বিচারক-আইনজীবী দম্পতি
প্রকাশের সময় : 2019-04-25 17:02:07 | প্রকাশক : Admin

মেহেদী হাসান ডালিম: অ্যাডভোকেট নিগার সুলতানা। সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনের পরিচিত মুখ। উচ্চ আদালতে আইন পেশায় ভাল করার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সুনাম কুড়িয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, ডানপিটে ও চঞ্চল স্বভাবের নিগার সুলতানা ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় পরপর দুইবার প্রথম রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। নারীদেরকে জাগিয়ে তোলার লক্ষে নাটকে প্রতিবাদী নারী চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন।
ভালোবেসে বিয়ে করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী সৈয়দ তফাজ্জল হাসান হিরুকে, যিনি একজন বিচারক। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে জুডিশিয়ারিতে কর্মরত। বিচারক স্বামীকে পাশে রেখে আইন পেশায় অনেক দূর যেতে চান নিগার সুলতানা। রাজনীতিতেও নামতে চান চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা এই নারী আইনজীবী।
হাসি-খুশি আনন্দে কাটানো ছোটবেলা, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন দিনগুলো, দুজনের পরিচয় ও বিয়ে, আইন পেশা নিয়ে স্বপ্ন ও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন অ্যাডভোকেট নিগার সুলতানা। আইন পেশায় ভাল করতে নবাগতদের পরামর্শ দিয়েছেন তার বিচারক স্বামী সৈয়দ তফাজ্জল হোসেন হিরু।
নিগার সুলতানার বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। জন্ম চট্টগ্রামে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে পতেঙ্গার সরকারি কোয়ার্টারে। শৈশব ছিলো অত্যন্ত সুন্দর। মাঠে ব্যাডমিন্টন, গোল্লাছুট, কানামাছি, ভলিবল খেলে, আবার দোলনায় দুলে সময় কেটেছে। পরীক্ষা শেষ হলে সেই রাত এবং পিকনিকের সেই আনন্দ আজও শিহরিত করে। ছোট বেলা থেকেই একটু চঞ্চল ও ডানপিঠে থাকার কারণে কলোনীর সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেম। আমার স্কুল কলেজের শিক্ষকরা খুব ভালোবাসতেন।
দুই বোন ও দুই ভাই। বড় বোন নাহিদ সুলতানা এডমিন ক্যাডারে আছেন। তিনি পিএসসিতে সিনিয়র সহকারী সচিব। এখন তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত। তার স্বামী ফখরুল ইসলাম ক্রেডিট ম্যানেজার হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে কর্মরত। ভাই হাবিব শাকিল নাট্য পরিচালক এবং তার স্ত্রী আনুশা তাজরী বুয়েট থেকে বের হয়ে বর্তমানে সরকারি প্রজেক্টে কর্মরত। সবার ছোট ভাই শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। মা নারগিস সুলতানা, স্বাধীনচেতা মানুষ। চার ভাই-বোনকে গড়ে তোলার মূল কারিগর তার মা।
ইস্টার্ন রিফাইনারি মডেল হাইস্কুল থেকে ২০০১ সালে এসএসসি এবং ২০০৩ সালে আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে এলএলবি অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে ২০০৯ সালে বের হন। ২০০৯ সালে জজ কোর্টে এনরোলমেন্ট হয় এবং ২০১৩ সালে হাইকোর্টে এনরোলমেন্ট হওয়ার পর থেকে প্র্যাকটিসে আছেন।
বিচারক স্বামীর নাম সৈয়দ তফাজ্জল হাসান হিরু। জন্ম কক্সবাজারের চকোরিয়ায়। তিনি চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে এলএলবিতে ভর্তি হন। হিরু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০০৭ সালে অর্নাস পাস করার সাথে সাথেই জুডিসিয়ারিতে নিয়োগ পান।
আইন বিষয় বেছে নেওয়ার কারণটা নিজের জবানীতে বলেন; আমার বাবা কমরেড সুলতান আহমেদ বাম রাজনীতি করতেন। চট্টগ্রামের সাম্যবাদী দলের আহ্বায়ক ছিলেন। বাবা একজন স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। সে কারণেই ভিন্ন এক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছি। গান, বাজনা, আর্টসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতি পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের বেড়ে ওঠা এবং ভিন্ন কিছু করার মানসিকতা সবসময়ই ছিলো। কখনো গতানুগতিক চিন্তা আমাকে আকৃষ্ট করেনি। ছোটবেলা থেকেই আইন পেশা স্বাধীন ও চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে। এ কারণেই বেছে নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুল আজম স্যারসহ অন্য শিক্ষকরা আমাদেরকে আলোর পথ দেখিয়েছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন। দক্ষ আইনজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকরা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের মনে স্বপ্নের বীজ বপন করেছেন।
প্রশ্ন ছিল আপনাদের একজন বিচারক অন্যজন আইনজীবী। কেমন লাগে, কিভাবে সংসারে ব্যালেন্স করেন? তিনি বলেন, অবশ্যই ভাল লাগে। আমরা দুইজন যখন একসঙ্গে হই তখন ভুলে যাই কে বিচারক বা কে আইনজীবী। তবে আমরা যার যার কাজ সম্পর্কে বা গুরুত্বপূর্ণ মামলা-মোকাদ্দমা সম্পর্কে আলোচনা করি। আমরা দুজনই দুজনের পেশা সম্পর্কে খুব সচেতন। আমি সব সময় সতর্ক থাকি আমার কাজের জন্য যেন জজ সাহেবকে বিব্রত হতে না হয়।
পেশা জীবনে আমরা অনেক কিছু মেনে চললেও ব্যক্তি জীবনে আমরা হাসি-খুশি ও আনন্দ প্রিয়। আমরা স্বামী স্ত্রী হলেও আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। এজন্য সংসার জীবনে ১০টি বসন্ত চলে গেলেও মনে হয় যে, সংসারে এতটা দিন কিভাবে কেটে গেলো! আমি মনে করি দুজন মিলে বহুপথ পাড়ি দেওয়া কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কারণ, একজনের বিপদে আরেকজনের হাতটা তো বাড়ানোই থাকে। -রাইজিংবিডি