ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন
প্রকাশের সময় : 2022-09-28 14:15:35 | প্রকাশক : Administration
সুরমা-কুশিয়ারা সেচ প্রকল্পের রহিমপুর পাম্প হাউস চালুর জন্য কুশিয়ারা নদী থেকে পানি উত্তোলন জরুরী হয়ে পড়েছিল। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে সিলেট অঞ্চলের সাতটি উঁচু উপজেলায় ধান আবাদ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য ২০১২ সালে রহিমপুর পাম্প হাউস নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। বিএসএফের বাধার কারণে ওই কুশিয়ারা নদী থেকে পানি উত্তোলন করতে না পারায় ওই সেচ পাম্প চালু করা যাচ্ছিল না।
এ কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে যে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে তার একটি হচ্ছে সিলেটের কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলন সম্পর্কিত। এর অধীনে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী কুশিয়ারা থেকে প্রতি সেকেন্ডে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলন করতে পারবে বাংলাদেশ। এই সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশের এই অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ইস্যুটি নিষ্পত্তি হলো।
কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা আশার আলো ছড়াচ্ছে সিলেট অঞ্চলে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই সমঝোতায় অন্তত ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে। জমিগুলো ভরে উঠবে ফসলে। চাষাবাদে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। ভারতের বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে সুরমা ও কুশিয়ারায় ভাগ হয়েছে।
কুশিয়ারার উৎসমুখ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শরীফগঞ্জ বাজার। এই বাজারের কাছেই কুশিয়ারা নদী থেকে উৎপত্তি রহিমপুর খালের। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রাকৃতিক খাল থেকে উৎপত্তি হয়েছে আরও অসংখ্য খালের। আশপাশের এলাকার কৃষকদের সেচের প্রধান উৎস এই খালগুলো। তবে বর্ষায়ও তেমন পানি থাকে না এই খালগুলোতে। আর শুষ্ক মৌসুমে একেবারে শুকিয়ে যায়।
এলাকাটি উঁচু হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যখন খাল শুকিয়ে যায়, তখন পুরো গ্রাম শুকিয়ে যায়। গ্রামের পুকুরেও পানি থাকে না। জকিগঞ্জ একসময় সুপারির জন্য বিখ্যাত হলেও শুকনো মৌসুমে সুপারিগাছও মরে যায়। উৎসমুখে কুশিয়ারা নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় কয়েক যুগ ধরে রহিমপুর খাল শুকনো মৌসুমে পানিকূন্য হয়ে পড়ে।
ফলে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য ও আরও বিস্তীর্ণ হাওড়াঞ্চলে বোরো ধানের চাষাবাদ সম্ভব হয় না। যুগের পর যুগ জমিগুলো পড়ে আছে অনাবাদি অবস্থায়। এসব জমিকে চাষের আওতায় আনতে আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে ২০১০ সালে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রহিমপুর খালের উৎসমুখে একটি পাম্প হাউস নির্মাণ করা হয়। রহিমপুরসহ আশপাশের কিছু খালের উন্নয়ন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এর আগে প্রকল্পের সুবিধার্থে ২০০৯ সালে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে খালের উৎসমুখে বাঁধ দেয়া হয়। ২০১৬ সালে খাল উন্নয়ন ও পাম্প হাউসের নির্মাণকাজ শেষ করে পাউবো। প্রকল্পের কাজ শেষে রহিমপুর খালে পানিপ্রবাহ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তখন উৎসমুখে নির্মিত তৈরি বাঁধ অপসারণ করতে গেলে বাধা দেয় ভারত। কুশিয়ারা নদীর ঠিক মাঝ দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখা থাকায় বাংলাদেশের এই পাড়টি নোম্যানস ল্যান্ডের অংশ।
ফলে ওই নদী থেকে পানি উত্তোলন করতে গেলে ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বাধা দেয়। বিষয়টি সুরাহা করতে ২০১৬ সাল থেকে দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির বৈঠক হয়। গত ২১ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তারপর সমঝোতার খসড়া তৈরি করা হয়।
বর্তমানে এই বর্ষা মৌসুমে রহিমপুর খালে হাঁটু পানি। হেঁটেই এই খাল পার হচ্ছেন স্থানীয়রা। এখন পানিবণ্টন সমঝোতায় আশার আলো দেখছেন এলাকাবাসী। আবারও জমিগুলো ফসলে ভরে উঠবে বলে মনে করেন তারা। জকিগঞ্জ কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার চাষাবাদে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। পানি সমস্যা কাটলে এখানে চাষাবাদ বাড়বে।
বাংলাদেশের পক্ষে দিল্লীতে এই সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। এর আওতায় বাংলাদেশ সিলেটে কুশিয়ারা নদীর রহিমপুর খাল পয়েন্টে প্রতি সেকেন্ডে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলন করবে। ফলে সচল হবে সুরমা- কুশিয়ারা সেচ প্রকল্প।
এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে ওই সাতটি উপজেলার ১০,০০০ হেক্টরেরও বেশি জমি সেচের আওতায় আসবে এবং সারা বছর কৃষি কাজ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৫৪টি যৌথ নদী রয়েছে। এই নদীগুলোর পানিবণ্টন দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যু। এরমধ্যে কেবল ১৯৯৬ সালে গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হয়েছে।
প্রত্যাশিতভাবেই সাতটি ‘এমওইউ’বা সমঝোতাপত্র সেখানে স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো কুশিয়ারা নদীর রহিমপুর পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশকে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে দিতে ভারতের রাজি হওয়া। দিল্লীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে এভাবে বর্ণনা করে বলেছে, ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তির পর ভারত এই প্রথম বাংলাদেশের সঙ্গে কোন অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগিতে রাজি হলো। - সূত্র: অনলাইন