নির্মাণ শ্রমিক থেকে শিল্পপতি

প্রকাশের সময় : 2022-04-06 12:23:57 | প্রকাশক : Administration
নির্মাণ শ্রমিক থেকে শিল্পপতি

আশরাফুল মামুন: মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি মানেই সেখানে কর্মী হিসেবে আয় রোজগার করা অভিবাসী। মেধা ও পরিশ্রম দ্বারা প্রচলিত সেই ধ্যান-ধারণা পাল্টে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশি যুবক দাতো মিজান। ভাগ্যের অন্বেষণে ৯৬ তে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাত ঘুরে খালি হাতেই একটি নির্মাণ সেক্টরে শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মেধা, পরিশ্রম, দক্ষতা দিয়ে লেগে থাকলেন।

তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দাতো মিজান এখন মালয়েশিয়ার ১ম শ্রেণির শিল্পপতি। গড়ে তুলেছেন একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। পেয়েছেন দেশটির রাজা কর্তৃক প্রদত্ত সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মানিত খেতাব ‘দাতো’, এই খেতাব বিশিষ্টজনরা পেয়ে থাকেন। গড়ে তুললেন বৃহৎ গ্রুপ প্রতিষ্ঠান মিজান গ্রান্ড ইন্টার ট্রেডার্স। পরিস্থিতির কারণে নিজে স্কুলের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি অথচ বর্তমানে তার অধীনেই কাজ করছে মালয়েশিয়ার সিভিল বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারসহ উচ্চ শিক্ষিতরা।

সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে দাতো মিজানের কোম্পানিতে বেশির ভাগই কর্মরত রয়েছেন বাংলাদেশি কর্মী। মিজান গ্রান্ড ইন্টার ট্রেডার্সের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি ৮টি নির্মাণ সেক্টরে প্রায় শতকোটি টাকার কাজ চালু রয়েছে। এসব সেক্টরে পুরোদমে চালু রাখতে আরও ২ হাজার কর্মী দরকার। দাতো মিজান ইতিমধ্যে কলিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার জন্য দূতাবাসে চাহিদাপত্র জমা দিয়েছেন। 

দূতাবাস সরজমিন তদন্ত করে এর সত্যতাও পেয়েছেন। দাতো মিজানের এই আকাশচুম্বী সাফল্যে যে কেউ ঈর্ষান্বিত হতেই পারেন। কিন্তু পাশাপাশি শূন্য হাতে মালয়েশিয়ার একজন নির্মাণ শ্রমিক থেকে দাতো মিজান সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহণের কাহিনী হতে পারে বাংলাদেশিদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। লাখ লাখ প্রবাসী ও বেকার যুবকদের মধ্যে কর্ম স্পৃহা জাগানোর জন্য দাতো মিজানের জিরো থেকে হিরো হওয়ার কর্মজীবনের নীতি আদর্শই যথেষ্ট। এতেই তাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম হরিহোরপুরের ঠাকুরগাঁও রোডের দাতো মোহাম্মদ মিজানের জন্ম। তার পিতার নাম মোহাম্মদ কারির উদ্দিন। পাঁচ ভাই ও ছয় বোনের বিশাল পরিবারের মাঝে তার অবস্থান ছিল পঞ্চম। এই বিশাল পরিবার বেশ অর্থকষ্টে ভুগছিলেন, অভাব অনটনের পরিবার তাই শৈশবেই কাজের সন্ধানে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। এজন্য অল্প বয়সেই নিজে থেকে কিছু করার স্পৃহা তাকে আজ প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছেন।

দাতো মোহাম্মদ মিজান খুব কম বয়সে ভাগ্যান্বেষণে প্রায় পঁচিশ বছর আগে ১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে প্রথমেই তিনি নির্মাণ শ্রমিক তারপর একটি ইলেক্ট্রনিক কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। উন্নতির লক্ষ্যে তিনি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর চলে আসেন। সেখানে তিনি পেনাং প্রদেশে একটি জুস ফ্যাক্টরিতে প্রায় তিন বছর কাজ করেন। দাতো মোহাম্মদ মিজান বুঝেছিলেন দ্রুত উন্নতি করার অবস্থানে যেতে ব্যবসা হতে পারে সেরা মাধ্যম।

তাই তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে কুয়ালালামপুর থেকে ৫৫০ কি.মি দূরের কেলান্তান প্রদেশে চলে আসেন। কিন্তু বিধিবাম, সেখানে তিনি স্বদেশির মাধ্যমে প্রতারণা ও পুলিশ হয়রানির শিকার হন। পরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে  তিনি কেলান্তানে প্রায় শূন্য হাতে একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইভাবে তিন বছর কেটে যায়। মিজান নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করলেও নিজের দক্ষতা ও পরিশ্রমে তিনি আজ এই সেক্টরের শীর্ষ স্থানটি দখল করেছেন।

ফলে এই তিন বছরে অনেক শ্রমিক তার অধীনে কাজ করা শুরু করে। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেই সময় কেলান্তান প্রদেশের আর্থিক অবস্থাও বেশি ভালো ছিল না, সেখানকার জনসংখ্যা ছিল খুব কম। তারপরেও মিজানের উন্নতি ও অগ্রগতি থেমে থাকেনি। দাতো মিজান মালয়েশিয়ায় বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি পাঁচ সন্তানের জনক। তিনি মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ ব্যবসায়িক তারাভূমি জি-০৭ লাইসেন্স প্রাপ্ত। বর্তমানে যা মালয়েশিয়ায় মিজান গ্রান্ড ইন্টার ট্রেডার্স এসডিএন বিএইচডি নামে পরিচিত।

বর্তমানে তার বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট ক্যামেরুন, থাইল্যান্ডসহ মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে। আরও রয়েছে গরু ও ছাগলের আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত খামার। স্থাপন করেছেন কৃষি খামার। তাছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রজেক্ট চালুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এইভাবে তিনি কেলান্তানের হয়ে ওঠেন একজন সফল বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। ব্যবসায়ী সফলতার জন্য মালয়েশিয়ার কুয়ান্তানের রাজা সম্মানসূচক দাতো উপাধিতে ভূষিত করেন।

দাতো মোহাম্মদ মিজানের মতে, জীবনে বড় হতে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হয়। সততা ও নিষ্ঠা থাকলে জীবনে বড় হওয়া যায়। পৃথিবীতে আজ যারা সফল হয়েছেন তারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হয়েছেন। আমি বাংলাদেশি হিসেবে খুব গর্ব করি এবং বাংলাদেশিদের জন্য কাজ করা অব্যাহত আছে। সেইসঙ্গে মালয়েশিয়ার এই উপাধি বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দাতো মিজান মালয়েশিয়ায় অনেক শ্রমিক তার কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের সুযোগের ফলে অনেক পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

তিনি বাংলাদেশিদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। শ্রমিকদের সুখে দুঃখে পাশে থাকেন তিনি। এভাবে দাতো মিজান বাংলাদেশি শ্রমিকের কাছে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। দাতো মিজানের একটাই স্বপ্ন বাংলাদেশে মানুষের জন্য আরও কিছু করে যাওয়া। দাতো মিজানের এই  সাফল্যের সঙ্গে যেমন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বা আরও হবে ঠিক তেমনই বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণও বেগবান হয়েছে বা আরও হবে। দাতো মিজানের প্রত্যাশা আগামীতে উভয় দেশের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সামনে আরও এগিয়ে যেতে চান।

 

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৯১২৫২২০১৭, ৮৮০-২-৭৯১২৯২১
Email: simecnews@gmail.com