যুক্তরাষ্ট্রের যে শহর বাংলাদেশীদের দখলে!

প্রকাশের সময় : 2019-01-31 13:29:05 | প্রকাশক : Admin
যুক্তরাষ্ট্রের যে শহর বাংলাদেশীদের দখলে!

সিমেক ডেস্কঃ আমাদের দেশটা ছোট্ট, জনসংখ্যা আয়তনের তুলনায় অনেক বেশি হলেও, বাইরের কোন দেশে গিয়ে রাজত্ব করার মতো অবস্থা প্রবাসী বাংলাদেশীদের নেই। তবে শুনে অবাক হবেন, আমেরিকায় এমন একটা শহর আছে, সেখানে বাঙালীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, বাংলাদেশীরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন সেই শহরের ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুই! নিউইয়র্ক থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই শহরটার বাম বাফেলো, আমেরিকার বুকে ছোট্ট এক টুকরো বাংলাদেশ।

আমেরিকা-কানাডা সীমান্তে অবস্থিত বাফেলো নামের শহরটা। ছবির মতো সাজানো গোছানো কিছু ছিল না কখনও। এই শহরে বছর বিশেক আগেও বাঙালীদের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। কিন্ত এখন এই শহরে গেলে শ্বেতাঙ্গ খুঁজে পাওয়াটাই হবে কষ্টের, বরং বাংলাদেশী-ভারতীয় আর পাকিস্তানীতেই ভরপুর হয়ে আছে শহরটা। নব্বইয়ের দশক থেকেই এই শহরে বাংলাদেশীদের আগমন শুরু হয়। সেই আগমনের পেছনেও আছে কষ্ট আর হতাশার কিছু গল্প।

বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ আমেরিকা, এখানে এলেই কোটিপতি হওয়া যাবে, এমন স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন শিক্ষা বা কাজের সন্ধানে ছুটে আসে এই স্বপ্নের দেশে। কিন্ত স্বপ্ন আর বাস্তবতা সবসময়ই আলাদা হয়। দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমানো মানুষগুলোও সেটা খুব দ্রুতই বুঝতে পেরেছিলেন। আমেরিকায় যেসব বাংলাদেশীরা কাজের জন্যে আসেন, তাদের বেশিরভাগেরই গন্তব্য হয় নিউইয়র্কে। কিন্ত এই শহরটার জীবনযাত্রার খরচ এতই বেশি যে, স্বল্প আয়ের মানুষজন তো বটেই, এমনকি মধ্যম আয়ের লোকজনও এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হিমশিম খান।

এজন্যেই নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশী প্রবাসীদের অনেকেই নিউইয়র্ক ছাড়তে শুরু করেন। কেউ কেউ চলে যান মিশিগানে, আবার কেউ কেউ পাড়ি জমান নিউইয়র্ক থেকে কয়েক ঘন্টা দূরত্বের শহর বাফেলোতে। বাফেলো শহরটা তখন ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। ছিঁচকে চোর, ডাকাত, ড্রাগ ডিলার থেকে শুরু করে খুনী, সব ধরণের অপরাধীরাই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতো এই শহরে। শহরের বাসিন্দা ছিল খুবই কম, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই দোকানপাট বন্ধ করে সবাই ঘরে ঢুকে যেতো, এমনই ছিল অবস্থা। শহরের অধিবাসীদের অনেকেই চলে গিয়েছিলেন শহর ছেড়ে, তাদের বাড়ীঘরগুলো পড়ে ছিল পরিত্যক্ত অবস্থায়।

ধীরে ধীরে নিউইয়র্ক এবং অন্যান্য শহর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা আসতে শুরু করে এই শহরে। এখানে জমির দাম ছিল কম, বাড়ি পাওয়া যেতো নিউইয়র্কের তুলনায় প্রায় জলের দরে। নিউইয়র্কে একটা ফ্ল্যাটের কয়েক মাসের ভাড়া দিয়ে এখানে আস্ত একটা বাড়ি কিনে ফেলা যেতো। জীবনযাত্রার খরচও ছিল আমেরিকার অন্য অনেক শহরের তুলনায় অনেক বেশি সস্তা।

গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশী কমিউনিটি এখানে খুব শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। বাফেলো শহরে এখন বাঙালীদের নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, অনেক বাংলাদেশীরই একাধিক বাড়ি আছে এখানে। হালাল মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, ড্রাইভিং স্কুল থেকে শুরু করে বাঙালীদের রিয়েল এস্টেট বিজনেস, ফার্মেসি, সেলুন সবকিছুই আছে এখন। বাংলাদেশী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্যে আছে বাঙালী স্কুলও। ধর্মীয় শিক্ষার জন্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটা মাদ্রাসাও। এখানকার বাঙালীরাই প্রতিষ্ঠা করেছে এসব মসজিদ- মাদ্রাসাগুলো। আছে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারও। এই শহরের প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যে বাংলা সংবাদপত্রও প্রকাশিত হয়।

বাফেলো শহরে একসময় বেশ কয়েকটা গীর্জা ছিল, ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টানেরা সেখানে প্রার্থনা করতেন। কিন্ত স্থানীয় মানুষজনের অনেকেই শহর ছেড়ে চলে যাওয়ায় একে একে বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোর বেশ কয়েকটা। সেই গীর্জাগুলোর জায়গায় এখন মসজিদ গড়ে উঠেছে, গীর্জা কর্তৃপক্ষ বা মিউনিসিপ্যালিটি কমিটিই সেগুলো মুসলমানদের কাছে ভাড়া দিয়েছে মসজিদ করার জন্যে। বাংলাদেশী প্রবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধপ্রবণ এই শহরের অপরাধমূলক কার্যক্রমের পরিমাণও কমে গেছে ধীরে ধীরে। যেসব অপরাধী একসময় এখানে দাপিয়ে বেড়াতো, তাদের অনেকেই শহর ছেড়ে চলে গেছে, কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছে পুলিশের হাতে।

বাফেলো শহরে এখন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার পরিবার প্রবাসী বাংলাদেশী বসবাস করেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের পেশাই ট্যাক্সি চালানো। এমনকি নিউইয়র্কে কাজ করে পরিবারকে বাফেলোতে রেখেছেন, এরকম মানুষও আছেন অনেকে। সড়কপথে নিউইয়র্ক থেকে আড়াই-তিন ঘন্টাতেই বাফেলো পৌঁছানো যায়।

বাফেলো শহরের অনেক বাড়ির মালিকই এখন বাংলাদেশীরা। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাতেও বাঙালীদের আধিপত্য। জমি কেনা-বেচা, বাড়ি বেচা-কেনা কিংবা বাড়ি ভাড়া দেয়ার মতো বিষয়গুলোতে নেতৃস্থানীয় মানুষজনের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশী। বাংলাদেশ থেকে এখন মানুষজন নিউইয়র্ক নয়, বরং বাফেলোর উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ছেন।

বাংলাদেশীদের হাত ধরেই বাফেলো শহরটা আমূল বদলে গেছে। দুই দশক আগে বাফেলো ছিল সন্ত্রাসের নগরী, ভীত এক জনপদ। সেই জায়গাটা এখন কোলাহলে পরিপূর্ণ। রাস্তায় গাড়ি আর মানুষের ভীড়, মসজিদের সামনে মুসল্লিদের আনাগোনা, বেশিরভাগ দোকান আর খাবারের রেস্টুরেন্টেই কাজ করছেন বাংলাদেশীরা। ট্যাক্সি ভাড়া করতে গেলেও দেখবেন বাংলাদেশী কোন চালকই অপেক্ষা করছেন আপনার জন্যে। এই বাংলাদেশী প্রবাসীরাই শহরটাকে বদলে দিয়েছেন, বসবাসের উপযোগী করে তুলেছেন। বিশাল আমেরিকার বুকে ছোট্ট একটুকরো বাংলাদেশ হয়ে জ্বলজ্বল করছে বাফেলো নামের এই শহরটা!

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৯১২৫২২০১৭, ৮৮০-২-৭৯১২৯২১
Email: simecnews@gmail.com