বোরোর রেকর্ড আবাদ!!!
প্রকাশের সময় : 2022-04-20 11:02:53 | প্রকাশক : Administration

কাওসার রহমান: সারাদেশেই মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। সবুজের এই সমারোহ জানিয়ে দিচ্ছে সামনেই দেশের প্রধান ফসল বোরো আসছে। এবছর দেশজুড়ে বোরো ধানের আশাতীত আবাদ হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে বোরো আবাদের অতীতের সব রেকর্ড। বাজারে ধানের চড়া দামই কৃষকদের উৎসাহ জুগিয়েছে বোরো আবাদে। সেই সঙ্গে রয়েছে সরকারের নানা প্রণোদনা। সব মিলিয়ে এ বছর বোরো আবাদ শুধু লক্ষ্যমাত্রাই ছাড়াইনি, সৃষ্টি করেছে আবাদের নতুন রেকর্ড। ফলে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ বছর বোরো চাল উৎপাদনেও নতুন রেকর্ড সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে অর্থাৎ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এবছর বোরো চাল উৎপাদন ২ কোটি ১৩ লাখ ৪১ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে।
এ বছর ২০২১-২২ মৌসুমে দেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর এবং উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদের লক্ষ্য ছিল ৩৬ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর। বাকিটা স্থানীয় জাত। চাল আকারে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার টন। এর মধ্যে হাইব্রিড চাল ৬০ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের চাল এক কোটি ৪৮ লাখ ২৬ হাজার টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ৪.৩০ টন।
কৃষকদের আশাতীত সাড়ার কারণে এ বছর দেশে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আবাদ বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড ধানের আবাদ প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার হেক্টরে এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ প্রায় এক শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ ১১ হাজার হেক্টরে।
অন্যদিকে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদও প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। কমে যাওয়া এসব জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ হয়েছে এ বছর। অর্থাৎ সরকারের নানাবিধ সুবিধা ও প্রণোদনার কারণে আস্তে আস্তে দেশে হাইব্রিড ধানের আবাদ বেড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে এ বছর বোরো চাল উৎপাদন ২ কোটি ১৩ লাখ ৪১ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আর এক মাসের মধ্যেই সারাদেশে শুরু হবে ধান কাটা উৎসব। সবার আগে এই উৎসবে মাতবে দেশের হাওড় অঞ্চল। সরকার পক্ষ থেকেও ধান কাটার ব্যাপারে কৃষকদের সর্বাত্মক সহায়তার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। এ বছর ধান কাটার যন্ত্র আরও বাড়ানো হবে। যাতে কৃষক দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে পারে।
গত এক বছর ধরে দেশে ধানের সর্বোচ্চ মূল্য অব্যাহত রয়েছে। ফলে এ বছর বোরো আবাদে কৃষকদের ব্যাপক সাড়া দেখা গেছে। মূলত এই কারণেই দেশে চলতি বছর রেকর্ড বোরো আবাদ হয়েছে। আর কৃষক এ বছর বোরো আবাদ বাড়াতে গিয়ে গম এবং সবজি আবাদ কম করেছে। অর্থাৎ গত এক বছর ধরে ধানের বেশি দাম পাওয়ায় কৃষক গম ও সবজির পরিবর্তে বোরো ধান আবাদ করেছে।
বোরো ধান ফসলের মধ্যে অন্যতম। মোট উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বোরো ধান ফসলের উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন জাতের আবাদ বাড়ানো প্রয়োজন। এ কারণেই হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় হাইব্রিড ধান চাষে ফলন ৩০-৪০ শতাংশ বেশি পাওয়া যায়। এই ধান চাষে তুলনামূলকভাবে বীজ কম লাগে। আবার বিশুদ্ধ বীজের নিশ্চয়তা সর্বাধিক। সরকারী গুদাম ও মিলারদের নিকট হাইব্রিড ধান বিক্রয়ের সুযোগ থাকায় হাইব্রিড ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়ে চলেছে। এছাড়া প্রণোদনা কর্মসূচীতে হাইব্রিড ধানের বীজ সরবরাহ করায় কৃষক পর্যায়ে হাইব্রিড চাষের উৎসাহ বেড়েছে।
গত পাঁচ বছরে দেশে বোরো আবাদ বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। ২০১৬-১৭ মৌসুমে দেশে যেখানে ৪৫ লাখ ১৭ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল, সেখানে ২০২১-২২ মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার ১৯৮ হেক্টর জমিতে। মোট আবাদ বেড়েছে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ। এই পাঁচ বছরে দেশে হাইব্রিড আবাদ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
বর্তমানে মোট বোরো আবাদের ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ এলাকায় হাইব্রিড ধান আবাদ হচ্ছে। এটা দেশে ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আশাজনক। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ চিত্র অনুযায়ী, এই পাঁচ বছরে দেশে চাল আকারে বোরো উৎপাদন বেড়েছে ১৯ লাখ ৭৩ হাজার টন। আর চলতি বছর ২ কোটি ১৩ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের আশা করছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর। - সংকলিত, সূত্র: জনকন্ঠ