার করবে ও আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ২৫৬)
আর্থিক ও অন্যান্য লেনদেন: আর্থিক লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবার আদান-প্রদান সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে পরিচালনা করতে কোনো বাধা নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অনেকবার ইহুদিদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ করে দিয়েছেন। একবার একজন ঋণদাতা ইহুদি নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কোনো প্রতিবাদ না করে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করতে সাহাবাদের নির্দেশ দেন।
মানবিক আচরণ: সব মানুষের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ ও মানবীয় আচরণ প্রদর্শন ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। আল্লাহ সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন। হাদিসে এসেছে, একদিন সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) ও কায়েস ইবনে সাদ (রাঃ) কাদেসিয়াতে বসা ছিলেন। তখন তাঁদের পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে কিছু লোক অতিক্রম করল। তাঁরা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁদের বলা হলো, লাশটি অমুসলিমের। তাঁরা বলেন, মহানবী (সাঃ)-এর পাশ দিয়ে একসময় একটি লাশ নেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁকে বলা হলো, এটা তো এক ইহুদির লাশ। তখন তিনি বলেন, ‘তা কি প্রাণ নয়?’ (বুখারি, হাদিস: ১২৫০)
পারস্পরিক সহযোগিতা: পারস্পরিক সাহায্য- সহযোগিতা ও অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা ইসলামী সমাজব্যবস্থার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা: মুমতাহিনা, আয়াত: ৮)
অসুস্থ হলে শুশ্র“ষা করা: অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়াও সুন্নত। নবী (সাঃ) অমুসলিম রোগীদের দেখতে যেতেন এবং তাদের ঈমানের দাওয়াত দিতেন। তাদের সেবা করতেন। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ইহুদি নবী (সাঃ)-এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হলে নবী (সাঃ) তাকে দেখতে গেলেন। তার মাথার দিকে বসে নবীজি বলেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। তখন সে তার পিতার দিকে তাকাল। পিতা বলেন, তুমি আবুল কাসেমের (নবীর) অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন নবী (সাঃ) এই বলে বের হলেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১২৯০)
প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করা: সব ধর্মের মানুষ প্রতিবেশী হতে পারে। প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক প্রতিবেশী হিসেবে তাদের প্রতি সদয় আচরণ, পারস্পরিক সহযোগিতা ত্রুটি করা যাবে না। প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষায় ইসলাম অত্যন্ত তৎপর। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘জিবরাঈল (আঃ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অবিরত উপদেশ দিচ্ছিলেন, এমনকি আমি ধারণা করলাম যে, আল্লাহ তাদের ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৬৮; মুসলিম, হাদিস: ৬৮৫৪)
পরিশেষে বলা যায়, মুসলিম সমাজে উল্লেখিত দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত ও বাস্তবায়িত হলে ইসলামের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করবে নিঃসন্দেহে। - সূত্র: অনলাইন