সময়ের আগেই চালু হচ্ছে তিনটি সেতু
প্রকাশের সময় : 2019-01-19 11:32:06 | প্রকাশক : Admin
মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বলঃ নির্ধারিত সময়ের আগেই চালু হচ্ছে দ্বিতীয় মেঘনা, দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতি ও দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু। ২০১৯ সালের অক্টোবরে সেতু তিনটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ১০ মাস আগে ৪ জানুয়ারি খুলে দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু। এরপর আগামী এপ্রিলে খুলে দেয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ‘মেঘনা সেতু’। আর আগামী জুনে খুলে দেয়া হচ্ছে মহাসড়কটির ‘মেঘনা-গোমতী সেতু’।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারীদের জন্য এটি বিস্ময়কর সুখবর। মহাসড়কটিতে চলাচলকারীদের কাছে এই তিন সেতুকে ঘিরে বিড়ম্বনা ছিল চরমে। আর এখন এই সেতু চালু হলে সড়ক যোগাযোগে সৃষ্টি
হবে আরেক বিস্ময়। আধুনিক এসপিএসপি এবং আরসি পাইল ফাউন্ডেশনে তৈরি হয়েছে সেতু তিনটি। তিনটি সেতুতে প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকছে। দি¦তীয় কাঁচপুর সেতুর কাজ প্রায় সম্পন্ন।
এখন চলছে ফিনিশিং ও ধোয়া মোছার কাজ। এছাড়া ‘মেঘনা’ ও ‘মেঘনা-গোমতী’ সেতুর ওপরের অংশে ঢালাইয়ের কাজ চলছে। সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও কাঁচপুর সেতুর সঙ্গে থাকছে ৩৫ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করে সিলেট রুটের যানবাহন সরাসরি চলাচল করবে এখন। এতে মহাসড়কটি যানজটমুক্ত ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামের পাশপাশি ঢাকা-সিলেট রুটের যাত্রীরাও উপকৃত হবে ব্যাপকভাবে। দি¦তীয় কাঁচপুর সেতুর ৩৯৭.৩০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৮ মিটার প্রশস্তের। চার লেনের সেতুটিতে ব্যবহার করা হয়েছে চারটি স্প্যান।
দ্বিতীয় মেঘনা সেতু প্রায় এক কিলোমিটার অর্থাৎ ৯৩০ মিটার দীর্ঘ। ১৭.৫৫ মিটার প্রশস্তের এই সেতুটিও চার লেনের। মেঘনা সেতুতে ব্যবহার করতে হয়েছে ১২টি স্প্যান। আর এই মাহাসড়কের সবচেয়ে বড় সেতু হচ্ছে মেঘনা-গোমতী। এই সেতু ১৪১০ মিটার অর্থাৎ প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ। ১৭.৫৫ মিটার প্রশস্তের এই সেতুটিও চার লেনের। গজারিয়া ও দাউদকান্দির সীমান্তের এই মেঘনা-গোমতী সেতুতে ১৭টি স্প্যান ব্যবহার করা হয়েছে।
জাপানের চার কোম্পানি ও এসজেআই যৌথভাবে জাইকার অর্থায়নে এই সেতু তিনটি নির্মাণ করছে। এই সেতু তিনটি চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সড়কপথের যোগাযোগের বৈপ্ল−বিক পরিবর্তনে অনেক রকমের সুবিধা আসবে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের ব্যবসা বাণিজ্যের সুখকর পরিবর্তন আসবে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।
ব্যস্ততম মহাসড়কটির পুরনো অর্থাৎ দুই লেনের পুরনো সেতুর কারণে যে দীর্ঘদিনের স্থায়ী যানজট লেগে ছিল তারও স্থায়ী অবসান ঘটতে যাচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা এসব তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, শুধু পদ্মা সেতু নয়, এই তিন সেতু নির্মাণও বর্তমান সরকারের যোগাযোগ সেক্টরে সফলতার আরেক জলন্ত দৃষ্টান্ত।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে পুরনো সেতুগুলোও সংস্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সেতু তিনটির নতুন করে পাইলগুলো সংস্কার করা হয়েছে। এখন নতুন সেতু খুলে দেয়ার পর ওপরের অংশ ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে নতুন প্রযুক্তি কার্বন ফাইবার ব্যবহার করে সেতুটির আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করা হবে।
৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু তিনটি নির্মাণ এবং পুরাতন সেতু তিনটি সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে এই প্রকল্পের চুক্তির পর কাজ শুরু হয়। তবে হলি আর্টিজেন ট্র্যাজেডির কারণে এই তিন সেতু প্রকল্পের কাজ প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল। নতুবা আরও আগেই সেতুগুলো চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হত।
প্রতিটি সেতুই চালুর পর পুরনো সেতু সংস্কারে তিন থেকে চার মাস করে সময় লাগবে বলে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। বর্তমানে এই তিন সেতু প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই সেতু তিনটি চালু হলে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ এবং কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় মহাসড়কটির যানজট যে স্থায়ী বাসা বেধেছিল, তার অবসান ঘটবে।