টুরিস্টদের স্বর্গরাজ্য ভিয়েতনাম

প্রকাশের সময় : 2023-05-17 16:33:54 | প্রকাশক : Administration
টুরিস্টদের স্বর্গরাজ্য ভিয়েতনাম

জেসিউর রহমান শামীম: সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় দেশ ভিয়েতনাম। চীনের প্রতিবেশী, জনবহুল দেশ। ভিয়েতনাম দেশটির আকৃতি অনেকটা ইংরেজি এস (s) অক্ষরের মত। প্রতি বছরই ভিয়েতনামে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়, আর তার ফলেই দেশের বিভিন্ন প্রদেশের কোনও না কোনও অঞ্চল প্লাবিত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভিয়েতনামীদের কাছে বৃষ্টি খুবই শুভ। তাঁরা মনে করেন বৃষ্টি মানেই দেশে ড্রাগন ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ভিয়েতনামের উত্তরে চীন, পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। খ্রীস্টপূর্ব ২২১ সালে চীনের ছিন রাজবংশ এই এলাকা দখল করে। ১২২৫ সাল থেকে শুরু হয় ট্রান রাজবংশের শাসন। এই পুরো সময়টাতে তাদেরকে চীনের রাজাদের সাথে লড়তে হয়েছে। ১৪০৭ সালে চীনা মিং রাজবংশ ভিয়েতনাম দখল করে। শত শত বছর ধরে চলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ভিয়েতনামি জাতির জন্ম।

দেশটিতে প্রায় ৫০টির মত জাতি বসবাস করে। ভিয়েতনামের সবচেয়ে প্রাচীন তিনটি ধর্ম হল মহায়ন বৌদ্ধধর্ম, কনফুসিয়াসবাদ এবং দাওবাদ। ভিয়েতনামিজরা ইতিহাস ও সংস্কৃতি আগলে রাখতে ভালোবাসে। তা বুঝা যায় হ্যানয় শহর জুড়ে ঐতিহ্যের ছাপ, জাদুঘর ও টেম্পল দেখে। ভিয়েতনামী ভাষা ছাড়াও, কিছু নাগরিক চীনা, খেমার, ফরাসি বা ছোট পাহাড়ী বর্ণের জাতিগত গোষ্ঠীর ভাষায় কথা বলে। ইংরেজী দ্বিতীয় ভাষা হিসাবেও জনপ্রিয়। ভাত ভিয়েতনামীয়দের প্রধান খাদ্য।

সারা দুনিয়া যাকে হো চি মিন নামে চেনে, ভিয়েতনামে তিনি ‘আঙ্কেল হো’। কারণ, সব ভিয়েতনামিরা তাকে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য মনে করে, যিনি বটগাছের মতো তাদের ছায়া দেবেন।

হ্যানয় ভিয়েতনামের রাজধানী। যার অর্থ নদীর মধ্যে শহর। হ্যানয় হল নানা রকম ঐতিহ্যে সমৃদ্ধশালী একটি শহর। ভিয়েতনামের জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে হ্যানয় শহরই সবচেয়ে সেরা জায়গা। ক্ষয়প্রাপ্ত, জীর্ণ ওল্ড টাউন কোয়ার্টারগুলো যেমন সাধারণ পর্যটকদের মুগ্ধ করবে, তেমনি ইতিহাসপ্রেমিদের মুগ্ধ করার জন্য হ্যানয়ে রয়েছে অসংখ্য মিউজিয়াম। 'হো চি মিন' সিটি হল বৃহত্তম শহর। এই ব্যস্ত নগরীটাই ভিয়েতনামের বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানকার রাস্তাগুলো সবসময়ই মোটরবাইক ও গাড়িতে পরিপূর্ণ থাকে। রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফেগুলো সবসময়ই থাকে স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকে ভর্তি। ভিয়েতনামের সবচেয়ে সেরা শপিং সেন্টারগুলোও রয়েছে এখানে।

জঙ্গলঘেরা পর্বতাবৃত ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর মি সান। চাম যুগের এই মন্দির শহরটির গোঁড়াপত্তন হয়েছিলো চতুর্থ শতকের দিকে। প্রাচীন হিন্দুধর্মীয় এই শহরটি সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত নগরীই ছিল। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে মানুষজন সরে যেতে শুরু করে শহর থেকে। ত্রয়োদশ শতক থেকে এটি পুরোপুরিই পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হয়ে যায়। শহরটিতে এখনো প্রায় বিশটির মতো মন্দিরের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলো স্থাপনাই তৈরি করা হয়েছিলো ইট বা বালির ব−ক দিয়ে।

ভিয়েতনামের সবচেয়ে বিশুদ্ধ শহর হোয়-অ্যান। পুরোটা শহর জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখনো দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্থাপত্যশিল্প। ওল্ড টাউন কোয়ার্টারের দৃশ্যগুলোই সবচেয়ে বেশি মোহনীয়। পঞ্চদশ শতকের দিকে এই জায়গাটাই ব্যবহৃত হতো জাপানিজ ও চাইনিজ ব্যবসায়ীদের সাক্ষাতস্থল হিসেবে। এটাই ছিল সেই সময়কালের সবচেয়ে বৃহৎ মিটিং সেন্টার।

হোয়-অ্যানের সবচেয়ে বড় চিহ্ন হলো ট্র্যান ফু স্ট্রিটের পশ্চিম প্রান্তের জাপানিজ ব্রিজটি। এছাড়া এর কাছেই দাঁড়িয়ে আছে ফুজিয়ান চাইনিজ কংগ্রেগেশনের অ্যাসেম্বলি হলটি। এটি হলো ওল্ড টাউনের সবচেয়ে সুসজ্জিত মন্দির। এটি ছাড়াও শহর জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোটোখাটো প্যাগোডা এবং মিউজিয়াম। তবে হোয়-অ্যানের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি দেখতে পাওয়া যায় ওল্ড টাউনের রাস্তাগুলোতে। শহরের দালানকোঠার সুসজ্জিত প্রবেশমুখগুলো দেখার মতো।

ভিয়েতনামের সবচেয়ে ঐতিহাসিক শহরগুলোর একটি হুই। শহরের পুরোটা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এনগুয়েন সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। নৈসর্গিক পারফিউম নদী তীরে গড়ে ওঠা দেয়ালাবদ্ধ ইম্পেরিয়াল এনক্লোজারের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মতো। শহর ভ্রমণে গেলে সুসজ্জিত এনগো মন গেট আর থাই হোয়া প্যালেস। ডিয়েন থো রেসিডেন্স ছিল একসময় রাণীমাতার আবাসস্থল। আর হল অফ মান্দারিনটা বিখ্যাত এর সিলিংয়ে থাকা চিত্রশিল্পের জন্য। শুধু ইম্পেরিয়াল এনক্লোজারই নয়, এর বেষ্টনীর বাইরেও রয়েছে দেখার মতো অনেক মোহনীয় দৃশ্য।

ভিয়েতনাম মিউজিয়াম অফ এথনোলোজিতে ভিয়েতনামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গুষ্টিদের উপজাতীয় শিল্প, শিল্পকর্ম ও তাদের গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্যবাহী নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করে এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতির বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের রক্ষক বলা যায় এই জাদুঘরকে।

হ্যানয় শহরের পশ্চিমে অবস্থিত লটে অবজারভেশন ডেক ভবনের ৬৫ তালা থেকে হেনয় শহরের সৌন্দর্য সবচেয়ে সুন্দর ভাবে দেখা যায়। এই সুউচ্চ টাওয়ারে হোটেল, খাবার রেস্টুরেন্ট, রুফটপ বারের সাথে সাথে নিচের তালায় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরও আছে।

এছাড়াও এনগোচ সান প্যাগোডা মোজাইক ওয়াল, ট্রানকুওচ প্যাগোডা ওল্ডকোয়াটার্স, বাচ মা টেম্পল হেরিটেজ হাউজ, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ভিয়েতনামিজ হিস্ট্রি এর মতো জায়গা ভ্রমনের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয়।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৯১২৫২২০১৭, ৮৮০-২-৭৯১২৯২১
Email: simecnews@gmail.com