বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ কমেছে: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
প্রকাশের সময় : 2021-12-29 10:48:43 | প্রকাশক : Administration

বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ইঙ্গিত করে বাংলাদেশের পুলিশের আইজিসহ র্যাবের ৭ জন কর্মকর্তাকে আমেরিকায় নিষিদ্ধ ঘোষণার ৫ দিন না যেতেই বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সফলতার জন্যে আমেরিকান পররাষ্ট্র দফতর ভূয়সী প্রশংসা করেছে। বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের উপর ২০২০ সালের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এ কথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, দেশটিতে ২০২০ সালে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কমেছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস- সম্পর্কিত তদন্ত এবং গ্রেপ্তার বেড়েছে। ২০২০ সালে তিনটি সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং জঙ্গিবাদ, প্রতিরোধ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি জনসম্পৃক্ততার জঙ্গিবাদের প্রসার ঠেকাতে ভূমিকা রেখেছে। আমেরিকা বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ কমার কথা বললেও, যাদের কারণে সন্ত্রাসবাদ কমেছে। তাদের কোন প্রশংসা করেনি। উল্টো ৫ দিন আগেই কঠোর ভাষায় তাদের কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়ে আমেরিকায় তাদেরকে নিষিদ্ধ করেছে। করেছে কারো কারো ভিসা বাতিল। তবে সন্ত্রাসবাদ কমার কথা বলে প্রকারন্তরে র্যাবের কর্মকান্ডের পজিটিভ স্বীকৃতিই দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন ‘গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সমুন্নত’ রাখার বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী মোমেন বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, বাইডেন প্রশাসন মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে জোর দিচ্ছে। আমি বললাম, আমরাও গণতান্ত্রিক দেশ, আমরাও মানবাধিকারে জোর দিয়েছি। এসব বিষয়ে সারা দুনিয়াতে আমাদের একটি নাম আছে এবং এ নিয়ে আমরা সোচ্চার।
মার্কিন মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি আমাকে বলেন, এবারের র্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেটি অনেকটা মার্কিন আইনপ্রণেতাদের কারণে হয়েছে। তবে তিনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) খোলাসা করেই বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে খোদ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। মন্ত্রী বলেন, আমি তাকে বলেছি, দেখেন স্মরণ রাখা উচিত যে, র্যাব বাংলাদেশে অধিকারহারা মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করে। তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এমন অভিযোগ তুলে আপনারা তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অথচ আপনার দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) প্রতি বছর ৬ লাখ লোক মিসিং হয়। প্রতি বছর মার্কিন পুলিশ হাজার খানেক লোককে মেরে ফেলে। আপনারা এটাকে বলেন লাইন অব ডিউটি। কিন্তু আমাদের এখানে মারা গেলে বলেন এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচার বহির্ভূত হত্যা!
র্যাবের সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জনগণ পছন্দ করেনি মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অ্যান্থনি ব্লিনকেনের কাছে তুলে ধরেছি। তিনি এ নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে আলোচনায় রাজি হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। আমি বলেছি, আমাদের সঙ্গে আপনাদের ৫০ বছরের সম্পর্ক, নিয়মিত আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। অথচ কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই আপনারা নিষেধাজ্ঞা দিলেন, যা আমাদের দেশবাসী না গ্রহণ করেছে, না পছন্দ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের মৌলিক নীতি এটি। যুক্তরাষ্ট্রের গ্লে−াবাল সেই টার্গেট বাস্তবায়নের পথে সহায়ক হয় এমন কর্ম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করছে র্যাব। এ কারণে তারা প্রশংসিত হওয়ার কথা, নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার কথা নয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সন্ত্রাস দমনে র্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ইস্যু মাদক পাচার বন্ধে র্যাব সাহায্য করছে। র্যাবের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করেছে যে, তাদের সব সিদ্ধান্ত সব সময় সঠিক নয়। - সূত্র: অনলাইন